নিজস্ব প্রতিবেদক: সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সোনা মুখের রাঙা হাসি জুমের ফসলের। জুম পাহাড়ে থোকাই থোকাই ঝুলছে ধানের পাশাপাশি হরেক রকম মিশ্র ফসল। তাই মুগ্ধ হয়েছে কৃষাণ-কৃষাণীরা। এর মধ্যে পরিপক্ক হয়েছে ধান ও মিশ্র ফসল। তাই ফসল ঘরে তুলতে উৎফুল্ল মনে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। পার্বত্যাঞ্চলের পাহাড়জুড়ে দেখা মিলছে এখন এমন চিত্র। জুম তোলার ধুমে পাহাড়ে গানের তালে মেতেছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা।
গান গেয়ে ধান তোলা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সাংস্কৃতির একটা অংশ বা ঐতিহ্য। তাই এখন পাহাড়ের মাচাং ঘরে চলছে জুমের গানের আসর। গানের সুরে সুরে মাতোয়ারা পাহাড়।
কৃষি বিভাগ বলছে, পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জীবিকার প্রধান উৎস জুম চাষ। বাংলাদেশের মধ্যে শুধু তিন পার্বত্য জেলা-রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা পাহাড়ি ঢালে বিশেষ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে বেশ পারদর্শী।
জুম চাষি সোনামনি চাকমা বলেন, জুমিয়াদের চোখে মুখে এখন আনন্দের উচ্ছ্বাস। সবে মাত্র শুরু হয়েছে জুম কাটার উৎসব। সবাই উৎফুল্ল মনে জুমের পাকা ধান সংগ্রহ করছে। এবার জুম পাহাড়ে ধান ছাড়াও উৎপাদন হয়েছে-মরিচ, হলুদ, আদা, মারফা, বেগুন, ধানি মরিচ, ঢেঁড়স, কাকরোল, কুমড়াসহ নানা জাতের মিশ্র ফসল।
স্থানীয় জুমচাষি তুশি চাকমা জানান, জুমে বীজ বপনের ৫ মাস পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের পর ফসল পাওয়া যায়। জুমে শুধু ধান নয়, চাষ হয় মিশ্র ফসলও। যেমন-ধান, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা, তুলা, তিল, আদা, হলুদ, মরিচ, বেগুন, জুরো আলু, সাবারাং, মারেশ দাদি (ডাটা), পোজি, আমিলে, ওলকচু, সাম্মো কচু, ঢেঁড়স, কলা, পেঁপে ও যবসহ প্রায় ৩৩টি জাতের ফসল উৎপাদন করা হয়।
রাঙামাটি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বিশ্বাস বলেন, বছর শেষে অর্থাৎ পৌষ-মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালে গাছ-পালা- বন-জঙ্গল কেটে আগুনে পুড়িয়ে পরিষ্কার করার পর জুম চাষে উপযোগী করে তোলা হয় জায়গাটি। এরপর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পোড়া জুমের মাটিতে গর্ত খুঁড়ে এক সঙ্গে বিভিন্ন রকম বীজ বপন করে থাকে চাষিরা। ধান পাকে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে। সব শেষে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে তোলা হয় তুলা, তিল ও যব। তবে একটি স্থানে একবারই জুম চাষ করা হয়। পরের বছর জুমচাষ করার জন্য নতুন পাহাড় খুঁজে নেন জুম চাষিরা। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের মাঠ পর্যায়ে পরার্মশ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়।
রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কৃষি বিভাগের অধীনে চলতি বছর শুধু রাঙামাটি জেলায় জুম চাষ হয়েছে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। প্রবল খড়া। অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি নানা প্রতিকূলতার জন্য চাষিরা ঠিকভাবে চাষাবাদ করতে পারেনি। তবে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে ফসল তোলার কাজ ঠিকভাবে চলছে।
পিএনএস/এসএস
সবুজ পাহাড়ে সোনা মুখে রাঙা হাসি
11-10-2023 04:39PM