জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি, তীব্র হচ্ছে খাদ্যসঙ্কট

  15-07-2020 02:58AM

পিএনএস, জামালপুর প্রতিনিধি : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল আর অতিবর্ষণে জামালপুরে যমুনার পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

মঙ্গলবার সন্ধায় যমুনার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে গত ২৪ ঘন্টায় ৬৪ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপদসীমার ১১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দ্বিতীয় দফার বন্যায় জেলার ৭টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৪ লাখ মানুষ। পানির স্রোতের তীব্রতায় টিকতে না পেড়ে পানিবন্দি মানুষ পরিবার পরিজন ও গৃহপালিত গরু ছাগল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন। এদিকে বন্যাদুর্গতদের মাঝে দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট।

এসব মানুষজনকে আশ্রয় দিতে খোলা হয়েছে ১৪টি আশ্রয় কেন্দ্র। বানভাসীদের পানিবাহিত রোগ দেখা দেয়ায় ২৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে এসব বন্যাদুর্গত এলাকায়।

ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, পানি বৃদ্ধি প্রথম দফার রেকর্ড ভেঙেছে। সর্বত্রই এখন পানি। কোথাও শুকনো জায়গা নেই। বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হচ্ছে। রাস্তা-ঘাটসহ ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। ঘরবাড়ি ছেরে মানুষ আশ্রয়ে খুঁজে বেড়িয়ে পড়েছেন। এসব এলাকায় এখন তীব্র খাদ্যসঙ্কট দেখা দিয়েছে।

বন্যাদুর্গত এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার প্রাদুর্ভাবে আগে থেকে কর্মহীন ছিলেন তারা। তার সঙ্গে বন্যা যোগ হওয়ায় দুর্গত এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। একই সঙ্গে ফের বন্যায় আক্রান্ত হওয়ায় চরভাবে বিপাকে পড়েছেন দুর্গত এলাকার মানুষজন। তাদের ঘরে পর্যাপ্ত খাবার নেই। অনেকে খাবার অভাবে চিড়া-মুড়ি খেয়েও থাকছেন। দুর্গত এলাকার লোকজন আশ্রয়কেন্দ্র, সেতু ও উঁচু জায়াগায় যেতে শুরু করেছেন। ঘরবাড়ী বানের পানিতে ভেসে যাওয়া অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুর যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়ন বন্যায় কবলিত। মঙ্গলবার দুপুরে দেওয়াগঞ্জ পৌর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়- যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পৌরসভার সিংহভাগ এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সড়কগুলোতে ৩-৪ ফুট পানি থাকায় যানবাহন চলাচল করতে পারছে না অধিকাংশ এলাকায়। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে উপজেলা পরিষদ ও ভূমি অফিসসহ কয়েকটি সরকারি দপ্তর। বিভিন্ন বাজারে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ভোগান্তিতে রয়েছেন ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে ব্যাপক দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দেওয়ানগঞ্জ পৌর এলাকা ও ৮ ইউনিয়নের বাসিন্দাদের।

একই চিত্র জেলার প্রায় সব কয়েকটি উপজেলায়।

দেওয়ানগঞ্জ বেলতৈল বাজারের বাসিন্দা মো: মোজাম্মেল হক জানান, এবার ২য় দফা হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। কোনো রকম প্রস্তুতি ছিলো না তাদের। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন তারা।

কয়েকজন যানবাহন চালক জানান, হঠাৎ করে বন্যার পানি আসায় রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। তাই এখন গাড়ি না চালানোয় তাদের উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে তাদের। তাই তারা দ্রুত প্রশাসনের কাছে ত্রাণের দাবি জানান।

এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো: নায়েব আলী জানান, জেলার জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে ত্রাণযোগ্য সকলকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।

পানি বৃদ্ধির বিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে এবং এই বন্যা ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন