ঘন ঘন গ্যাস বিষ্ফোরনের ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েই চলছে

  19-03-2016 12:58PM

পিএনএস (এবি সিদ্দিক) : রাজধানীতে সম্প্রতি ঘন ঘন ঘটছে গ্যাসের বিস্ফোরন। বাসাবাড়িতে এসব দুর্ঘটনায় ঘটছে প্রাণহানি। দীর্ঘদিনের পুরানো ঝুঁকিপূর্ণ লাইন আর অসর্তকতার কারণেই ঘটছে এসব দুর্ঘটনা। ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস লাইন তদাকরি প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস কোম্পানী এন্ড ডিট্রিভিউশন এনিয়ে খুব একটা মাথাও ঘামাচ্ছে না। গ্যাস সংযোগ ঠিক আছে কি-না, কোন গুলো ঝুঁকিপূর্ণ লাইন এসব দেখাশোনাও করা হচ্ছে না। অনেকের বাড়ির রান্নাঘর যেন মৃত্যুকূপ। ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতো চলছেই। এরফলেও ঘটছে দুর্ঘটনা।

রাজধানীর বনানীর একটি বাড়িতে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অগ্নিকান্ডে ঘটনা ঘটেছে, সেটার কারণ রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে। বারবার অভিযোগ দেওয়া সত্ত্বেও তিতাস গ্যাস কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গ্যাস লাইনের ওই ফুটো থেকেই আগুন লেগেছে। এর আগে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর সড়কের ভাড়া বাসায় রান্নাঘরে গ্যাসের লাইন ও চুলা বিস্ফোরণের একটি পরিবারে প্রায় সবাই চিরবিদায় নেন। এবিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। সামান্য ভুলে এত বড় ক্ষতি- এটা মেনে নেওয়া কঠিন। তিনি এটাকে অসচেতনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিতাসের ঘটনাস্থল পরিদর্শন :তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (তিতাস গ্যাস) উচ্চ পর্যায়ের দুর্ঘটনা এড়াতে তিতাসের পক্ষ থেকে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়। এগুলো হলো- এক. রান্না শেষে গ্যাসের চুলা বন্ধ রাখা। দুই. গ্যাসের চুলা বা গ্যাস পাইপলাইনের পাশে কোনো দাহ্য পদার্থ ও বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপন না করা। তিন. অকারণে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে না রাখা। চার. গ্যাস লিকেজ থাকলে আগুন জ্বালানো থেকে বিরত থাকা। পাঁচ. লাইনে লিকেজের ক্ষেত্রে রাইজারের চাবি বন্ধ করে দেওয়া। ছয়. গ্যাস লাইন লিকেজের বিষয়টি নিশ্চিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে কোম্পানির জরুরি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে (৯৫৬৩৬৬৭-৬৮) খবর দেওয়া। সাত. বাসাবাড়িতে অভ্যন্তরীণ গ্যাস লাইনে ভালো সরঞ্জাম ব্যবহার করা। আট. গ্যাসের চুলার ওপর জামা-কাপড় শুকানো বন্ধ করা। নয়. অবৈধভাবে বাসাবাড়িতে গ্যাসলাইন না নেওয়া। দশ. চুলার নবটি ঠিকমতো বন্ধ হয়েছে কি-না নিশ্চিত করা। এগারো. নিয়মিত গ্যাসের অভ্যন্তরীণ লিকেজ পরীক্ষা করে দেখা। বারো. আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস ও লিকেজ হলে তিতাস কর্তৃপক্ষকে জানানো। তেরো. প্রত্যেক পরিবারের প্রধানের উচিত গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহার কীভাবে করতে হবে, সে সম্পর্কে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা।

তিতাসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজ খান বলেন, বদ্ধ একটি ঘরে জমে থাকা গ্যাস বোমার চেয়েও ভয়ঙ্কর। গ্যাস জমে ধীরে ধীরে চাপ তৈরি করে। এরপর ওই স্থানে কোনো আগুন জ্বালানো বা শর্টসার্কিট হলে সঙ্গে সঙ্গে তা বিস্ফোরিত হতে পারে। হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছরে বাসাবাড়ি ও অফিসে গ্যাসের লাইনে বিস্ফোরণ হয়ে অন্তত ৩০ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।

২০১৪ সালের অক্টোবর বনানীর বাসায় গ্যাসের আগুনের বিস্ফোরণে প্রকৌশলী শাহানা ও কলাবাগানের ডলফিন গলিতে মেট্রোসেম গ্রুপের পরিচালক আসমতউল্লাহ মারা যান। ২০১৩ সালে মুগদার একটি বাসায় আগুনে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়। ২০১৫ সালে উত্তরার সি-ব্লকে মোতাহারের বাড়ির অগ্নিকান্ডে দেড় বছরের শিশু মারুফ মারা যায়।

২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি রামপুরার হাইস্কুল রোডের একটি ফ্ল্যাটে আগুন ধরে। ভোরে রান্নার জন্য চুলা ধরাতে দেশলাই জ্বালালে বিস্ফোরণ ঘটে রান্নাঘরে আগুন ধরে যায়। পরে তা দ্রুত অন্যান্য ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় শোবার ঘরে থাকা দুই শিশুসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য অগ্নিদগ্ধ হন। অগ্নিদগ্ধরা হলেন- গৃহকর্তা পিংকন কুমার বণিক, তার মা গীতা রানী, পিংকন কুমারের স্ত্রী পিংকি বণিক, ছেলে পিকু বণিক ও পিন্নু বণিক। দীর্ঘ চিকিৎসার পরও গীতা রানী ও পিংকনকে বাঁচানো যায়নি। পিংকন কুমার আমেরিকান দূতাবাসের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন।

২০১৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কাফরুলে গ্যাসলাইন লিকেজ হয়ে আগুন ধরে একই পরিবারের ছয় সদস্য দগ্ধ হন। ওই বাসায় অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালে রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় ভূগর্ভস্থ গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে নারী ও শিশুসহ একই পরিবারের সাতজন দগ্ধ হন।

পিএনএস/মো.সাইফুল্লাহ/মানসুর

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন