পিএনএস ডেস্ক: বাংলাদেশ বর্তমানে বৈদেশিক অর্থায়নের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মুখোমুখি। যেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বৈদেশিক ঋণ প্রতিশ্রুতি এবং বিতরণ উভয়ই উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। একই সময়ে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যা দেশের আর্থিক পরিস্থিতিতে আরও চাপ তৈরি করেছে। এ পরিবর্তন দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
ইআরডি তথ্য অনুযায়ী, ঋণ প্রতিশ্রুতি ৯১.০৭ শতাংশ এবং বিতরণ ২৭.০৭ শতাংশ কমেছে গত বছরের তুলনায়। অন্যদিকে ঋণ পরিশোধ ২৮.৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের আর্থিক সম্পদগুলোর ওপর চাপ বাড়ানোর প্রতিফলন। এ ছাড়া জুলাই-নভেম্বর সময়ে উন্নয়ন অংশীদাররা মাত্র ৫২২.৬৮ মিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের ৫.৮৬ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় অনেক কম। বিতরণও কমে ২.১১ বিলিয়ন ডলার থেকে ১.৫৪ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। একই সময়ে বাংলাদেশ ১.৭১ বিলিয়ন ডলার মূলধন এবং সুদ পরিশোধ করেছে, যা গত বছরের ১.৩৩ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় বেশি।
বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, আগামী উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত করা বাংলাদেশের জন্য কঠিন হতে পারে। ঋণ প্রতিশ্রুতি এবং বিতরণের হ্রাস বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কারণে হতে পারে। ঋণ পরিশোধের খরচ বৃদ্ধির ফলে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ খাতে, যেমন অবকাঠামো এবং সামাজিক কর্মসূচিতে বিনিয়োগ সীমিত করতে হতে পারে।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, জুলাই এবং আগস্ট মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়েছে, যার ফলে বিতরণ কমেছে। অনেক বৈদেশিক ঋণ দ্বারা তহবিলপ্রাপ্ত প্রকল্প স্থগিত হয়ে গেছে, কারণ বিদেশি পরামর্শক এবং কর্মীরা অনুপস্থিত ছিলেন। সরকার বর্তমানে ঋণ প্রস্তাবগুলোর পর্যালোচনা করছে, যা নতুন ঋণ চুক্তির জন্য সাময়িকভাবে স্থগিত হয়েছে।
তারা আরও জানান, পর্যালোচনা শেষ হলে সরকার ঋণ আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করার পরিকল্পনা করছে এবং তার লক্ষ্য পূরণের জন্য চেষ্টা করবে। তাছাড়া বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)সহ উন্নয়ন অংশীদাররা বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন করতে সহায়তা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার বৈদেশিক অর্থায়নে প্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো বন্ধ করার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। ইআরডি সংস্থাগুলোকে বৈদেশিক ঋণ বরাদ্দের জন্য অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলির একটি তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
ইআরডি তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-নভেম্বর সময়ে এডিবি ছিল সর্বোচ্চ বিতরণকারী অংশীদার, তারা দিয়েছে ৩১৮ মিলিয়ন ডলার। এরপর জাপান ৩০৮ মিলিয়ন ডলার, রাশিয়া ২৪৫ মিলিয়ন ডলার, বিশ্বব্যাংক ২০৫.৪৪ মিলিয়ন ডলার এবং ভারত ৬৩.৪২ মিলিয়ন ডলার বিতরণ করেছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সতর্ক করে বলেন, যদি দেশের রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি না পায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উন্নত না হয়, তবে ঋণ পরিশোধের বাড়তি চাপ একটি অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, পদ্মা সেতু, রেল সংযোগ এবং বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো বড় প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৯.৮৮ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সাহায্য প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, যা ২০২৩ অর্থবছরের তুলনায় ৮.৯২ শতাংশ বেশি।
এসএস
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়েছে : ইআরডি
29-12-2024 08:44PM