বিদ্যালয়ের কক্ষ ও মাঠ দখল করে চেয়ারম্যানের ঠিকাদারি ব্যবসা

  17-06-2019 05:24PM

পিএনএস ডেস্ক : ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা সদরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি এতিমখানার শ্রেণিকক্ষ ও মাঠ দখল করে ঠিকাদারি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মৃধা মজিবর। উপজেলা সদরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় অবস্থিত মফেজ উদ্দিন মৃধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এর পাশেই সলেমান হাসেমিয়া হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার কক্ষ দখল করে বানানো হয়েছে শ্রমিকদের থাকার স্থান। বিদ্যালয়ের মাঠে স্তুপ করে রাখা হয়েছে পাথর, বালুসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী।

এ ছাড়া বিদ্যালয়ের পাশেই পিচ (বিটুমিন) গলানোর চুলা স্থাপন করা হয়েছে। ফলে বিদ্যালয় ও এতিমখানা শিশুদের স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় কোমলমতি শিশুরা পড়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।

স্থানীয়রা জানায়, গত দেড়মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কক্ষ ও মাঠ দখল করে ঠিকাদারি ব্যবসা করছেন চেয়ারম্যান। ঈদের পরে বিদ্যালয়ে একদিনের জন্যও স্বাভাবিক পাঠদান হয়নি। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা অভিযোগ করলেও তা আমলে নেননি চেয়ারম্যান। ফলে একটি শ্রেণিকক্ষে গাদাগাদি করে দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন শিক্ষকরা। এতে শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা।

একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন, বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মজিবর মৃধার স্ত্রী। চেয়ারম্যান তার ক্ষমতার অপব্যাবহার করে বিদ্যালয় মাঠ ও শ্রেণিকক্ষ দখল করে ঠিকাদারি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা কিছু বললে তাতে কর্ণপাত করছেননা তিনি। এ ছাড়া বিটুমিন পোড়াতে রাবারের স্যান্ডেল, পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহার করায় উৎকট গন্ধ তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা।

একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, আগে বিদ্যালয়ে বিরতির সময় আমরা মাঠে খেলাধুলা করতাম। এখন মাঠে পিচ গলানোর চুলা, পাথর ও বালু রাখার কারণে খেলাধুলা করতে পারছি না। এ ছাড়া নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত ট্রাকের শব্দে শিক্ষকদের কথা ঠিকমতো শুনতে পাই না। এমনকি বিদ্যালয়ে এসে এখন আমরা স্বাচ্ছন্দে চলাফেরাও করতে পারছি না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেহেরুন নেছা জানান, রমজান ও গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে দেড়মাস বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। বিদ্যালয় খোলার পর থেকে স্বাভাবিক পাঠদান করানো সম্ভব হচ্ছে না। অথচ ঠিকাদারি কাজের জন্য বিদ্যালয়ের মাঠ ব্যবহারের কোনো অনুমতি নেননি ঠিকাদার। গত শনি ও রবিবার অংশিক পাঠদান করিয়ে শিশুদের স্বাস্থের কথা বিবেচনা করে বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েও কোনো ফল পাইনি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খান মো. আলমগীর বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত বিদ্যালয় প্রঙ্গণ পরিস্কার করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) পরিদর্শক মো সুমন জানান, উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্স এলাকার ৮৬০ মিটার সড়ক মেরামতের কাজটি করছেন ঠিকাদার আনোয়ার হোসেন মজিবর। কাজটি শেষ হতে আরো ৭-৮ দিন সময় লাগতে পারে।

এ বিষয়ে ঠিকাদার ও চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মজিবর মৃধা বলেন, আশপাশে কোনো খালি জায়গা না থাকায় বিদ্যালয়ের মাঠটি ব্যবহার করতে হয়েছে। চেয়েছিলাম বন্ধের মধ্যেই কাজটি শেষ করবো, কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে বিলম্ব হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহাগ হাওলাদার বলেন, বিষয়টি জানার পর চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছি। যতদ্রুত সম্ভব বিদ্যালয়ের কক্ষ খালি করা ও খেলার মাঠ থেকে নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেওয়া হবে।

পিএনএস-জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন