চিড়িয়াখানার চারটি হরিণ খেয়ে ফেললো কুকুরের দল

  04-04-2020 12:35AM

পিএনএস ডেস্ক: রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঢুকে চারটি হরিণ কেয়ে ফেলেছে পাঁচটি ক্ষুধার্ত কুকুর। শুক্রবার (৩ এপ্রিল) ভোরের এ ঘটনার পর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে সকালেই হরিণগুলোর দেহের অবশিষ্টাংশ মাটিচাপা দেয়া হয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সুপারভাইজার শরিফুল ইসলাম প্রথমে ঘটনা অশ্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেন। এছাড়াও হরিণের সেডের দায়িত্বে থাকা মধু নামে একজন ঘটনা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, তার কোনো দোষ নেই।

তিনি জানান, চিড়িয়াখানায় গত তিন মাসে হরিণের ১৫টি বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। তবে কুকুরের দল ঢোকার সময় সেডে মোট হরিণ ছিল ৭৫টি। কুকুরে খাওয়ার পর এখন হরিণের সংখ্যা ৭১টি। কুকুরের পেটে যাওয়া চার হরিণের তিনটিই বাচ্চা। একটি তাদের মা। হরিণগুলোর দেহের অবশিষ্টাংশ সেডের ভেতরেই মাটি খুঁড়ে পুঁতে ফেলা হয়েছে।

পার্কের ভেতরের বেশকিছু জমি নিয়ে হরিণের সেড করা হয়েছে। এর ভেতর টিন দিয়ে দুটি ঘর রয়েছে। হরিণরা সেখানে পানি এবং খাবার খায়। ছায়ায় বিশ্রাম করে। বাকি অংশটুকু হরিণের বিচরণের জন্য ফাঁকা পড়ে আছে। চারপাশে আছে লোহা এবং কাঁটাতারের বেড়া।

চিড়িয়াখানায় পাঁচটি কুকুর ঢুকে চারটি হরিণ সাবাড় করলেও শুক্রবার বিকালেও ভেতরে কুকুর দেখা গেছে। চিড়িয়াখানায় দ্বিতীয় গেটের বাম পাশে থাকা পুকুরপাড়ে শুয়ে ছিল একটি কুকুর। চিড়িয়াখানার একটি সূত্র জানিয়েছে, কর্মচারীরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বহীনতার কারণেই সেডের ভেতর চারটি হরিণ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।

চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক মাহবুব হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গিয়ে চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ফরহাদ উদ্দীনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে কয়েক দফা ফোন করা হলেও ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ফরহাদ উদ্দীন ধরেননি।

শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও বোটনিক্যাল গার্ডেন পরিচালনা করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। যোগাযোগ করা হলে চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, এটি একটি দুর্ঘটনা।

তিনি জানান, রাত ২টা পর্যন্ত চিড়িয়াখানার পুকুরে কাজ চলেছে। লোকজন ছিল। তখন পর্যন্ত কুকুর ঢোকেনি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শহরের হোটেলগুলো বন্ধ থাকায় কুকুরের খাবার সংকট। তাই পাঁচটি কুকুর চিড়িয়াখানায় ঢুকে পড়েছিল। বেড়া থাকলেও কুকুরগুলো হরিণের সেডে ঢুকতে পেরেছিল।

সমর কুমার পাল বলেন, আমরা ধারণা করছি- ক্ষুধার্থ কুকুরগুলো প্রথমে বাচ্চাগুলোকে আক্রমণ করেছিল। তাকে বাঁচাতে গিয়েছিল মা হরিণটি। তখন সবগুলোকেই আক্রমণ করেছে কুকুরগুলো। সবগুলো হরিণের দেহের অংশ খেয়ে ফেলেছিল। ভোরে চিড়িয়াখানার কর্মীরা দেখেন হরিণের সেডে পাঁচটি কুকুর। চারটি হরিণের ক্ষত-বিক্ষত দেহও পড়ে ছিল। পরে কুকুরগুলোকে বের করে দেয়া হয়। আর হরিণগুলোর দেহের অবশিষ্টাংশ মাটিতে পুঁতে দেয়া হয়েছে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরও জানান, এ ঘটনায় চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ককে একটি লিখিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যেই তিনি প্রতিবেদন দেবেন। এরপর এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি হবে নাকি অন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

পিএনএস/হাফিজ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন