পুলিশের ভুলে জেল খাটছে নিরীহ রাজন, অবশেষে জামিন

  11-11-2019 09:25PM

পিএনএস ডেস্ক : এক আসামির পরিবর্তে গ্রেপ্তার নিরীহ ব্যক্তি রাজন ভূঁইয়াকে আজ সোমবার জামিনের পাশাপাশি মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে এ ভুলের জন্য কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানার এক উপপরিদর্শকে (এসআই) মামুনুর রশীদকে তলব করা হয়েছে। নিরীহ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করায় কেন তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

আদালত একই সঙ্গে নিরীহ রাজন ভূঁইয়ার পরিবারকে কোনো ধরনের হয়রানি না করতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের আদেশে বলেছেন, যাচাই-বাছাই না করে নিরীহ নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। যাচাই-বাছাই না করে রাজন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা তুলে ধরে আদালত বলেছেন, নিরীহ রাজন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করায় পুলিশ আইনের ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। এই আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে তিন মাসের কারাদণ্ড বা তিন মাসের বেতনের সমপরিমাণ জরিমানা।

ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আজ সোমবার এ আদেশ দেন।


এসআই মামুনুর রশীদকে আগামী ৪ ডিসেম্বর এই আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, গত ১৬ অক্টোবর আদালতের পরোয়ানা অনুযায়ী হাবিবুল্লাহ নামের একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গ্রেপ্তার করেছিলেন তাঁর থানার এসআই মামুনুর রশিদ। রাজন ভূঁইয়া নামের কোনো আসামিকে তারা গ্রেপ্তার করেননি। আদালতের আদেশ পাওয়ার পর আদালতের আদেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মামলার কাগজপত্র ও আইনজীবীর সূত্র বলছে, সাড়ে সাত বছর আগে (২০১২ সালের ৯ মে) রাজধানীর বংশাল এলাকা থেকে নেশাজাতীয় ২৮ পিছ ইনজেকশনসহ হাবিবুল্লাহ রাজন নামের এক আসামি গ্রেপ্তার হন। তখন তার বয়স ছিল ২৬ বছর। তাঁর বাবার নাম আবদুল মান্নান। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানার গোপালনগর গ্রামে। গ্রেপ্তার হওয়ার এক মাস ২১ দিন পর আদালতের আদেশে জামিনে মুক্ত হন হাবিবুল্লাহ রাজন। এরপর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন। হাবিবুল্লাহ রাজনের বিরুদ্ধে হওয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলাটি তদন্ত করে বংশাল থানা-পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। আদালত অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০১২ সালের ১ জুলাই হাবিবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলাটি তখন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন ছিল। ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ বদলি করা হয়। আদালত পলাতক আসামি হাবিবুল্লাহ রাজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আদালতের পরোয়ানাতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল, আসামির নাম হাবিবুল্লাহ রাজন। বাবার নাম আবদুল মান্নান। গ্রামের নাম গোপালনগর। থানা ব্রাহ্মণপাড়া। জেলা কুমিল্লা। আদালতের পরোয়ানা পেয়ে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানা-পুলিশ রাজন ভূঁইয়াকে হাবিবুল্লাহ রাজন নামে গত ১৬ অক্টোবর গ্রেপ্তার করে কুমিল্লার বিচারিক হাকিমের আদালতে তোলে। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

রাজন ভূঁইয়ার আইনজীবী নিকুঞ্জ বিহারী আচার্য বলেন, রাজন ভূঁইয়ার নামে কোনো মামলা ছিল না। পুলিশ তাঁকে হাবিবুল্লাহ রাজন মনে করে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। বিষয়টি জানার পর রাজন ভূঁইয়ার পক্ষে ঢাকার আদালতে তিনি জামিনের আবেদন করেন। আদালতে রাজন ভূঁইয়ার জন্ম সনদ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সনদপত্র জমা দেন। জন্ম সনদ অনুযায়ী রাজন ভূঁইয়ার বয়স এখন ১৯ বছর। অথচ মামলার আসামি হাবিবুল্লাহ রাজনের বয়স তখন ছিল ২৬ বছর।

আদালতে জমা দেওয়া রাজন ভূঁইয়ার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, রাজন ভূঁইয়ার বাবার নাম আবদুল মান্নান। আবার প্রকৃত আসামি হাবিবুল্লাহ রাজনের বাবার নামও আবদুল মান্নান। তবে রাজন ভূঁইয়ার বাবা মৃত। আর হাবিবুল্লাহ রাজনের বাবা জীবিত। নিরীহ রাজন ভূঁইয়াকে কারাগার থেকে আজ ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি নিয়ে আদালত এক টাকা মুচলেকায় তাঁকে জামিন দেন। আর এই মাদক মামলার আসামি না হওয়ায় তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন আদালত।- প্রথম আলো

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন