পিএনএস ডেস্ক: প্রান্তিক কৃষকদের কাছে ঋণ পৌঁছার সক্ষমতা দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকই তৈরি করতে পারেনি। এ কারণে ব্যাংকগুলো কৃষি খাতের ঋণের ৫০-৮০ শতাংশ এনজিওকে দিয়ে বিতরণ করা হচ্ছে। এতে বাড়তি সুদ গুনতে হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যেখানে ব্যাংক থেকে কৃষকরা ঋণ পান সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ সুদে। কিন্তু এনজিওর মাধ্যমে নেয়া ঋণের সুদহার দাঁড়াচ্ছে ২৫-৩০ শতাংশে। এনজিওগুলো ব্যাংক থেকে ৮ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে কৃষকদের মধ্যে দ্বিগুণ-তিন গুণ সুদে বিতরণ করছে। এভাবেই উচ্চ সুদের ঘানি টানতে হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকদের। এর পরেও কৃষি ঋণ আদায় হচ্ছে অন্য যেকোনো ঋণের চেয়ে বেশি। আবার খেলাপিও কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) কৃষকরা ঋণ ফেরত দিয়েছেন ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় সাড়ে ২৬ শতাংশ বেশি। আর কৃষি খাতে খেলাপি ঋণ মাত্র ৭ দশমিক ১০ শতাংশ।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বড় বড় রাঘব বোয়াল ঋণ নিয়ে ফেরত দেন না। নানা কৌশলে তারা বছরের পর বছর আটকে রাখেন। কিন্তু প্রান্তিক কৃষকরা ঋণ মেরে দেন না। বরং যথাসময়ে ফেরত দেন। আর এ কারণেই কৃষি ঋণ আদায়ের হার সন্তোষজনক। কিন্তু প্রান্তিক কৃষকদের সরাসরি ঋণ বিতরণ করার সক্ষমতা অনেক ব্যাংকই অর্জন করতে পারেনি। তারা এনজিওর মাধ্যমে এ ঋণ বিতরণ করে। আর এ জন্য বাড়তি সুদের ঘানি টানতে হচ্ছে কৃষকদের। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় বলা হয়েছে, কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কৃষি ঋণ ব্যাংকগুলো নিজস্ব উদ্যোগেই বিতরণ করতে হবে, যা আগে ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ। শত ভাগ না হলেও কমপক্ষে ৮০ শতাংশ ঋণ ব্যাংক সরাসরি বিতরণ করতে পারলে কৃষকদের সুদের ঘানি কম টানতে হতো বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এ দিকে, ঋণ বিতরণের চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ৫ মাসে কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৩.৬৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বিতরণ করা মোট কৃষি ঋণের স্থিতি ৫৪ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৪ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা বকেয়া। সার্বিকভাবে কৃষি খাতে ঋণখেলাপির হার ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় তিন হাজার ৮৭৮ কোটি।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট কাজে অর্থসরবরাহ নিশ্চিত করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য কমপক্ষে ২ শতাংশ কৃষি ঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে। যেসব ব্যাংক কৃষি ঋণ বিতরণ করবে না, তাদের জরিমানার ব্যবস্থা রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে প্রতি বছরই সাধারণ ঋণ বিতরণের পাশাপাশি বাড়ছে কৃষি ঋণ বিতরণ। এ জন্য বছরের শুরুতে লক্ষ্যও ঠিক করে দেয়া হচ্ছে। যাতে বছরের বারো মাস বিশেষ করে ফসল চাষের শুরুতে কৃষকরা সময় মতো ঋণ পান। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর কৃষি ঋণের লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের জন্য প্রণীত কৃষি ঋণ নীতিমালায় বলা হয়, ভবনের ছাদে বিভিন্ন কৃষি কাজ করা একটি নতুন ধারণা। বর্তমানে শহরাঞ্চলে যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত বাড়ির ছাদে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ফুল, ফল ও শাকসবজির যে বাগান গড়ে তোলা হয় তা ছাদবাগান হিসেবে পরিচিত।
ব্যাংকাররা বলছেন, কৃষি ঋণ বিতরণে পরিমাণের পাশাপাশি মানের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। যাতে সব ব্যাংক কৃষি ঋণ বিতরণ করে সে জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেসব বাণিজ্যিক ব্যাংকের পল্লী অঞ্চলে নিজস্ব শাখা নেই, সেসব ব্যাংক ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার বা এনজিওর মাধ্যমে বিতরণ করে সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (এমআরএ) নিবন্ধিত ক্ষদ্র ঋণ সংস্থার মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুদ নির্ধারণেও এমআরএ নির্ধারিত সুদ হারের যাতে বেশি সুদ না নিতে পারে নির্দেশনা দেয়া রয়েছে।
নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে নীতিমালা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কম সুদে কৃষকদের হাতে ঋণ পৌঁছাতে এবার ক্ষুদ্র ঋণদাতা সংস্থার (এমএফআই) ওপর বেসরকারি ব্যাংকের নির্ভরশীলতা আরো কমিয়ে আনা হচ্ছে। আর এ জন্য ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্তত ৫০ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এত দিন ছিল ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া কৃষিঋণের কত অংশ কোন খাতে দিতে হবে, তাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
পিএনএস/আনোয়ার
উচ্চ সুদের ঘানি টানতে হচ্ছে কৃষকদের
26-12-2023 12:04PM