সিলেটে উজানের ঢলে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত, ৬০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ

  12-07-2019 04:47PM

পিএনএস, সিলেট : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে সিলেটে বন্যার পানি বাড়ছেই। জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বেশিরভাগ নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি না থামায় শুক্রবারও নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন উপজেলার নিচু এলাকাগুলো।

এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ১০০টির বেশি গ্রামের মানুষ। এছাড়া ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান আপাতত বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মো. আসলাম উদ্দিন বলেছেন, আমরা যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে থাকতে বলেছি।

এদিকে, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলা সদরের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।

এদিকে, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ও ধলাই এবং গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি ও জাফলং পাথর কোয়ারির সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে এসব পাথর কোয়ারির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় দুই লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।

কোম্পানীগঞ্জের ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন জানান, টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কোম্পানীগঞ্জের ধলাই নদের পানি বাড়ছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়ি ও অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডুবে গেছে।

অপরদিকে, টানা বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার অন্যতম পর্যটন স্পট সাদা পাথর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ও প্রবল স্রোতের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে গত বুধবার থেকে কয়েক হাজার পর্যটক ওই পর্যটন স্পট না দেখেই ফিরে যাচ্ছেন। এছাড়াও উপজেলায় সকল ধরনের পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

এছাড়া ধলাই, পিয়াইন ও জাহাজ খালি অববাহিকায় পানি বৃদ্ধির কারণে উপজেলার সবকটি হাওর তলিয়ে গেছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৮০ ভাগ গ্রামের মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছে। এসব গ্রামে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় উপজেলার ৬০টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। সেখানে অনেক পানিবন্দি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজেন ব্যানার্জী জানান, ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত কিছু এলাকা পরিদর্শন করেছি। উপজেলার সকল আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় উপজেলার সকল দপ্তর সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে এবং একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হচ্ছে। আর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বন্যা কবলিত লোকজনের মধ্যে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

গোয়াইনঘাটের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় সেখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিশ্বজিত কুমার পালের সঙ্গে।

তিনি জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি বৃদ্ধির খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৮ মেট্রিক টন জিআরের চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরো ১৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। ত্রাণসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা প্রদানে আমাদের সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, পানি বৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। ভারত থেকে যদি পানি ছাড়া না হয় ; তাহলে পানি কমে যাবে।

গোয়াইনঘাটের ২০-২৫ টি বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে বলেও জানান ইউএনও।

গোয়াইনঘাট উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম জানান, এখানে উপজেলা সদরের সঙ্গে বিভিন্ন নিচু এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার দুটি পাথর কোয়ারি বন্ধ রয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কথা হলে স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা হার্ড লাইনে কাজ করছি। বন্যাদুর্গত মানুষদের পাশে সরকার আছে। ইতিমধ্যে জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলায় জিআর চাল বরাদ্দ দিয়েছি। প্রয়োজনে এর পরিমাণ বৃদ্ধি করা হবে।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন