পিএনএস ডেস্ক: জামালপুর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলের নাও ভাঙ্গা মৌজার (পাথালিয়া-স্বন্ধীক্লাব) এলাকার পতিত জমিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে তুলার চাষ। সেইসাথে তুুলা চাষে বাম্পার ফলনে খুশি চাষিরাও। আর বাগানে ফুটন্ত তুলা যেন আকাশ থেকে নেমে আসা তারকারাশির মতো ঝিলিক দিচ্ছে। উৎসুক জনতা দূর-দূরান্ত থেকে আসছে তুলার বাগান দেখতে।
জামালপুর তুলা উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এ চরাঞ্চলে ২৯০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষ হয়েছিল। চলতি বছর তা ১০ হেক্টর বেড়ে ৩০০ হেক্টরে উন্নীত হয়েছে।
সরেজমিনে কথা হয় স্থানীয় তুলা চাষী আসাদুল্লাহ-এর সাথে তিনি বলেন, ‘আগে এই সব জমি পতিত পড়ে থাকতো। কোন ফসল হতো না। আমাদের এলাকার একজন প্রথম অল্প কিছু জমিতে তুলা চাষ করে সফল হয়। তার সফলতা দেখে আমরাও আস্তে আস্তে তুলা চাষ শুরু করেছি। তবে, তুলার চাহিদা অনুযায়ী দাম পাচ্ছি না।’
এছাড়াও তুলা শ্রমিক সখিনা বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় দেখছি এইলা জমি বাছরা (পতিত) পইরা থাকতো। এহন সারা এলাকা তুলার খেত। দেখতেও সুন্দর লাগে। আমরা মেয়ে মানুষ (নারী শ্রমিক) আমরাই কাম করি তুইলে তুইলি (তুলা উঠান) টাকা পাই।’
তুলা চাষি আ: সালাম বলেন, ‘তুলা চাষ একটি লাভজনক ফসল। যে জমিতে অন্য কোনো ফসল হয় নাই ওই সব পতিত জমিতে তুলার আবাদ হওয়ায় আমরা খুশি। ফলনও ভালো হইছে। দাম খুব ভালো না পেলেও নগদ টাকায় বিক্রি হয়। তাই আমরা সবাই খুশি।’
জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে সাত থেকে ১০ মণ পর্যন্ত তুলা উৎপাদন হয়। দামও চার থেকে পাঁচ হাজার মণ। পতিত জমিতে স্বল্প খরচে তুলা চাষ লাভজনক হওয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে পতিত জমিতে দিন দিন বাড়ছে তুলার চাষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশে তুলার যে পরিমান চাহিদা রয়েছে। তার ৯৪ থেকে ৯৫ শতাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। মাত্র চার থেকে ছয় শতাংশ তুলা দেশে উৎপাদন হয়।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী পরিচালক আব্দুল গণি জানান, ‘কৃষি নির্ভর জেলা হলেও জামালপুর জেলার এক মাত্র সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চল নাও ভাঙ্গা মৌজার পাথালিয়া ও সন্ধিক্লাব এলাকাতেই কাঁপাস ও হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ হচ্ছে। এই অঞ্চলের উৎপাদিত তুলা দেশের তুলার চাহিদায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’
জামালপুর জেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা আরো জানান, ‘ব্রহ্মপুত্র নদের পতিত জমিতে তুলা চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে সরকার তুলা চাষিদের প্রয়োজনীয় ঋণ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা প্রদান করে যাচ্ছে। যে কারণে গত বছরের চেয়ে এ বছর তুলা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে।’
তুলা চাষিরা জানান, ‘শ্রমিক দিয়ে তুলা উঠানোয় আমাদের অনেক বেশি খরচ হচ্ছে। এটি খুব সহজ ও হালকা কাজ হওয়ায় নারী শ্রমিক সহজেই করতে পারেন। এছাড়া পুরুষ শ্রমিক দিয়ে তুলা উঠানো সম্ভব হয় না।’
এর কারণ হিসেবে তারা বলেন, ‘গাছ থেকে একটা একটা করে তুলা উঠানো হয়। ফলে কাজ আর মজুরি অনুযায়ী পুরুষদের পোষায় না। তাই তুলা চাষিদের দাবি সরকার যদি তুলা উঠানোর মেশিনের ব্যবস্থা করতো তাহলে চাষিরা আরো লাভবান হতো। আগ্রহও বাড়তো তুলা চাষে।’
পিএনএস/আনোয়ার
জামালপুরে তুলা চাষে বাম্পার ফলনে খুশি চাষিরা
19-03-2024 10:21AM