লক্ষ্মীপুরে গুদামে ধান দিতে অনাগ্রহ কৃষকের

  22-02-2020 07:09PM

পিএনএস, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরে খাদ্য বিভাগের ধান বিক্রয়ে অনীহা প্রকাশ করছে সদর উপজেলার কৃষকরা এমন অভিযোগ উঠেছে। এক টন ধান বিক্রয়ে কৃষদের লাভ কম হওয়ায় কৃষকরা অনাগ্রহী হয়ে গেছে। কৃষক প্রতি ধান বিক্রয়ে এক টন থেকে বৃদ্ধি করে মাথাপিছু তিন টন করার দাবি জানিয়েছে তারা।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদনও জানিয়েছে জেলার সদর উপজেলার কয়েকজন কৃষক। তবে, জেলা খাদ্য কর্মকর্তা বলেছে- শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কৃষক প্রতি এক টন করে ধান ক্রয় করা হচ্ছে। কৃষকদের দাবি, তাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ ধান মজুদ থাকা স্বর্ত্বেও খাদ্য বিভাগের কৃত্রিম কারসাজিতে পড়ে তারা ধান বিক্রিতে আগ্রহ হরিয়ে ফেলেছেন।

সদর উপজেলার ছাড়াও রামগঞ্জ, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় কার্ডধারী মাথাপিছু এক কৃষক থেকে ৩ টন করে ক্রয় করলেও সদর উপজেলা রহস্যজনক কারনে মাত্র ১ টন করে ক্রয় করা হচ্ছে মাথাপিছু। অপর দিকে কোন যুক্তিগত কারণ ছাড়াই সদর উপজেলা থেকে ৩০০ টন ধান সমর্পন করে অন্য উপজেলায় দেওয়া হয়েছে এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে নায্যমূল্যে আমন ধান সংগ্রহে জেলার সদর উপজেলার লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২২০৮ মে. টন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ধান সংগ্রহ করা হয়েছে সাড়ে ১১ শ’ মে. টন। এ উপজেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় বরাদ্দ কর্তন করে পাঠানো হয়েছে জেলার রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলাতে। তবে জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ ধান উৎপাদন হয় সদর উপজেলাতে।

কৃষদের কাছে যথেষ্ট ধান মজুদ থাকায় স্বত্বেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার পেছনে সংগ্রহ কামিটিতে দায়ি করছেন কৃষকসহ সচেতন মহল। তাদের মতে, ধান ক্রয়ে আন্তরিকতার অভাব থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সদর উপজেলার পৌর এলাকার লামচরী গ্রামের তালিকাভূক্ত কৃষক মারজু লুরুল্যা জানান, তার কাছে বিক্রির মতো প্রায় ১০ টনের ধান রয়েছে। কিন্তু তিনি মাত্র একটন ধান সরকারী গুদামে বিক্রি করতে পেরেছেন। যথেষ্ট ধান মজুদ থাকা স্বত্বেও তিনি কৃষক প্রতি এক টনের বেশি বরাদ্দ না থাকায় বিক্রি করতে পারছেন না।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সদর উপজেলা ব্যতীত অন্যসব উপজেলাতে সরকারী গুদামে তিন টন করে ধান বিক্রি করছে কৃষকরা। সদর উপজেলার ৩শ’ মে. টন বরাদ্দ কর্তন করে অন্য উপজেলাতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু অন্য উপজেলার মতো এখানে কৃষক প্রতি রবাদ্দ বাড়ালে এখানকার কৃষকরাই উপকৃত হতো।

সদর উপজেলার দিঘলীর কৃষক মানিক ও আবুল হাসেন জানান, পরিবহন খরচ বেশি পড়ায় এক টন ধান বিক্রি করে তাদের পোষে না।

