নিজস্ব প্রতিবেদক: জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, যারা ১৯৭১ সালের পরবর্তী নিষিদ্ধ ছিল, তারা জিয়াউর রহমান উদারতার রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছিলেন। সেই দলটি যখনি সুযোগ পেয়েছে বিএনপিকে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করেছে।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। জুলাই-আগস্ট গণ-আন্দোলনে নিহত চালকদের পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসনের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেন জাতীয়তাবাদী রিকশা ভ্যান অটো চালক দল।
ছাত্রশিবিরের মধুর ক্যান্টিনের সংবাদ সম্মেলনের ছাত্রদলকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির বলে- ছাত্রদলের মধ্যে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের প্রতিচ্ছবি দেখছি। কে কখন নিষিদ্ধ হয় আমরা জানি না। এখন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ কিনা আমরা জানি না। ছাত্রশিবিরকেও আমরা নিষিদ্ধ হতে দেখেছি একসময়।
রিজভী আরও বলেন, আমরা এটাও জানি, ছাত্রশিবিরের এখনকার অনেক নেতা ছাত্রলীগের মধ্যে অবস্থান করে অনেক পদ-পদবিও পেয়েছেন। অনেকেই ছাত্র শিবিরকে বলে গুপ্ত ছাত্রলীগ, এর উত্তর কি করে দিবেন? এগুলোর অনেক প্রমাণ, অনেক তালিকা, অনেক নাম আমাদের কাছে আছে। অবান্তর কথা কেন আপনারা বলছেন? কীসের জন্য এ সমস্ত কথা বলে আজকে গণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে এই বিভাজন তৈরি করছেন? এই কারণে করছেন যে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে নিজেরা কিছু করা কিংবা হওয়া যায় কিনা। কিন্তু এটা হবে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, অনেকে বলছেন- বিএনপি তো কিংস পার্টি। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা থেকে এই দল গঠন করেছেন। তাহলে কি করতে হতো? জিয়াউর রহমান ক্ষমতাসীন হয়ে বাকশাল ফিরিয়ে আনতে হতো, আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনতে হতো- এছাড়া তো আর কোনও পথ দেখছি না। জিয়াউর রহমানের প্রতি একদিকে সেনাবাহিনীর সিপাহি এবং জনগণের সমর্থন ছিল। তিনি রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য ও দেশকে উন্নত করার জন্য। তাই জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আপনারা মিলেন? গণতন্ত্রের প্রথম অগ্রণী সৈনিক কেউ যদি হয়ে থাকলে সেটা জিয়াউর রহমান। স্বাধীনভাবে সংবাদপত্র পাঠ করা যদি গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত হয়, তাহলে সেই শর্তের মহানায়ক জিয়াউর রহমান।
রিজভী বলেন, জিয়াউর রহমানের উদারতার কারণে যারা একাত্তরের পরবর্তী সময়ে নিষিদ্ধ ছিলেন, তার রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছিলেন। আমরা দেখেছি এই রাজনৈতিক দলটি যখনই সুযোগ পেয়েছে বিএনপিকে পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করার চেষ্টা করেছে। এটা আমরা প্রতিনিয়ত দেখেছি।
আব্বাস আলী খান রচিত ‘জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস’ বই থেকে জানা গেছে, পাকিস্তান আমলে জামায়াত ইসলামী একবার নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান প্রণীত মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ওই সময় মওদুদী ও গোলাম আজমসহ দলটির অন্তত ৬০ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ওই বছরের অক্টোবরেই আবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
জামায়াত ইসলামী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পাকিস্তান ভাঙার জোরালো বিরোধিতা করেছিল। দলটির সদস্যরা শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর গঠনে নেতৃত্ব দেয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে ডা. আব্দুল মালিককে গভর্নর একটি প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয়। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের উদ্যোগে গঠিত এ প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রিসভায় আব্বাস আলী খানকে (পরবর্তীকালে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির) শিক্ষামন্ত্রী করা হয়।
স্বাধীনতা যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে মুজিবনগর সরকার জামায়াত ইসলামীসহ ৬টি দলকে নিষিদ্ধ করে। এর ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহারের কারণে সংবিধানের ৩৮ ধারা অনুযায়ী স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধই থেকে যায়। তখন গোলাম আজমসহ জামায়াতের কিছু নেতা পাকিস্তানে নির্বাসনে চলে যান।
রিজভী বলেন, এই দেশে যেমন ইসলামী সংস্কৃতি-কালচার, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এটাকে যেমন মুছে দেওয়া যাবে না। যেটা শেখ হাসিনা বার বার করেছেন। ইসলামী সংস্কৃতি, আল্লাহর ওপর বিশ্বাস, যেটা জিয়াউর রহমান সংবিধানে নিয়ে এসেছিলেন। শেখ হাসিনা নানাভাবে চেষ্টা করেছেন এটা মুছে ফেলার। আবার এটাও মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশের জাতীয় সংস্কৃতির নানা অঙ্গ ও বৈচিত্র্য আছে, এটাকেও মুছে ফেলা যাবে না। কেন চট্টগ্রামে বসন্ত বরণ বন্ধ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কার নির্দেশে? কেন নাটক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামে। আমাদের পার্টি হচ্ছে প্রত্যেকটি ধর্মের সবাই তার মত প্রকাশ। প্রত্যেকটি ধর্ম সম্প্রদায় তার ধর্মের মত চর্চা করবেন।
বিএনপির এই বলেন, সরকার প্রধান বললেন ছাত্ররা দল করতেই পারে। হ্যাঁ, আমরা যদি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করি তাহলে করতে পারে। কিন্তু যাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলা হচ্ছে তাদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করা উচিত।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপি নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সফু প্রমুখ।
এসএস
একটি দল সুযোগ পেলেই বিএনপিকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করে
24-02-2025 04:39PM
