পিএনএস ডেস্ক: দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না পাওয়ায় দেশের অধিকাংশ কারখানাই গ্যাসের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। যার ফলে দিনদিন দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমলেও চাহিদা বেড়েই চলেছে। ছয় বছরের ব্যবধানে দেশে গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে দ্বিগুণ। আবাসিক ছাড়াও বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার কারখানা, শিল্পসহ সব খাতেই বেড়েছে চাহিদা। এতে ঘাটতি মেটানোর নামে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে জোর না দিয়ে আমদানির দিকে ঝুঁকে যায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। তবে অর্থনৈতিক সংকটের এসময়ে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনে জোর দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য এক হাজার ৭০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, আমদানি কমাতে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনে জোর দিচ্ছে সরকার। তারই ফলশ্রুতিতে রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গ্যাস উত্তোলনে দুটি প্রকল্প বিষয় তোলা হবে।
এর আগে সর্বশেষ একনেক সভায় একটি প্রকল্প। তার আগের ১৯ ডিসেম্বরের একনেক সভায় তিনটি প্রকল্প এবং তারও আগের একনেকে দুইটি নতুন ও একটি সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়া আরও দুইটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। যা পর্যালোচনা করছে পরিকল্পনা কমিশন।
১২৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তিতাস ও কামতা ফিল্ডে চারটি মূল্যায়ন-কাম-উন্নয়ন কূপ খনন প্রকল্প একনেক সভায় তোলা হচ্ছে। যা বাস্তবায়ন করবে গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল)। প্রকল্পটিতে সরকার দিচ্ছে ৮৭২ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) নিজস্ব অর্থায়ন ৩৮২ কোটি টাকা। প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০২৫ হতে সেপ্টেম্বর ২০২৭ মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে।
হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ ও মেঘনা ফিল্ডে ৩-ডি সাইসমিক জরিপ প্রকল্প একনেকে তোলা হচ্ছে ৪৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জানুয়ারি ২০২৫ হতে জুন ২০২৭ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিজিএফসিএল। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৩১২ কোটি টাকা দেবে সরকার। আর সিলেট গ্যাস ফিল্ডসের নিজস্ব অর্থায়ন ১৪১ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমদানি ব্যয় কমাতে সরকার প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনে জোর দিচ্ছে। তার জন্য গ্যাস উত্তোলনের প্রকল্পকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আগামী একনেকে দুটি প্রকল্প তোলা হচ্ছে। আরও কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে সেগুলোও একনেকের জন্য সুপারিশ করা হবে।
একনেক সভায় ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩ টি প্রকল্প তোলা হচ্ছে। প্রকল্পগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম মহানগরীর উত্তর কাট্টলী ক্যাচমেন্ট প্রকল্প, মোংলা বন্দরের সুবিধাদিও সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্প, ধান, গম ও ভুট্টার উন্নততর বীজ উৎপাদন এবং উন্নয়ন প্রকল্প, বিএডিসির বিদ্যমান বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিতরণ ব্যবস্থাদির আধুনিকীকরণ এবং উন্নয়ন প্রকল্প, ফুড সেফটি টেস্টিং ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প, তিতাস ও কামতা ফিল্ডে চারটি মূল্যায়ন-কাম-উন্নয়ন কূপ খনন প্রকল্প, হবিগঞ্জ-বাখরাবাদ ও মেঘনা ফিল্ডে ৩-ডি সাইসমিক জরিপ প্রকল্প, সিলেট-১২ নম্বর কূপ খনন প্রকল্প, ঘোড়াশাল চতুর্থ ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্প, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন-চট্টগ্রাম জোন প্রকল্প, স্ট্রেংথ সার্ভিস ডেলিভারি সিস্টেমস ফর ইমপ্রুভড মাইগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবল রেইনট্রিগ্রেশন প্রকল্প, ঢাকা মহানগরী ও পূর্বাচলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দন করা প্রকল্প, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্প। এর বাইরে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য একটি প্রকল্প ও অবগতির জন্য চারটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে।
পিএনএস/রাশেদুল আলম
১৭০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্যাস উত্তোলনে আরও দুই প্রকল্প
01-02-2025 10:25PM