মান্দারী ইউনিয়নের গন্ধব্যপুর গ্রামের আবদুল মান্নান বলেন, সরকারী গুদামে মাত্র এক টন করে ধান নেওয়া হচ্ছে। তাই তেমন একটা আগ্রহ প্রকাশ করছি না। এছাড়া এখানে ধান বিক্রি করতে হলে পরিবহন বাবদ খরচ বেশি পড়ে। আড়াই থেকে ৩০০ শ’ মন ধান আছে আমার। সেগুলো খোলা বাজারে বিক্রি করে দেব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রায়পুর এবং রামগঞ্জ উপজেলাতে ধান উৎপাদন কম হলেও অন্যান্য উপজেলার তুলনায় ধান সংগ্রহে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে বেশি। সম্প্রতি রামগতি উপজেলায় নির্ধারিত বরাদ্দের ৫ শ’ মে. টন সংগ্রহের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে রায়পুরে।

বর্তমানে সদর উপজেলার কর্তনকৃত তিনশ’ টনের মধ্যে একশ’ টন রায়পুরে এবং দুইশ’ টন দেওয়া হয়েছে রামগঞ্জে। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, রায়পুরে ধান বিক্রয় হচ্ছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কৃষক এবং ধান উৎপাদন কম থাকা স্বর্তেও অন্য উপজেলার বরাদ্দ কর্তন রায়পুরে সংগ্রহের বরাদ্দ বাড়িয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এ ধান বিক্রয় করা হয়।
আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অবৈধ সুবিধা নিচ্ছে খাদ্য অফিসের অসাধু এসব কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, সদর উপজেলাতে ধান সংগ্রহে জেলা প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকায় এ সিন্ডিকেট অনিয়মের জন্য রায়পুর উপজেলা খাদ্য গুদামকে নিরাপদ মনে করে বরাদ্দ কর্তন করে সেখানে পাঠাচ্ছে এমন অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে, কৃষকদের ধান বিক্রির অনীহার কথা স্বীকার করে সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রামিম পাঠান বলেন, এক টন করে ধান নেওয়ার কারণে কৃষকরা ধান বিক্রিতে তেমন সাড়া দিচ্ছে না। ফলে আমাদের ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছেনা।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) সাহেদ উদ্দিন আহম্মদ বলেন, সদর উপজেলা খাদ্য গুদামে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেটার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ায় জেলা ধান চাল সংগ্রহ কমিটির সিদ্ধান্তে বরাদ্দ সমর্পন করা হয়েছে। সমর্পনকৃত বরাদ্দের ধান অন্য উপজেলা থেকে সংগ্রহ করা হবে।

সদর উপজেলায় ধানের উৎপাদন বেশি থাকার পরেও কেন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না এ প্রশ্নের জবাবে খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেন, যে সকল তালিকাভূক্ত কৃষক ধান নিয়ে আসছে তাদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। অন্য উপজেলাতে কৃষক প্রতি ৩ টন আর সদর উপজেলাতে কৃষক প্রতি এক টন কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তিন টন করে বরাদ্দ দিলে শৃঙ্খলা বজায় থাকে না। এখন এক টন করে নেওয়ায় গুদামে কোন ঝামেলা হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে উপজেলা পর্যায়ের ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিক রিদোয়ান আরমান শাকিল বলেন, জেলা কমিটির সিদ্ধান্তে সদর উপজেলার বরাদ্দ থেকে ৩শ’ মে. টন অন্য উপজেলায় সমর্পন করা হয়েছে।

কৃষক প্রতি এক টন থেকে ৩ টনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত কৃষক প্রতি ৩ টন করে নেওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু সদর উপজেলায় তালিকাভূক্ত তিন হাজার কৃষক রয়েছে, সেক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে অন্তভূক্ত কৃষকরা ধান বিক্রি করতে অনীহা প্রকাশ করলে তালিকাভূক্ত অন্য কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হবে।

এ বিষয়ে মতামত নেওয়ার জন্য লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পালের মোবাইল ফোনে কল করেও তার মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন