গৃহকর্মীকে অমানুষিক নির্যাতন, কাজে ভুল হলেই দেওয়া হতো গরম খুন্তির ছ্যাঁকা

  13-08-2020 12:10AM

পিএনএস ডেস্ক : বরিশাল নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দা রিফুজি কলোনি এলাকার একটি ফ্ল্যাট বাসায় খুন্তির ছ্যাঁকা ও লোহার রড দিয়ে আশা (১৩) নামে এক শিশু গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বুধবার শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে এক নারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এর আগে নগরীর ১৬নং ওয়ার্ডেন রিফুজি কলোনি এলাকার বাসিন্দা বুলবুল চৌধুরীর বাসা থেকে নির্যাতনের শিকার ওই শিশু গৃহকর্মীকে উদ্ধার করে পুলিশের অভিযানে শিশু উদ্ধার করে পুলিশ। মামলার আসামি বুলবুল চৌধুরী পালতক রয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক বছর আগে ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের বাসিন্দা ডেভিড বিশ্বাস ও মেরী বিশ্বাসের মেয়ে আশা বিশ্বাসকে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়ে আসেন রিফুজি কলোনি এলাকার বাসিন্দা বুলবুল চৌধুরী। কাজে আনার পর থেকেই গৃহকর্তী আশার ওপরে অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে।

কাজ শেষ হওয়ার আগেই নতুন কাজ ধরিয়ে দেওয়া, কাজে একটু দেরি হলেই গরম খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছ্যাঁকা দেওয়া, কথায় কথায় লোহার রড ও গরম খুন্তি দিয়ে পেটানো হতো ওই শিশুটিকে। উদ্ধারের পরে তাকে যে নির্যাতন করা হতো তার চিহ্ন তার শরীরে দেখা যায়। শিশুটির হাত-পাসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পোড়া ও ক্ষত চিহ্ন।

নির্যাতনের শিকার আশা অভিযোগ করে জানায়, ছোট থেকেই বুলবুল চৌধুরীর ও বকুল চৌধুরীর পিসিদের বাসায় কাজে আসি। ওই বাড়িতে যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই তারা আমাকে মারধর শুরু করে। প্রতিদিন দুইবার মারধর করা তাদের এক প্রকার রুটিন হয়েছিল।

এছাড়া ছোট-খাটো ভুল ত্রুটি হলেই লোহার রড ও খুন্তি গরম করে মারধর করত। চিৎকার করলে গলা টিপে ধরতেন। বাহিরে বের হতে দিতেন না। মারধরের কারণে ঘাড়ে, হাতে, পায়ে, পিঠে রক্তাক্ত ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। তারা আঘাতের স্থান দেখে দেখে পুনরায় মারধর করত। যেসব স্থানে ঘাঁ হয়ে গেছে সেখান থেকে পুঁজ বের হতো। তাতে যন্ত্রণার কথা বললে, লবণ-মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে প্রলেপ দিত। তাতে আরো যন্ত্রণা বাড়ত। নির্যাতনের ভয়াবহতায় কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও চালায়।

আশা বিশ্বাসের বাবা ডেভিড বিশ্বাস জানান, ইচ্ছা থাকলেও মেয়েকে তাদের (বকুল ও বুলবুল বিশ্বাস) কাছ থেকে নিতে পারি না। তাদের ছেলে এমপি-মন্ত্রীর ক্ষমতা রাখেন। মারধরের কথা শুনে আমি একবার নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সায়মন কুন্তল বিশ্বাস আমাকে হুমকি দেয়, আমার সঙ্গে ‘খারাপ কিছু’ করে ফেলবেন। তারপর মেয়ের আশা ছেড়ে দিয়েছি। ডেভিড বিশ্বাস আরো বলেন, সায়মন কুন্তল বিশ্বাসের ভয়ে শুধু আমি না তার প্রতিবেশী কেউই কথা বলতে পারেন না।

কোতয়ালী মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে নির্যাতনের শিকার ওই শিশুকে উদ্ধার করা হয়। তাকে যে অমানুষিক নির্যাতন করা হতো তা শিশুটি শরীরের ক্ষত চিহ্ন দেখলেই বোঝা যায়।

এ ঘটনায় যাতে কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ না করি সে জন্য নির্যাতনকারীদের পক্ষে সায়মন কুন্তল বিশ্বাস নামক একজন নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং চাপ সৃষ্টি করেন।

এছাড়া এ ঘটনায় বুলবুল বিশ্বাসকে আসামি করে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযানের সময়ে পালিয়ে যাওয়া ওই দুই নারীকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করছে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন