উত্তরাঞ্চলে নকল গুড়ের বাজার সয়লাব!

  22-07-2019 03:55PM

পিএনএস, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : দেশের উত্তরাঞ্চলে নকল গুড়ে বাজার সয়লাব। গুড় নয় গুড়ের মতো দেখতে মানুষ মনে করে এটা চিনি মেশানো গুড়। এ গুড়ে চিনি মেশানো থাকলেও আখের রস বা আখের রস দিয়ে তৈরি গুড়ের ছিটে ফোটাও নেই। গুড় মনে করে কিনে খাচ্ছে মানুষ। আসলে এ গুড় ভেজাল নয় সম্পূর্নরূপে নকল। নকল গুড় তৈরি করতে প্রয়োজন হয় না আখের রস শুধু প্রয়োজন হয় চিনির সঙ্গে ময়দা, ভুট্টার গুড়া, হাইড্রোজ, সোডা, ফিটকারী ও ক্ষতিকর রঙসহ নানা বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য। যা মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তবুও মানুষ চিনি মেশানো গুড় মনে করে কেজি কেজি কিনে খাচ্ছে।

গত ২৮ জুন দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকায় “মহাদেবপুরে তৈরি হচ্ছে নকল গুড়” শিরোনামে ইউসুফ আলী সুমনের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশ হয় নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের মোমিনপুর গ্রামের নকল গুড় তৈরীর কারখানার চিত্র। ঐ দিন মহাদেবপুর থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন নকল গুড় তৈরির কারখানা মালিক আ. আজিজকে গ্রেপ্তার করে। পরে ভ্রাম্যমান আদালতে মাত্র ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে তাকে ছেরে দেওয়া হয়। ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসমা খাতুন।

আব্দুল আজিজ ১৫ বছর থেকে নকল গুড় তৈরির কারখানা পরিচালনা করে আসছে। এ সুত্র থেকেই অনুসন্ধানের স্বার্থে নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলার কয়েকটি হাট বাজারে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায় বাজারে আসল গুড় নেই, নকল গুড়ে বাজার সয়লাব। হাতেগোনা দু’একজন ব্যবসায়ীর কাছে যৎ সমান্য আসল আখের গুড় রয়েছে।

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা সদর হাটের গুড় ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি নতুন গুড় ব্যবসায়ী মহাদেবপুর কারখানার গুড় বিক্রি করি। দানাদার এবং থান গুড় ৬০-৭০ টাকা কেজি। আসল গুড় ৯০-১০০ টাকা কেজি। বেশী দামের জন্য আসল গুড় কেউ কিনতে চায় না।’

ব্যবসায়ী কুদ্দুস বলেন, চাপাই নবাবগঞ্জ এর কারখানা থেকে গুড় এনে বিক্রি করি। কারখানার মালিকেরা নিজবাহন যোগে গুড় দোকানে পৌঁছে দেয়।’ আসল গুড় তার দোকানে আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন নেই। কুদ্দুস নাটোর জেলার গুড় কারখানার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘স্যানিটারী ইন্সপেক্টর মহাজনকে বলে গুড়ে রঙ মেশাবেন না, কিন্তু চিনি মেশানো গুড় তৈরিতে নিষেধ করেন না। তার মানে কি বুঝায় তাদের সমর্থনে এসব গুড় তৈরী হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘শুধু নওগাঁ ও জয়পুরহাট নয় উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশের চিত্র প্রায় এক।’ পুরাতন ব্যবসায়ী জাহেদুল বলেন, এসব ভগিজগি গুড় বিক্রি করতে মন চায় না তাই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছি। নওগাঁর পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলার কয়েকজন গুড় ব্যবসায়ীর সাথে কথা বললে তারা জানায়, জয়পুরহাট পূর্ব বাজার গোপাল ও মুক্তি আড়ৎ থেকে তারা গুড় কিনেছে। আসল গুড় তাদের আছে কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন নেই।

নকল গুড় প্রস্তুত কারকরা গুড়ের রঙ দ্রুত পরিবর্তনে রাসয়নিক পরিশোধক দ্রব্য হাইড্রোজ ব্যবহার করে। যা মানব দেহের জন্য চরম ক্ষতিকর। হাইড্রোজ দেওয়া গুড়ে হাইড্রোজের গন্ধ থাকে এবং গুড়ের রঙ হালকা সাদাটে বা অনুজ্জল সোণালী হয়। যা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে। প্রতিরোধে প্রশাসনের কোন ভূমিকা নেই। এ ব্যাপারে প্রশাসনের রহস্যজনক নিরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে। তারা নকল গুড় উৎপাদন বন্ধের জন্য প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ ও ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান কামনা করেন।

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের লেকচারাল ডা. সোহরাব হোসেন বলেন, ‘ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে তৈরি নকল গুড় খেলে মানুষের মরনব্যাধি ক্যান্সার, কিডনি ড্যামেজ, লিভার পচনসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’ নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আখতারুজ্জামান আলাল বলেন, ‘ক্ষতিকারক উপকরণ দিয়ে তৈরি নকল গুড় মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব গুড় খেলে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।’

কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস বলেন, ‘নকল গুড় উৎপাদন ও বাজারজাতকারীদের আইনের আওতায় আনা হোক।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নওগাঁর ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক মো. হাসান আল-মারুফ বলেন, তদন্ত পূর্বক এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ’

এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর সামসুল হক বলেন, ‘জেলার প্রত্যেকটি উপজেলার স্যানেটারী ইন্সপেক্টরকে নির্দেশ দিয়েছি বাজারে গুড় পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য। তারপর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন