শ্রমিক ও পুলিশের সংঘর্ষ; পালিয়ে বেড়াচ্ছে ভোজনপুরের মানুষ

  28-01-2020 12:40AM

পিএনএস ডেস্ক: পঞ্চগড়ের ভোজনপুরে পাথর শ্রমিক ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা চার শতাধিক লোককে আসামি করে দুটি মামলা করেছে পুলিশ।

রোববার রাতে তেঁতুলিয়া থানা পুলিশের এসআই লুৎফর রহমান হত্যা মামলা ও এসআই শাহাদাত হোসেন সরকারি কাজে বাধা দান, পুলিশ ও র্যাবের ওপর হামলা এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের পৃথক মামলা করেন।

গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় ৭০ জনের বেশি নামীয় আসামি থাকলেও তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করতে রাজি হয়নি পুলিশ। মামলার পর থেকে গ্রেফতার আতঙ্কে স্থানীয় পাথর শ্রমিকরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

রোববার সকাল তেঁতুলিয়ার ভোজনপুর এলাকার পাথর শ্রমিকরা ভূগর্ভস্থ পাথর উত্তোলনের দাবিতে তেঁতুলিয়া-ঢাকা জাতীয় মহাসড়ক অবরোধ করলে পাথর শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এক পর্যায়ে পাথর নিক্ষেপসহ লাঠি নিয়ে পুলিশের ওপর হামলাসহ পুলিশের তিনটি গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় ৮ পুলিশ, তিন র্যাব সদস্যসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। এদের মধ্যে গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পথে জুমার উদ্দিন নামে এক শ্রমিক মারা যান। নিহত জুমার উদ্দিনের বাড়ি তেঁতুলিয়া উপজেলার ভোজনপুর ইউনিয়নের গনাগছ এলাকায়।

এদিকে সোমবার সকালে জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ঘটনাস্থলে যান। তারা নিহতের বাড়ি গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান, তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে পৃথকভাবে আর্থিক সহায়তা করা হয়। নিহত শ্রমিক জুমার উদ্দিনের লাশ রোববার রাতেই তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সকালে স্থানীয়ভাবে লাশ দাফন করা হয়।

সোমবার সকালে ভোজনপুর এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, তেঁতুলিয়া-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কসহ স্থানীয় রাস্তায় মানুষ চলাচল কমে গেছে। তবে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও থমথমে অবস্থা দেখা গেছে। বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত আইন শৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনকারী চক্রটি শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে সাধারণ পাথর শ্রমিকদের মাঠে নামিয়েছেন বলে দাবি করছে পুলিশ পুলিশসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এদিকে মামলার পর থেকেই ওই এলাকার অধিকাংশ মানুষ পলাতক।

তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশের ওসি জহুরুল ইসলাম বলেন, ভোজনপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। নাম উল্লেখ করে মামলা করা হলের আসামিদের নাম তদন্তের স্বার্থে এখনি প্রকাশ করছি না। আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে রাতেই মরদেহ নিহতের পরিবারের কাছে দেয়া হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত এবং উস্কানিদাতা তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে নিরপরাধ ব্যক্তিদের যেন কোনো হয়রানি না করা হয় সেই নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, পরিবেশ বিব্বংশী অবৈধ ড্রিল ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধে সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। এ মেশিনে পাথর উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভস্থ বিশাল শুন্যতার সৃষ্টি হয়। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ নিয়ে আন্দোলন এবং শ্রমিক নিহতের ঘটনা দুঃখজনক। সকালে আমরা নিহত শ্রমিকের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাতেই তার বাড়িতে গেছিলাম।

পিএনএস/হাফিজ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন