পিএনএস ডেস্ক: হলদে শাড়ি পরে লাখ লাখ নববধূ যেন বিচরণ করছে ভেড়ামারা উপজেলার দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সরিষার হলদে ফুলে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠের পর মাঠ। মাঠের দিকে তাকালে দিগন্তজুড়ে যেন হলুদ গালিচা বিছানো হয়েছে। চলতি মৌসুমে সরিষা চাষের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা এবারো ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষা চাষ হয়েছে এবার। কম খরচে অধিক লাভ, তাই সরিষা চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মা নদী জেগে ওঠা চরের দিকে তাকালে মনে হয় ফসলের মাঠ যেন সেজেছে গায়ে হলুদের সাজে। মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের হলুদ রাজার দেশে মৌমাছির মধু সংগ্রহের গুঞ্জনে মুখরিত ফসলের মাঠ। সরিষার ফুলে বাতাসের দোলায় দোল খাচ্ছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন।
সরিষা চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। সরিষা চাষে সময় লাগে কম, খরচও কম, লাভ বেশি হওয়ায় সরিষা উৎপাদনের আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। এতে কৃষকরা লাভবানের পাশাপাশি দেশে তেলের ঘাটতি মিটানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৫৫৮ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে সরিষা চাষ হয়েছিল ৪৩০হেক্টর জমিতে। যা গতবারের চেয়ে ১২৮ হেক্টর বেশি। প্রতিবছর সরিষা চাষ ক্রমাগতভাবে বাড়ছে।
চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে কৃষি প্রণোদনার আওতায় সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে এক কেজি করে ১২শ’ কৃষক উন্নত জাতের সরিষার বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। যা গত বছর ছিলো ১১২০ জন।
কৃষি সংশ্লিষ্টদের মতে, পদ্মা নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের পলি মিশ্রিত জমি সরিষা চাষের উপযোগী। সেচ, সার ও অন্যান্য খরচ কম হওয়ায় সরিষা চাষে লাভ হয় বেশি। তাছাড়া সরিষার তেল সয়াবিন তেলের চেয়ে অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন।
কৃষক মোজাফ্ফর জানান, আমন কাটা-মাড়াইয়ের পর ৩-৪ মাস পর্যন্ত জমি পতিত থাকে। এই সময়ে পতিত জমিতে বাড়তি লাভের আশায় সরিষা চাষ করেন তারা। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরো আবাদ করা যায়। এতে অল্প সময়ে একই জমিতে দুইটি ফসলের চাষে লাভবান হওয়া যায়। জমিতে সরিষা রোপণ করা থেকে পরিপক্ব হতে সময় লাগে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস। প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে সব মিলিয়ে খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে সরিষা উৎপাদন হয় ৫-৬ মণ। সরিষার দামও ভালো পাওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা সুলতানা বলেন, উপজেলার বেশিরভাগ জমিতে কৃষকরা দুইটি ফসল উৎপাদন করে থাকেন; কিন্তু সেই জমিতে সরিষা চাষ করলে ওই জমিতে তিনটি ফসল উৎপাদন করা যায়। এতে একদিকে যেমন কৃষকরা লাভবান হবেন, অপরদিকে পুষ্টিকর ভোজ্য তেলের চাহিদাও মিটবে। তাই তারা সরিষা চাষ করতে কৃষকদের বিনামূল্য সরিষার বীজ ও সার দিয়ে উৎসাহিত করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ভোজ্য তেল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের দেশের চাহিদা অনুযায়ী যেহেতু তেল উৎপাদন কম হয়। তাই আমরা একটা লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছি।
আমরা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তৈলাক্ত ফসলের ৫০ ভাগ আমাদের দেশ থেকে উৎপাদন করতে চাই। এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কৃষকদের সরিষা চাষ করতে প্রণোদনা দিচ্ছি। কৃষকদের লাভের জন্য দুই ফসলি থেকে তিন ফসলি জমি তৈরি করতে উৎসাহিত করছি।
পিএনএস/এমএইউ
হলুদ ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন
24-12-2023 10:19AM