স্বামীর গলা কেটে হত্যা, চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন স্ত্রী

  25-02-2020 08:16PM

পিএনএস ডেস্ক : ব্যবাসায়িক পার্টনারের সঙ্গে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করানোয় স্বামীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন সামিরা। গত বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটান তিনি।

এদিকে মেয়েকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন বাবা আলী হোসেন। গতকাল সোমবার রাতে দুজনকেই গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন (র‌্যাব-১)।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সামিরা ও তার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে গাজীপুরের শ্রীপুরের কেওয়া পশ্চিম খণ্ড প্রশিকামোড় এলাকার একটি তিন তলা ফ্ল্যাট থেকে সামিরার স্বামী জমি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের গলাকাটা ও ঝলসানো মরদেহ উদ্ধার করে র‌্যাব।

আজ মঙ্গলবার পোড়াবাড়িতে র‌্যাব-১ ক্যাম্প কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সামিরার দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে মামুন জানান, গ্রেপ্তার হওয়া সামিরা নিহত আব্দুর রহমানের চতুর্থ স্ত্রী। তার স্বামী নিজের ব্যবসায়িক পার্টনারদের সঙ্গে স্ত্রীকে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করাতেন। যে কারণে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ধারালো দা দিয়ে আব্দুর রহমানের ঘুমন্ত অবস্থায় ‍তার গলা কেটে হত্যা করেন। পরে অ্যাসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দেন। পালিয়ে যেতে তাকে সহায়তা করেন বাবা আলী হোসেন সহায়তা করেন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, গত মঙ্গলবার ক্রাইম সিন ইউনিট এবং সিআইডির উপস্থিতিতে নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়। সামিরা ও তার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা করা হয়েছে।

কীভাবে হয়েছিল হত্যাকাণ্ডটি

চলতি মাসের ১০ ফেব্রুয়ারি রতন নামে এক ব্যবসায়ী পার্টনারকে নিজের বাড়ি নিয়ে আসেন আবদুর রহমান। রাতে জোর করে সামিরাকে রতনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে স্থাপনে বাধ্য করেন। পরে রতন চলে গেলে ঘুমন্ত স্বামীর গলা ধারালো দা দিয়ে কেটে ফেলেন সামিরা। ওই অবস্থায় আবদুর রহমানকে তোশকে মুড়িয়ে ফেলেন। পরে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর রহমানের মুখ অ্যাসিডে ঝলসে দেন সামিরা।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সামিরা জানান, রতন ছাড়া আরও কয়েকজনের সঙ্গে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করেছিলেন নিহত আব্দুর রহমান। হত্যা পরবর্তী তিন দিন স্বামীর বাসাতেই অবস্থান করেন সামিরা। এই তিন দিনে স্বামীর লাশ সরিয়ে ফেলতে ব্যর্থ হন তিনি। পরে বাবার সহায়তায় ওই বাসা থেকে পালিয়ে যান। বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করারও চেষ্টা করেন তিনি। পরে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় চাচার বাসায় আত্মগোপন করেন সামিরা।

কেন এই পরিকল্পনা

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকায় বাড়ি থাকায় পূর্ব পরিচিত ছিলেন সামিরা ও আবদুর রহমান। সামিরা আগেও বিবাহিত ছিলেন। ২০১৬ সালে আব্দুর রহমার তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে টঙ্গীতে বসবাস করতে শুরু করেন। পূর্ব পরিচিতি থাকায় আবদুর রহমানের বাড়ি থেকে ডিগ্রি পরীক্ষা দেন সামিরা। এ সময় আবদুর রহমান তাকে বিভিন্নভাবে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। বারবার ব্যর্থ হয়ে একদিন খাবারের সঙ্গে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে খাইয়ে দেন সামিরাকে। তিনি ঘুমিয়ে পড়লে আবদুর রহমান তাকে ধর্ষণ করেন। ঘটনার ছবি ও ভিডিও করে রাখেন।

সামিরা আরও জানান, ওই ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে তাকে দিনের পর দিন ধষর্ণ করে আসছিলেন আবদুর রহমান। এর মধ্যে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পায়। সামিরার প্রথম স্বামী তাকে তালাক দেন।

এরপর থেকে তিনি শ্রীপুর নয়নপুর এলাকায় একটি ফার্মেসি পরিচালনা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন সামিরা। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আবদুর রহমান কোর্টের মাধ্যকে সামিরাকে বিয়ে করে শ্রীপুর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার শুরু করেন। সেখানে বসবাসরত অবস্থায় নিজের বিভিন্ন ব্যবসায়িক পার্টনারকে বাসায় এনে সামিরাকে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করতেন আবদুর রহমান। এসব সহ্য না করতে পেরে স্বামীর কাছে তালাক চান সামিরা। কিন্তু তাকেসহ তার বাবা-মা-ভাইকে হত্যার হুমকি দেন আবদুর রহমান। এসব থেকে মুক্তি পেতে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন সামিরা।

পিএনএস-জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন