আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতদের রাজনীতিতে নিষিদ্ধের সুপারিশ

  16-01-2025 12:15PM

পিএনএস ডেস্ক: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতদের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এমন সুপারিশ করেছে ড. বদিউল আলম মজুমদার নেতৃত্বাধীন এ কমিশন।

নয় পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে ১৬টি ক্ষেত্রে সর্বমোট ১৫০টি সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে, যেখানে ‘না’ ভোটের বিধান চালু, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাদ, দলীয় ভোটে প্রার্থী মনোনয়ন, ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনর্নির্বাচন, এমপিদের সুবিধা কমানোর মতো প্রস্তাবও আছে। এ ছাড়া ১০ বছর অথবা তদূর্ধ্ব বয়সী নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার সুপারিশও করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।

সেইসঙ্গে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র এবং শিক্ষক রাজনীতি বন্ধেরও সুপারিশ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের বহুল আলোচিত রাতের ভোটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও প্রার্থীদের বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশও করেছে কমিশন।

প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রস্তাব জমা দেওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনপ্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্ত ত্যাগ যেন বৃথা না যায়। তাদের আত্মত্যাগের জন্যই সংস্কার করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের সংস্কারে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতায়নের সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে। জবাবদিহি এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। কেউ হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিল হবে, জয়ী হলেও পদ বাতিল হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সুপারিশ প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গুম, খুন, অর্থ পাচার ও মানবতাবিরোধী অপরাধীকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলের সদস্যদের তালিকা থাকতে হবে। এখান থেকেই নেতা নির্বাচিত হবেন। সদস্যদের অনুদানে দল চলবে। তারাই গোপন ভোটে দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র এবং শিক্ষক রাজনীতি বন্ধেরও সুপারিশ করা হয়েছে।


গত তিন বিতর্কিত নির্বাচনে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে জানিয়ে কমিশনপ্রধান বলেন, বিশেষ করে রাতের ভোটখ্যাত ২০১৮ সালের নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত নির্বাচন কমিশন, আমলা, পুলিশ, প্রার্থীসহ সবার বিচারের সুপারিশ করা হয়েছে। বিচারের জন্য কমিশন গঠনের প্রস্তাব রয়েছে।

কেউ যেন দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন, সে সুপারিশও করেছে সংস্কার কমিশন। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কেউ দুবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি সরকারের আর কোনো পদের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না। রাষ্ট্রপতিও হতে পারবেন না।

দুই মেয়াদের প্রধানমন্ত্রিত্ব সীমাবদ্ধের নিয়ম সংস্কারের পর থেকে কার্যকর হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় সরকার ঠিক করবে। এ ছাড়া উচ্চকক্ষের ৫০ শতাংশ আসন নির্দলীয় ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষণের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে তারা রাজনৈতিক দলের মনোনীত হবেন।

এদিকে সংবিধান সংস্কার কমিশন সংসদে ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার সুপারিশ করলেও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ঘূর্ণায়মান পদ্ধতির সুপারিশ করেছে। বদিউল আলম বলেন, এ পদ্ধতিতে মোট আসন হবে ৪০০। এর ২৫ শতাংশ প্রত্যেক নির্বাচনে পর্যায়ক্রমে নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। যেখানে শুধু নারী প্রার্থীরা অংশ নেবেন। ফলে নারী এমপিরও নির্দিষ্ট আসন থাকবে। রাষ্ট্রপতি হবেন নির্দলীয়। তিনি এমপি এবং স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধির ভোটে নির্বাচিত হবেন। এমপিদের সুযোগ-সুবিধা কমানো এবং সংসদীয় এলাকায় জমিদারি প্রতিষ্ঠার কুপ্রথা বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে।

তিনি জানান, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের প্রস্তাব করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। এ কাউন্সিল অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়ন দেবে। নির্বাচন কমিশন ভোটের পর স্বীকৃতি দেবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কি না। তারপর গেজেট হবে। কেউ সংক্ষুব্ধ হলে কাউন্সিলে আপিল করতে পারবেন।

বদিউল আলম আরও জানান, স্থায়ী স্থানীয় সরকার কমিশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। জনমত জরিপের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়েছে। মতামত দেওয়া ৪৬ হাজার নাগরিকের ৯০ শতাংশ আগে স্থানীয় নির্বাচন চেয়েছেন। স্থানীয় সরকারে নারী প্রতিনিধিত্ব ঘূর্ণায়মান পদ্ধতির সুপারিশ করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত হলে চাকরি ছাড়বেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্বাচিত জেলা পরিষদের সুপারিশ করা হয়েছে।

এ ছাড়া প্রতিবেদনে নির্বাচন কমিশনের আইনি, আর্থিক ও প্রশাসনিক প্রস্তাব সরকারের পরিবর্তে সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের বা সংসদীয় কমিটির কাছে উপস্থাপনের বিধান করা; কমিশনারদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে সুরাহা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগে ইসির কর্মকর্তাদের অগ্রধিকার, ইসির ব্যয় পুনর্নির্ধারণ, নির্বাচন কমিশনের জনবল নিয়োগে আলাদা সার্ভিস কমিশন গঠন, ঋণ বিলখেলাপিদের প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা, ফেরারি আসামি হিসেবে আদালত ঘোষিত ব্যক্তিকে প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা, নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে বিচারিক আদালতে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে শুরু থেকেই সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য করা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে পদত্যাগ না করে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য করা, তরুণ, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ১০ শতাংশ মনোনয়নের সুযোগ তৈরির বিধান করা, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৫০০ ভোটারের সম্মতির বিধান করা, হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে প্রার্থিতা বা নির্বাচিত হলে তা বাতিল করা, একাধিক আসনে কোনো ব্যক্তির প্রার্থী হওয়ার বিধান বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ৫ বছরের আয়কর রিটার্নের কপি জমা দেওয়ার বিধান, নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিধান বাতিলেরও সুপারিশ করা হয়েছে।

সেইসঙ্গে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের শর্ত শিথিল ও ৫ বছর পরপর দল নিবন্ধন নবায়ন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রবাসী পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা, অনলাইন ভোটিং ব্যবস্থা, প্রবাসীদের ভোটার তালিকা প্রস্তুতেরও সুপারিশ করেছে ড. বদিউল আলমের সংস্কার কমিশন।


পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন