ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাওলানা মনিরুজ্জামানের জানাজায় মানুষের ঢল

  10-08-2020 07:38PM

পিএনএস ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরো একটি বৃহৎ জানাযার নামাজ হয়েছে রোববার। পথে পথে পুলিশের বাধা পেরিয়ে জেলার শীর্ষ আলেম ভাদুঘর জামিয়া সিরাজিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শায়খুল হাদিস মনিরুজ্জামান সিরাজীর নামাজে জানাজায় বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন। জানাজার নামাজের কারণে ওইদিন বিকাল ৪টা থেকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ৩ ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এতে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। রোববার দুপুর ১২টায় শহরের ভাদুঘরে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বর্ষীয়ান এই আলেম। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বজন শ্রদ্ধেয় বড় হুজুর হযরত মাওলানা সিরাজুল ইসলামের জ্যেষ্ঠ সন্তান মনিরুজ্জামান। পিতার মতোই সকলের প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন তিনি। পিতার মৃত্যুর পর তিনিই সবার কাছে বড় হুজুর হিসেবে বিবেচিত হন।

করোনা পরিস্থিতির কারনে সীমিত লোকের অংশগ্রহণে তার নামাজে জানাজা সম্পন্ন করতে প্রশাসন তৎপর হলেও দুপুরের পর থেকে হাজার হাজার মানুষ জানাজার নামাজের উদ্দেশে রওনা হন। বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহনে আসতে থাকেন দূরদূরান্ত থেকে। বিভিন্নস্থানে পুলিশ বাধাও দেয় তাদের। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে বিশিষ্ট আলেমরা জানাযায় অংশ নিতে আসেন। বিকেল ছয়টার দিকে মনিরুজ্জামান সিরাজীর নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। তার মৃত্যুর পর প্রথমে শহরের নিয়াজ মুহম্মদ স্টেডিয়াম এবং পরে জেলা ঈদগাহ মাঠে বাদ আছর নামাজে জানাজা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়।

জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান এবং জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার মরদেহ দেখতে গিয়ে জানাজার বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। জানাজার নামাজ সীমিত পরিসরে করার অনুরোধ জানান তারা। এরপর ওই দুইস্থান বাদ দিয়ে ভাদুঘরে মনিরুজ্জামান সিরাজীর নিজের মাদ্রাসায় জানাজা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ৩ তলা ওই মাদ্রাসা ভবন এবং এর ছাদ ছাড়িয়ে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ভাদুঘর ফাটাপুকুর পাড় থেকে বিয়াল্লিশ্বর পর্যন্ত দেড়-দু-কিলোমিটার অংশে জানাজার নামাজ বিস্তৃত হয়। জানাজায় ২৫/৩০ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভাদুঘর গ্রামের বাসিন্দা হাফেজ মাওলানা আবদুল আজিজের মতে জানাযায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। তবে জেলা পুলিশ সুত্র জানিয়েছে, জানাযায় ৫/৬ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে। তবে জেলার আলেমরা বলছেন করোনা পরিস্থিতি না হলে জেলার শীর্ষ এই আলেমের জানাযায় অংশগ্রহনকারীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যেত।

পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, জেলার আলেম সমাজকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জানাজার নামাজ পড়ানোর জন্য তারা অনুরোধ জানান। এলক্ষ্যে পর্যপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

মনিরুজ্জামান সিরাজী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমীর ছিলেন। তার মৃত্যুতে সবমহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, জেলা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষ মরহুমের বাস ভবনে ছুটে যান। ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ওয়াজ মাহফিল ও পবিত্র কোরআন তফসিরে বয়ান করতেন মনিরুজ্জামান। বর্নাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন তিনি।

শহরের নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এইচএসসি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ থেকে বিএ পাশ করার পর ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড সম্পন্ন করেন মনিরুজ্জামান। এরপর জেলার নবীনগরের বিদ্যাকুট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। ৮ বছর ইংরেজি পড়ান তিনি ওই বিদ্যালয়ে। পরে কুমিল্লার ধামতী কামিল মাদ্রাসায় শায়খুল হাদিসের শিক্ষক হিসেবে যোগদেন। সেখান থেকেই কামিল পাশ করেন। এরআগে ভারতের দেওবন্দে তাফসিরে কোরআন বিষয়ে পড়াশুনা করেন। দেওবন্দে বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র ছিলেন তিনি। স্পষ্টবাদীতা এবং ভয়হীনভাবে সত্য উচ্চারণ ছিলো তার জীবনের এক বিশেষ গুন।

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে যান। বাবার কবরের পাশে শায়িত করা হয় তাকে। মরহুমের নাতী হাফেজ খালেদ সাইফুল্লাহ সিরাজি জানাজার নামাজ পড়ান।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন