পিএনএস ডেস্ক: দেশের বৃহৎ চরাঞ্চলখ্যাত কুড়িগ্রাম জেলায় বাদাম চাষ করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। চরের কৃষকরা বাদাম চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছেন।
কুড়িগ্রামে দেশের বৃহৎ ব্রহ্মপুত্র নদের পানি শুকিয়ে ছোট-বড় অসংখ্য বালুচর জেগে উঠেছে। জেগে ওঠা ধু-ধু বালুচরে বাদামের চাষ করেছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। বাদাম গাছের সবুজ পাতায় ছেয়ে গেছে পুরো বালুচর। তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গাধর, দুধকুমারসহ জেলার ১৬টি চরাঞ্চলে পাঁচশতাধিক চরাঞ্চলে বাদাম তোলার কর্মযজ্ঞ চলছে। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ দল বেঁধে বাদাম তোলার দৃশ্য চোখে পড়বে চরগুলোতে। চরাঞ্চলের বালু মাটি বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তাই চরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের বালু মাটির জমিতে বাদাম চাষ করেছেন।
রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, এবারে বাদামের ফলন ভালো হয়েছে। ২০ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি। ইতোমধ্যে ওই জমি থেকে ৫/৭ মন বাজারে বিত্রিু করেছি। মন প্রতি ২ হাজার ৯শ টাকা। আরও অনেক বাদাম আছে, বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ হবে।
একই ইউনিয়নের আব্দুল জলিল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে নদীর ভাঙা-গড়ার খেলায় প্রতিবছরই বাড়ছে চরের সংখ্যা। প্রতিবছর বন্যায় অনেক ক্ষতি হয়। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে বন্যা-পরবর্তী সময়ে জেগে ওঠা চরে বাদাম, কাউন, তিল, তিসিসহ হরেক রকম ফসল চাষ করে ক্ষতি পুষিয়ে নেন এই অঞ্চলের কৃষকরা।
চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরা দিয়ার খাতা এলাকার মাহফুজার রহমান বলেন, বাদাম খেত থেকে আগাছা কেটে গবাদিপশুকে খাওয়ানো হয়। এ ছাড়া অন্য ফসলের মতো বাদামের জমিতে তুলনামূলক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। তবে সার-বীজ, কীটনাশকসহ শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়া কৃষকরা লাভ কম পাচ্ছেন। বীজ রোপণের আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যেই বাদাম তুলে সংগ্রহ ও হাট-বাজারে বিক্রি করা যায়।
রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চলে কৃষি কাজ ছাড়া হাতে তেমন কাজ না থাকায় বছরের অন্যান্য সময় জেলার বাইরে কাজের সন্ধানে যেতে হয় এই অঞ্চলের মানুষকে। দরিদ্র ও অসচ্ছল সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করছেন চরাঞ্চলগুলোতে। এক মন বাদাম তুলে দিলে পারিশ্রমিক হিসেবে পাঁচ কেজি বাদাম দেন।
একই ইউনিয়নের মোছা. আমেনা বেগম বলেন, বাদাম চাষ ভালো হয়েছে। সারাদিন বাদাম তুলে শুকাতে হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মুনাফা অর্জনের আশায় চরের কৃষকরা বাদাম চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। কৃষি অফিস থেকে চাষিদের সব সময় নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
জেলায় এবার প্রায় সাড়ে ৫ শতাধিক চরাঞ্চলে বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ হাজার হেক্টর। যা অর্জিত হয়েছে ৩ হাজার ১১০ হেক্টর।
এসএস
বাদাম চাষে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন চরের কৃষকদের
19-01-2025 08:05PM