দিনভর বৃষ্টিতে ভিজল লাশ, কাছে আসেনি স্ত্রী-সন্তান!

  04-06-2020 05:03PM

পিএনএস ডেস্ক: ঘরের এক কোণে ছোট্ট একটি চৌকিতে পড়ে আছে মরদেহ। দিনভর রোদে পুড়ল আর বৃষ্টিতে ভিজল। তবু আশপাশে নেই স্ত্রী-সন্তান কিংবা প্রতিবেশী। করোনা ভেবেই ভয়ে কেউ কাছে আসেনি। বুধবার এমনই ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ওসমানপুর ইউপির সাহেবপুর গ্রামের কালামিয়া বক্সের বাড়িতে।

দীর্ঘদিন কুয়েতে থাকার পর দুই বছর ধরে পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে থাকতেন কালামিয়া বক্সের বাড়ির সালেহ আহম্মদ। সেখানেই তিনি মঙ্গলবার রাতে মারা যান। পরে তার ভাই নূর আহম্মদ লাশ গ্রামে নিয়ে এলেও সঙ্গে আসেননি স্ত্রী-সন্তান।

এছাড়া লাশ আনার পর করোনা ভেবে বাড়ির আশপাশের লোকজনও পাশে ঘেঁষেননি। শেষ পর্যন্ত এগিয়ে এলো ‘শেষ বিদায়ের বন্ধু’ নামে একটি সংগঠন। করোনা পরিস্থিতিতে গঠিত এ সংগঠনের সদস্যরা সালেহ আহম্মদের দাফন সম্পন্ন করেছেন।

জানা গেছে, কয়েকদিন ধরে জ্বর ও কাশিতে ভুগছিলেন সালেহ আহম্মদ। এর মধ্যে তার ভাইয়ের ছেলের এক পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। এ নিয়ে সবাই হাসপাতালে ব্যস্ত থাকায় বাসায় একাই ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার রাতে তিনি মারা যান। ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে ছুটে আসেন নূর আহম্মদ। কিন্তু স্ত্রী, ভাতিজারা কেউ লাশের সঙ্গে গ্রামের বাড়ি যেতে রাজি হননি। বুধবার ভোরে অ্যাম্বুলেন্সে ভাইয়ের লাশ নিয়ে একাই শহর থেকে ফিরেন নূর আহম্মদ। গ্রামে আসার পর বড় বিপত্তি। লাশের সঙ্গে পরিবারের কেউ না আসায় বাড়ির কোনো লোকও এগিয়ে আসছে না। গ্রামবাসী তো দূরের কথা, উল্টো গ্রামে লাশ দাফন করতে বাধা দিচ্ছে তারা। এভাবেই কেটে গেল সারাদিন। এরমধ্যে বৃষ্টিতে ভিজে আর রোদে শুকিয়ে একাকার সালেহ আহম্মদের লাশ।

বিষয়টি ইউএনওকে জানান স্থানীয় চেয়ারম্যান। পরে শেষ বিদায়ের সংগঠনের সভাপতিকে জানানো হয়। তারা বাদ আছর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন।

ওসমানপুর ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুল হক জানান, বুধবার ভোরে অ্যাম্বুলেন্সে সালেহ আহম্মদের লাশ বাড়ি নিয়ে আসেন নূর আহম্মদ। কিন্তু লাশের সঙ্গে স্ত্রী-সন্তান না আসায় করোনার ভয়ে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে যায়। এজন্য কেউ পাশে যায়নি।

মিরসরাইয়ের ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, খবর পেয়ে শেষ বিদায়ের বন্ধু সংগঠনের সভাপতিকে জানানো হয়। তবে মৃত ব্যক্তির করোনা পজিটিভ কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কেননা মৃত্যুর আগে নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন