গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি, ৪ লক্ষাধিক মানুষ বন্যাপিড়ীত

  18-07-2019 05:37PM

পিএনএস, গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। এতে গাইবান্ধা পৌর এলাকাসহ চারটি উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প¬াবিত হয়েছে। পানিবন্দী মানুষ এবং বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিত বন্যার্ত মানুষেরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। গাইবান্ধা পৌর এলাকায় ২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে সাড়ে ৪ হাজার বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এদিকে গত দু’দিনদিনে সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের গোদারহাট এলাকার সোহাগ (৫) বন্যার পানিতে ডুবে ও সাঘাটার কুন্ডুপাড়ায় উজ্জল কুমার (১৫) সর্প দর্শনে মারা যায়।

এদিকে ত্রিমোহিনী থেকে বোনারপাড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় রেললাইনের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত অব্যাহত থাকায় লালমনিরহাট-সান্তাহার রুটে গাইবান্ধার ত্রিমোহিনী রেল স্টেশন থেকে বোনারপাড়া জংশন পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ট্রেন যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়েছে।

গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আবুল কাশেম (০১৮৬৭-৭২৬৪৬২) জানান, লালমনিরহাট-সান্তাহার রুটে গাইবান্ধার ত্রিমোহিনী রেল স্টেশন থেকে বোনারপাড়া জংশন পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে রেল লাইন ডুবে যাওয়ায় বুধবার সকাল ১১টা থেকে ওই রুটে সরাসরি এখন পর্যন্ত সকল প্রকার ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এখন থেকে ডাউন ট্রেনগুলো গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত এবং আপ ট্রেনগুলো বোনারপাড়া পর্যন্ত চলাচল করছে। তবে আন্তনগর লালমনি এক্সপ্রেস ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন বিকল্পভাবে রংপুর-পার্বতীপুর-সান্তাহার হয়ে ঢাকায় চলাচল করছে বলে তিনি উলে¬খ করেন।

অপরদেকে গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কের কদমের তল থেকে ফকিরপাড়া পর্যন্ত এবং গাইবান্ধা-ফুলছড়ি-সাঘাটা সড়ক, গাইবান্ধা-বালাসীঘাট সড়ক, গাইবান্ধা-বোনারপাড়া সড়ক এখন হাঁটু পানিতে নিমজ্জিত। ফলে সড়কগুলোতে সকল প্রকার যানবাহন ও পথচারিদের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে গাইবান্ধা শহরের পিকে বিশ্বাস রোড, সান্তার পট্টি রোড, স্টেশন রোডের কাচারী বাজার থেকে পুরাতন জেলখানা পর্যন্ত, ভিএইড রোড, ডেভিড কোম্পানীপাড়ার ২টি সড়ক, মুন্সিপাড়া শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়ক, ব্রীজ রোড কালিবাড়িপাড়া সড়ক, কুটিপাড়া সড়ক, পূর্বপাড়া সড়ক, একোয়াষ্টেটপাড়া সড়ক, বানিয়ারজান সড়ক, পুলিশ লাইন সংলগ্ন সড়ক হাঁটু পানিতে নিমজ্জিত। গাইবান্ধা শহরের অধিকাংশ এলাকার বসতবাড়িতে পানি উঠায় পানিবন্দী মানুষদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এদিকে চরাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষদের খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। বিশেষ করে গবাদিপশু যেগুলো চরাঞ্চলে আটকা পড়েছে সেগুলো যানবাহনের অভাবে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। এছাড়া গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালী ইউনিয়নের সিংড়িয়া, উদখালী, পূর্ব ছালুয়া, কাঠুর, উড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর ও গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারীতে এধরণের অনেক পরিবার এখনও চরাঞ্চলে আটকা পড়ে রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির সংকটেও তারা ভুগছে। অন্যদিকে শহর সংলগ্ন বেশকিছু বাধ ভেঙে যাওযায় বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১৫০ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদীর পানি ৯৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত বন্যা দুর্গত এলাকার ৪ উপজেলার জন্য ৪৫ মেট্রিক টন করে চাল নতুন করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গাইবান্ধা পৌরসভার মেয়র অ্যাড. শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর মিলন জানান, এখন পর্যন্ত কোন সরকারি ত্রাণ সামগ্রী পাওয়া যায়নি। তবে এব্যাপারে জেলা প্রশাসকের কাছে জরুরী ভিত্তিতে ত্রাণ সহায়তার জন্য আবেদন করা হয়েছে। পৌর এলাকার বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিত পরিবারগুলোর মধ্যে পৌরসভার মেয়রের পক্ষ থেকে দুবেলা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে তৈরী খাবার খিচুরি ও শুকনো খাবার। এছাড়াও জরুরী ভিত্তিতে ওষুধ, স্যালাইনও সরবরাহ করা হচ্ছে। পৌরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিটি কেন্দ্রে জরুরী ওষুধপত্রসহ বন্যা দুর্গত এলাকায় সার্বক্ষনিক কর্মরত রয়েছে। এছাড়া পৌরসভার নিজ উদ্যোগে প্রতিটি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ, বিশুদ্ধ পানির জন্য নলকুপ স্থাপন করে দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি গাইবান্ধা জেলা শাখা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে গাইবান্ধাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা এবং পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ ও বাঁধ ভাঙ্গার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছে।

পাঁচ উপজেলার চার লক্ষাধিক বন্যাপিড়ীত মানুষের মধ্যে যারা বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন তারা জানান- বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার এবং স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তারা। বাঁধে আশ্রিতরা খাদ্য, পানি এবং পশু খাদ্যের অভাবের কথা জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসন জানায়, বিতরণের জন্য ১ হাজার মেট্রিক টন চাল, দশ লক্ষ টাকা এবং ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাওয়া গেছে, যার বেশিরভাগ অংশই বিতরণ করা হয়েছে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন