অটিস্টিক শিশুরাও স্কুলে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে

  01-10-2020 03:01PM


পিএনএস ডেস্ক: শিশুটির নাম সোহান। স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়েছে আরও আগেই। কিন্তু কথা বলতে না পারা এবং কানে শুনতে না পারার কারণে তার মা সোমা আক্তার স্কুলে ভর্তি করেননি। সোহান একজন অটিস্টিক শিশু। বিদ্যালয়ে যাওয়ার পর সে এখন সংখ্যা গণণা করতে পারে, চিত্রাঙ্কন করতে পারে। সে তার নিজের সামর্থ্য প্রকাশ করতে পারে।

সোহানের মা সোমা আক্তার বলেন, বাক এবং বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে বয়স হওয়ার পরও বিদ্যালয়ে ভর্তি করাননি। পরে স্থানীয় টেংরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা খবর পেয়ে তাকে এ বছরের শুরুতেই বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। অন্যান্য শিশুর পাশাপাশি এরপর থেকে তারও বুদ্ধির বিকাশ ঘটতে শুরু করেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওমর ফারুক বলেন, বাবা-মা’র পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যত্নবান হওয়ায় শিশু সোহান এখন সংখ্যা গণনা ও চিত্রাঙ্কন শিখেছে।

তালতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল্লাহ বলেন, শিশু আল আমীনকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করার পর শ্রেণীকক্ষে চুপচাপ বসে থাকত। মুখ দিয়ে লালা পড়ত। বিদ্যালয়ের শিশুদের সাথে মারমুখী আচরণ করত।

দাদী রহিমা খাতুন বলেন, বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে নিজের সমস্যা বলতে না পারা, খেলাধুলায় অংশ না নেয়াসহ তার মধ্যে সব বিষয়ে নেতিবাচক অচরণ ছিল। পরে বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত হলে সে সকলের সাথে ভাল ব্যবহার করতে শুরু করে। অন্যান্য শিশুদের সাথে তার মারমুখী আচরণ বন্ধ হয়ে যায়। শিশুদের সাথে খেলায় অংশগ্রহণ করে। এখন সে তার নিজের সমস্যার কথাও বলতে পারে।

এমন শিশুদের বিদ্যালয় গমন নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে “হাসান্স ইনক্লুশন এডুকেশন”। এ উদ্যোগে থাকবে শিশুর কল্পনা শক্তির উন্নয়ন করা, শিশুর স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে শেখানো, আচরণে সক্ষম করে গড়ে তোলাসহ স্বাভাবিক আচরণ করতে সামর্থ্যবান করে তোলা।

শ্রীপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান উপজেলার বিভিন্ন শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অটিস্টিক শিশুদের নিজের যোগ্যতানুযায়ী সামর্থ্যবান করতে বিদ্যালয়মুখী করে গড়ে তোলছেন।

শ্রীপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, অভিভাবকেরা অটিস্টিক শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে অনেক ক্ষেত্রেই অনীহা প্রকাশ করেন। অটিস্টিক শিশুদের তার সমবয়সীদের সাথে মিশে থাকার সুযোগ দিলে তারা নিজেদের বিকশিত করতে পারে। তাদের যোগ্যতা ও সামর্থ্যের প্রকাশ ঘটাতে পারে। আর তাদেরকে স্বাভাবিক আচরনে ফিরিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগের বিকল্প নেই। তাই একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম একটি অন্যতম প্ল্যাটফরম।

তারই ধারাবাহিকতায় “শিক্ষা হবে উম্মুক্ত” শ্লোগানটিকে সামনে রেখে ২৬ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গ্রীণ ভিউ গলফ রিসোর্টে হাসান্স ইনক্লুসন এডুকেশনের অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক শরীফুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন, জয়দেবপুর প্রাইমারী ট্রেনিং ইনস্টিউিটের (পিটআই) তত্বাবধায়ক রফিকুল ইসলাম তালুকদার, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ইউসুফ খান, শ্রীপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হাসান প্রমূখ।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন