সংস্কার কমিশনের দিকে তাকিয়ে আছে ইসি

  31-01-2025 10:31AM

পিএনএস ডেস্ক: কেবল জনসংখ্যা নয়, ভৌগোলিক অবস্থা ও অবস্থান এবং সর্বশেষ জনশুনানির ভিত্তিতে নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই লক্ষ্যে বর্তমান সীমানা নির্ধারণ আইন-এর খসড়া আরও যাচাইয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ভোটার তালিকা আইনের খসড়াও পাঠানো হয়েছে কমিটিতে। তবে এসব আইন সংশোধনের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করবে নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক সুপারিশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নির্বাচন কমিশনের নানা আইনকানুনের বিষয়ে সরকারকে চিঠি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।

গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের তৃতীয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে নির্বাচন ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সব নির্বাচন কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন। এতে এনআইডি সংশোধন প্রক্রিয়া সহজীকরণ, প্রবাসীদের এনআইডি ও পোস্টাল ব্যালট, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালাসহ নানা বিষয়ে পর্যালোচনায় একাধিক কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়।

বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ভোটার তালিকা আইন পর্যালোচনা হয়েছে। এটা অধিকতর পর্যালোচনার দরকার রয়েছে। কমিটিকে এটা আরও পর্যালোচনার জন্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে সীমানা নির্ধারণ আইনও পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই আইনের দুটি বিষয় সমস্যার সৃষ্টি করছে। বর্তমানে জনসংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণ হচ্ছে। আমরা এটাকে জনসংখ্যার পাশাপাশি ভৌগোলিক অবস্থান, সর্বশেষ জনশুমারি ও ভোটার সংখ্যার সামঞ্জস্য রেখে সীমানা নির্ধারণ করতে চাই।

বর্তমানে এ আইনের ‘৮(৩)’ উপধারায় একটি ‘টাইপিং মিসটেক’ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এটি সংশোধনে সরকারের কাছে পাঠাব। এ মুহূর্তে সীমানা পুনর্নির্ধারণে ৪১ আসনের বিপরীতে ২৪৮টি আবেদন পড়েছে জানিয়েছে তিনি বলেন, সংস্কার কমিশন থেকে কী ধরনের প্রস্তাব আসে ও আমাদের কী সিদ্ধান্ত, এরপর এগুলো সমাধান করা হবে। এ মুহূর্তে এগুলো পেন্ডিং রয়েছে।

১৭২ টাকা দরে স্মার্টকার্ড কিনবে ইসি: ইসির বৈঠকে ১৭২ টাকা দরে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া |হয়েছে। এ বিষয়ে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, সেনাবাহিনী ১৭২ টাকা করে কার্ড দিতে রাজি হয়েছে। সে অনুযায়ী কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৪০৬ কোটি টাকায় যত কার্ড হয়, সেগুলো তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করবে।

এনআইডি সংশোধন প্রক্রিয়া ‘মানবিক’ করার ভাবনা: ইসি সানাউল্লাহ বলেন, এনআইডি কারেকশন সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আসছে। যার কিছু মানবিক আর কিছু আইনগতভাবে যৌক্তিক। আমরা কমিটি গঠন করেছি। সংশ্লিষ্ট কমিটি এটি রিভিউ করবে।

তিনি আরও বলেন, ১৮২ প্রতিষ্ঠান জাতীয় সার্ভার থেকে সেবা নিয়ে থাকে। সাম্প্রতিক বেশকিছু ঘটনার আলোকে মনে হয়েছে আমাদের নিরাপত্তা ফিচারগুলো আরও জোরদার করতে হবে। এটি সংশ্লিষ্ট কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।

প্রবাসীদের জন্য প্রক্সি ভোটিং ব্যবস্থার চিন্তা: নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটিং পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার পর তিনটি পদ্ধতি সামনে আছে। একটি হলো পোস্টাল ব্যালট, যদিও এটি খুব কার্যকরী নয়। দ্বিতীয়টি হলো প্রক্সি ভোটিং। এই বিধান বিভিন্ন দেশে আছে। তৃতীয় অপশন হচ্ছে অনলাইনে ভোটের ব্যবস্থা। কিন্তু এ ব্যবস্থাটি খুব সহজ নয়। আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রতিনিধির সঙ্গে এ ব্যাপারে আলাপ করেছি। তারাও এর প্রয়োগ সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রথম দুটি উপায়কে ডেভেলপ করব এবং অনলাইন ভোটিং নিয়ে আরও বেশি পর্যালোচনা করব।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ। তাই এতে কেউ সাড়া দেন না বললেই চলে। প্রক্সি ভোটিংয়ের ধারণাটি নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে।

পাসপোর্ট ও জন্মনিবন্ধন হলেই মিলবে প্রবাসীদের এনআইডি: ইসি সানাউল্লাহ বলেন, দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটার করছি। আলোচনা করেছি এটিকে কীভাবে আরও সহজ করা যায়। আমরা অনেক তথ্য চেয়ে থাকি; তবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি পাসপোর্ট ও জন্মনিবন্ধনের ওপর ভিত্তি করে বাকিগুলো ঐচ্ছিক করা যায় কি না।

সংস্কার কমিশনের সঙ্গে মতপার্থক্য নেই: সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে ইসির সীমানা নির্ধারণ ও ভোটার তালিকা আইন সংশোধন প্রস্তাব কোনো ধরনের জটিলতা তৈরি করবে না বলে মনে করে ইসি। এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, এখানে কোনো ডুপ্লিকেশন অব এফার্ট রয়েছে বলে মনে হয় না। নিজস্ব এক্সারসাইজ আমরা করছি। আমাদের এখান থেকেও কোনো ইনপুট দেওয়া হলে ‘ইট উইল বি ফারদার ইনফোর্স।’ এটার সঙ্গে কনট্রাডিকশনের সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, আমরা বিষয়গুলো বিভিন্ন কমিটিতে রিভিউয়ের জন্য দিয়েছি, যাতে আমরাও প্রস্তুত থাকতে পারি। তবে সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ পেন্ডিং রয়েছে। এটার ওপর কী সিদ্ধান্ত আসে তা আমাদের দেখতে হবে। এরপর এক্সারসাইজ শুরু করব। তবে সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর কী সিদ্ধান্ত আসে ইসিকে সে পর্যন্ত ওয়েট করতে হচ্ছে। আমরা পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে আছি। জাতির চাহিদা সংস্কার। আমরা এর বাইরে নই।

নির্বাচন কমিশনের সুপারিশ ইসির স্বাধীনতা খর্ব করবে—সিইসির ওই বক্তব্যের বিষয়ে এই কমিশনার বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের কাছে ইসি এ ব্যাপারে অবজারভেশন জানাবে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন