লিবিয়ায় নিহতদের মধ্যে ৫ জনের গ্রামের বাড়ি ভৈরব

  29-05-2020 11:48PM

পিএনএস, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : লিবিয়ায় মানবপাচারকারীদের গুলিতে নিহতদের মধ্যে ৫ জনের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায়। এছাড়া একই এলাকার আরও একজন গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।

নিহতরা হলেন ভৈরব উপজেলার রুসুলপুর গ্রামের মেহের আলীর ছেলে মো. আকাশ ( ২৬), মৌটুপী গ্রামের আবদুল আলীর ছেলে মো.সোহাগ (২০), আকবরনগর গ্রামের জিন্নত আলীর ছেলে মাহবুব ( ২১), সম্ভুপুর গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে মোঃ মামুন (২৩), একই এলাকা সম্ভুপুর গ্রামের মুসলিম মিয়ার ছেলে মোঃ আলী (২৪)।

এদিকে সম্ভুপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার মিয়ার ছেলে মোঃ জানু মিয়া (২৭) গুরুতর আহত হয়ে ত্রিপলীর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে লিবিয়ায় এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে বলে নিহতদের পারিবারিক সূত্রে খবরটি জানা যায়।

ঘটনায় বাংলাদেশী ২৬ জন ও আফ্রিকার ৪ জন নিহত হয়েছে বলে বিশ্ব মিডিয়ায় খবর প্রকাশ হয়েছে। আহতরা লিবিয়ার ত্রিপলীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে তারা ঘটনার খবর পান। ওই যুবকরা সবাই লিবিয়া থেকে স্বপ্নের দেশ ইতালি যেতে এদেশ থেকে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে মানবপাচারীকারীদের হাতে বন্দি হয়। সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে তারা অনেকেই বাড়িঘর, জমিজমা বিক্রি করে লিবিয়া যায় ইতালি যেতে। কিন্তু সে স্বপ্নপূরণের আশা খান খান করে দিল মানবপাচারকারীরা।

এখন লাশের অপেক্ষায় থাকা পরিবারের সদস্যরা বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। তাদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। প্রতিবেশীরা সান্তনা দিলেও তাদের কান্না থামাতে পারছে না।

প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হতভাগা ওই যুবকরা সবাই বাড়িঘর জমিজমা বিক্রি করে ৫/৬ লাখ টাকা দালালকে দিয়ে লিবিয়ায় যায়। কথা ছিল লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর তাদেরকে পরে সুবিধাজনক সময়ে সাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধ পথে ইতালি পাঠানো হবে। কিন্তু তারা লিবিয়ায় পৌঁছলে সেখানে একটি দালাল চক্র একটি গুদামে বন্দি করে আরও টাকা দাবি করে। এদের মধ্য দুই একজন লিবিয়ায় কয়েকমাস কাজও করেন।

প্রবাসে যাওয়া সবাই দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় কেউ পাচারকারীদের দাবি অনুযায়ী টাকা বাড়ি থেকে দিতে পারছিলেন না। তাদেরকে গুদামে বন্দি রোখে তিন বেলা খাবারও দেয়নি পাচারকারীরা। চলেছে তাদের ওপর নানা নির্যাতন। এরই মধ্য পাচারকারীরা কয়েকজনকে চাপ সৃষ্টি করে বাড়িতে মোবাইল করে জানাতে বাধ্য করে টাকা না দিলে সবাইকে মেরে ফেলবে। এসব নিয়ে গত বুধবার তারা পাচারকারী দলের একজনকে মারধোর করে।

ভৈরবের অন্য প্রবাসীদের কাছ থেকে পরিবারের সদস্যরা জেনেছে, টাকা না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে লিবিয়ার মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল গুদামে এসে নির্বিচারে গুলি চালালে ৩০ জন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। ঘটনার পরপর পাচারকারীরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে লিবিয়ার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশ উদ্ধার করে। এরপর কী হয়েছে এ খবর পরিবারের সদস্যরা জানেনা বলে জানায়।

নিহত আকাশের বাবা মেহের আলী মিয়া বলেন, জমি বিক্রি করে সুখের আশায় ছেলেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দালালকে দিয়ে লিবিয়া পাঠাই। সেখানে গিয়ে ইতালি যেতে ছেলেকে আরও ৭৫ হাজার টাকা পাঠাই। তারপরও ছেলের মৃত্যুর খবর পেলাম।

সোহাগের মা কাজল বেগম আজাহারি করে বলছিলেন, ৫ লাখ টাকা গেল, ছেলেও গেল।

মাহবুবের বাবা জিন্নত আলী বলল, সংসারের সুখ আশায় ছেলে স্বপ্নের দেশ ইতালিতে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন ছেলের লাশের খবর পেলাম।

মামুনের বাবা লিয়াকত আলী ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে বোবা হয়ে গেছেন। মো. আলীর বাবা মুসলিম মিয়া বললেন, ছেলের লাশ দেখতে চাই।

আহত জানুর বাবা আব্দুস ছাত্তার জানান, আমার ছেলে আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এদের সবার পরিবার সদস্যরা জানায়, বুধবার রাতে ছেলেদের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়েছে। নিহত সবাই বাড়িতে টাকা চেয়েছে। টাকা না পাঠালে তাদের হত্যার হুমকি দেয় মানবপাচারকারীরা। অনেকে টাকা যোগার করে পাঠানোর প্রস্ততি নিচ্ছিল। আবার অনেকের পরিবার টাকা না দেয়ার অপারগতা জানিয়েছিল। এরই মধ্যে পাচারকারীরা তাদেরকে গুলি করে হত্যা করল।

সরকারের কাছে নিহতদের পরিবারের দাবি, তারা তাদের সন্তানদের লাশ দেখতে চান। ঘটনার বিচারের ব্যবস্থা করে লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহিন জানান, ঘটনার খবর পাওয়া মাত্র নিহতদের ঠিকানা পরিচয় সংগ্রহ করতে পুলিশ মাঠে নেমেছে। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা আসলে আমরা সেভাবে কাজ করব বলে তিনি জানান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুবনা ফারজানা জানান, ঘটনার খবর পেয়ে আমি প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে বলেছি খোঁজখবর নিয়ে নাম ঠিকানা সংগ্রহ করতে। সরকার থেকে কোনো নির্দেশনা আসলে আমি সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন