সিলেটে ঢুকছে ভারতীয় চোরাই মোবাইল, তৎপর গোয়েন্দারা

  03-08-2020 04:35PM


পিএনএস ডেস্ক: ভারতে চোরাই হওয়া মোবাইল ফোন সিলেটে এনে বিক্রি করছে চোরকারবারীরা। এক দেশ থেকে অন্য দেশে মোবাইল চলে গেলে তা আর মোবাইল ফোনের আইএমইআই (মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেনটিটি) দিয়ে শনাক্ত না হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে চোরাকারবারীরা। তাদের চক্রের রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট।

মূল হোতারা ভারতে অবস্থান করছেন। কিন্তু সিলেটের স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে ভারতে চোরাই মোবাইল বিক্রি করা হচ্ছে নগরীর বিভিন্ন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের কাছে।

অল্প পুঁজি মোবাইল চোরাচালানের ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় এতে ঝুঁকছেন সিলেটের অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী। শুধু সিলেটের ব্যবসায়ীরা নন মোবাইল চোরাচালান ব্যবসায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকজন ব্যবসায়ী জড়িত বলে সূত্র জানায়। সেই চক্রের সন্ধানে নেমেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি টিম। পূর্বে যারা ভারতীয় চোরাই মোবাইল ফোনসহ সিলেটে গ্রেফতার হয়েছিলেন তাদের নজরদারি করা হচ্ছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান।

তিনি বলেন, ভারতীয় চোরাই মোবাইল ফোনের ব্যবসা এখন সিলেটে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর চোরাই মোবাইল নিয়ে আসার নিরাপদ রুট হচ্ছে তামাবিল। এ পর্যন্ত যতগুলো চোরাই মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে সবগুলোর চালান তামাবিল রোড হয়ে সিলেটে প্রবেশ করেছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গত ৮ মাস অভিযান চালিয়ে ৬৯১টি মোবাইলসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে। ভারতীয় চোরাই মোবাইল সিলেটে আসতো এমন কল্পনা ছিল না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। তবে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানাধীন মিরাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মোনাইম রাহি ও আহমেদ সামি নামের দুজন যুবক ভারতে ২০৬টি চোরাই মোবাইলসহ কলকাতার লালবাজারে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। তাদের পুলিশ রিমান্ডে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানে জেলখেটে তারা বর্তমানে সিলেটে অবস্থান করছেন। এরমধ্যে সম্রাজ টেলিকম নামে রাহির একটি দোকান করিমউল্লাহ মার্কেটে রয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকেই তামাবিল সড়কসহ সিলেটে বৃদ্ধি করা হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার জ্যোর্তিময় সরকার (গণমাধ্যম) জানান, চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে সর্তকবস্থায় রয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার টিম মাঠে কাজ করছে। এছাড়াও মহানগর এলাকায় পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে।

এদিকে, শনিবার রাতে সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানা আওতাধীন তামাবিল সড়ক দিয়ে ভারতীয় চোরাই মোবাইল সিলেটে প্রবেশ করছে এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তামাবিল সড়কে চেকপোস্ট বসাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি দল। এসময় চোরাকারবারীরা চেকপোস্টে না থেমে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

পুরে পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে চোরাকারবারীরা সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানাধীন বাঘা ইউনিয়নের আব্দুল আহাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে চোরাকারবারীরা (ঢাকা মেট্রো-চ-১১-৫২১৩) নোহা গাড়িটি ফেলে পালিয়ে যায়। এসময় পুলিশ গাড়ি থেকেক ৫টি ল্যাগেজ ভর্তি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। ল্যাগেজ খুলে দেখা যায় সেখানে বিভিন্ন ব্রান্ডের ভারতীয় চোরাই মোবাইল ফোন রয়েছে ৩১৬টি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন গোলাপগঞ্জ থানার ওসি হারুনুর রশীদ চৌধুরী। তিনি জানান, একটি নোহার ভেতর থেকে ৩১৬টি বিভিন্ন ব্রান্ডের মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। এগুলো ভারতে চুরি হওয়া মোবাইল ফোন। এরমধ্যে কয়েকটি মোবাইল রয়েছে বক্সসহ এবং অবশিষ্ট মোবাইল ফোন বক্স ছাড়া। উদ্ধারকৃত মোবাইলের মূল্য প্রায় ৭০-৮০ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর মহানগর পুলিশের ভূমি শাখায় কর্মরত এএসআই জাহাঙ্গীর হোসেন আটক করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাজিটুলা এলাকার মক্তবগলীর ৪৪ নম্বর বাসার পঞ্চম তলা থেকে ফারুক মিয়াকে আটক করার পর ওই বাসা থেকে ভারতীয় বিভিন্ন ব্রান্ডের ২৭৯টি ভারতীয় চোরাই মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

গত ২৬ জুলাই র্যাাব-৯ একটি দল সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানাধীন মুরাদপুর এলাকা থেকে ৭১টি ভারতীয় চোরাই মোবাইল ফোন নগরের উপশহর এলাকার বাসিন্দা বুখাইর আহমদ ও পলাশ আহমদকে গ্রেফতার করে। উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোনে বাজার মূল্য সাড়ে ১৮ লাখ টাকা বলে জানায় র্যাভব।

অপরদিকে শাহপরাণ থানা পুলিশ চলতি বছরের ২২জুন ভারত থেকে চোরাই পথে নিয়ে আসা ২৫টি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোনসহ জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। উদ্ধারকৃত মোবাইল শুল্ক ফাঁকি দেয়ার জন্য চোরাচালানের মাধ্যমে সিলেটে নিয়ে আসে জাকির।

সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফুর রহমান (গণমাধ্যম) জানান, সিলেটের সীমান্ত এলাকায় পুলিশের নজরদারি রয়েছে। চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড যাতে না ঘটে সেকে লক্ষ্য রেখে পুলিশ বিজিবির সাথে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন