কন্যা সন্তানকে পানিতে ফেলে হত্যা, পিতাকে জিজ্ঞাসাবাদ

  17-01-2020 07:27PM

পিএনএস ডেস্ক : বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নে ছেলে সন্তান না হওয়ার ক্ষোভে ৪০ দিনের এক শিশু কন্যা সন্তানকে পানিতে ফেলে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ওই ইউনিয়নের গোজখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় আজ শুক্রবার দুপুরে শিশুটির মা সীমা বেগম অজ্ঞাত আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গোজখালী গ্রামের জাহাঙ্গীর সিকদার ও সীমা দম্পতির সোহাগী (৯) ও জান্নাতী (৩) নামে ২টি কন্যা সন্তান রয়েছে। এরপর গত ৮ ডিসেম্বর ওই দম্পতির জিদনি নামের আরেকটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। বাবা জাহাঙ্গীর সিকদার কন্যা সন্তান জন্মের বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। তিনি একটি ছেলে সন্তানের আশা করেছিলেন।

এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার সময় পিতা জাহাঙ্গীর সিকদার জিদনিকে নিয়ে ঘরের মধ্যে শুয়ে ছিল। এ সময় তার স্ত্রী সীমা বেগম ও সীমার মা পারুল বেগম বসতঘরের বাহিরে বসে চাল ঝাড়ার কাজ করতে ছিলেন। কাজ শেষে রাত ১১টার সময় শিশুটির মা সীমা বেগম ও নানী পারুল বেগম ঘরে প্রবেশ করে জিদনিকে দেখতে না পেয়ে ডাক চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা এবং বাড়ির অন্যান্য লোকজন ছুটে আসে।

খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘরের পেছনের ডোবায় পানির মধ্যে শিশু জিদনির ঘুমানোর কাঁথা বালিশ এবং বিছানাপত্রসহ মরদেহ দেখতে পায়। খবর পেয়ে আমতলী থানা পুলিশ রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে এবং ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে বাবা জাহাঙ্গীর সিকদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে।

পরিবার ও এলাকাবাসীর ধারণা, পরপর ২টি কন্যা সন্তান থাকার পরও আরেকটি কন্যা সন্তানের জন্ম হওয়ায় রাগে-ক্ষোভে পাষণ্ড বাবা জাহাঙ্গীর সিকদার নিজ শিশু কন্যা (৪০ দিন বয়সী) জিদনিকে পানিতে ফেলে হত্যা করেছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ময়না বেগম জানান, আবারো কণ্যা সন্তানের জন্ম হওয়ার স্ত্রী সীমা বেগমের সাথে রাগ করে কোনো কথা বলত না স্বামী জাহাঙ্গীর সিকদার এবং সন্তান জিদনিকে নতুন কোনো কাপড়ও কিনে দেয়নি সে।

শিশুটির মা সীমা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার গর্ভে তৃতীয় কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ায় আমার স্বামী খুশি হতে পারেননি। আমার ৪০ দিন বয়সী মেয়ে জিদনিকে এভাবে মেরে ফেলল। কে মেরে ফেলছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন আমি তো দেখিনি।

পানিতে ফেলে শিশু হত্যার খবর পেয়ে আজ শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বরগুনা সদর) মহরম আলী, সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী- তালতলী সার্কেল) সৈয়দ রবিউল ইসলাম ও আমতলী থানার ওসি মোঃ আবুল বাশার।

এ ব্যাপারে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বাশার বলেন, শিশুটির লাশ উদ্ধার করে থানায় এনে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনার মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মা সীমা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শিশুটির বাবা জাহাঙ্গীর সিকদারকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন