প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল হক আর নেই

  14-08-2019 05:36PM

পিএনএস ডেস্ক : সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, বর্তমানে জাতীয় কমিটির সদস্য আ ন ম শফিকুল হক আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। বুধবার বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে সিলেটের আল হারামাইন হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, সর্বস্তরের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আ ন ম শফিকুল হকের মরদেহ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। এরপর বাদ জোহর সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে বিকেলে মরহুমের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথে তাকে দাফন করা হবে।

আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান এ রাজনীতিবীদ কিডনী রোগসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন বলেও জানান তিনি।

এর আগে, মঙ্গলবার রাতে আ ন ম শফিকুল হক নগরীর আল হারামাইন হাসপাতালে ভর্তি হন। তার অসুস্থতার খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিজিত চৌধুরী প্রমুখ।

শিক্ষক ও সাংবাদিক থেকে দক্ষ রাজনীতিবিদ আ. ন. ম শফিক সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতির এক বটবৃক্ষ। রাজনীতির জন্য জীবনের পুরোটাই বিলিয়ে দিয়েছেন তিনি। স্বচ্ছ ব্যক্তি ইমেজ নিয়ে দিনরাত শ্রম দিয়ে সংগঠনকে শক্ত একটি অবস্থানে এনেছেন। তার হাতে সৃষ্টি হয়েছে হাজারো নেতা কর্মী। কিন্তু জীবনের শেষ বেলায় মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে বাসা বাঁধে লিভারে। সেই সাথে অর্থনৈতিক দৈন্য আর রোগে-শোকে জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে পড়েন তিনি।

এ অবস্থায় এগিয়ে আসেন বিদেশে থাকা তাঁর শুভাকাঙ্খিরা। তারা চিকিৎসার টাকার ব্যবস্থা করেন। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা আসে। ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের গুরগাঁওয়ে অবস্থিত ম্যাডান্টা মেডিসিটি হসপিটালে ২০১৫ সালের ৮ই মে লিভার প্রতিস্থাপন করা হয় তাঁর।

৭২ বছর বয়সী আ.ন.ম শফিকের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায়। ২ ছেলে ও তিন মেয়ের সফল পিতা তিনি। ছেলে মেয়েরা পরিবার নিয়ে বিদেশে থাকেন। তাদের পাঠানো টাকা দিয়েই বর্তমানে তার চিকিৎসা ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকা খাওয়া চলছে।

আ.ন.ম শফিক ১৯৬৫ সালে এমসি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পরই নাম লেখান ছাত্রলীগে। ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তিনি। ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জনমত সংগঠনে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সংগঠক হিসেবে ৫ নম্বর সেক্টরে তখনকার জাতীয় পরিষদ সদস্য আব্দুল হকের সাথে কাজ করেছেন।

বিশ্বনাথ উপজেলার দশপাইকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মৌলভী তবারক আলীর ছেলে আ.ন.ম শফিকুল হক এক সময় পিতার পথ অনুসরণ করে লেগে যান শিক্ষকতা পেশায়। বিশ্বনাথের মৌলভীগাঁও প্রথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তার শিক্ষকতা শুরু। সে সময় মাস্টার সাব হিসেবে সব মহলে পরিচিতি পান তিনি। এককালে সাংবাদিকতাও করেছেন। ষাটের দশকে সাপ্তাহিক বাংলার বাণী পত্রিকায়, ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে সাপ্তাহিক খবর ও দৈনিক খবরে সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কাজ করেছেন তিনি।

দেশের নানা পট পরিবর্তনের পর ১৯৮৬ সালের পরের সম্মেলনে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন আ.ন.ম শফিকুল হক। ৯১ ও ৯৭ সালের সম্মেলনেও পুরনো পদে বহাল থাকেন তিনি। ১৬ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সামলানোর পর ২০০২ সালের সম্মেলনে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান আ.ন.ম শফিক। পরবর্তীতে আনম শফিকুল হককে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন