পিএনএস ডেস্ক: বাংলা কথা সাহিত্যের এক আলোকবর্তিকা হুমায়ূন আহমেদ। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই নিউইয়র্কের জ্যামাইকা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর কারণ দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার বলে প্রচারিত হলেও নতুন করে উঠেছে অবহেলা ও গাফিলতির অভিযোগ। এ বিষয়ে রোববার রাতে লাইভ আলোচনায় সাংবাদিক ড. কনক সরওয়ারকে রীতিমতো বোমাফাটানো তথ্য দিয়েছেন নিউইয়র্কের বিশিষ্ট লেখক ও প্রকাশক বিশ্বজিৎ সাহা। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
প্রকাশক বিশ্বজিৎ সাহা, যিনি হুমায়ূন আহমেদের শেষ দিনগুলোতে তাঁর সঙ্গী ছিলেন। তিনি জানান, হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ ডলার পাঠানো হয়েছিল। লেখকের চিকিৎসার জন্য চ্যানেল আই, ইত্তেফাকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে অর্থ সহায়তা দেয়া হয়। চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, তাঁর ক্যান্সার চিকিৎসায় উন্নতি হচ্ছিল, তবে অপারেশনের পর প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত না করায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে।
বিশ্বজিৎ সাহার মতে, হুমায়ূন আহমেদকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার দিনই একটি পার্টির আয়োজন করা হয়, যেখানে তিনি চেয়ার থেকে পড়ে যান। শাওন তখন বিশ্বজিৎ সাহাকে ফোন করে হাসপাতালের নম্বর চাইলেও চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার সত্য ঘটনা গোপন করেন। ঘটনার একদিন পর হুমায়ূন আহমেদকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এমনকি হাসপাতালেও তার পড়ে যাওয়ার বিষয়টি লুকানো হয়। পড়ে গিয়ে তার সেলাই খুলে যায় এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তোলে। অপারেশনের পর হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন থাকলেও তাঁকে আগেভাগে ছাড়িয়ে আনা হয়, যা মারাত্মক ভুল ছিল বলে অভিযোগ করা হয়।
এছাড়া, শাওন ও অন্যপ্রকাশের মালিক মাজহারুল ইসলাম হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করেন। ছোট মেয়ে দেখা করতে এলেও তাকে অপেক্ষায় রাখা হয়। চিকিৎসার জন্য আসার পর তাকে কোনো ফোন দেয়া হয়নি, বরং তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলে শাওনের মাধ্যমেই তা করতে হতো। হাসপাতালের মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও সংক্রমণের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে, যা অবহেলারই প্রমাণ বহন করে।
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর পাওয়া জ্যামাইকা হাসপাতালের রিপোর্ট অনুযায়ী, অতিরিক্ত ব্লিডিং ও সংক্রমণের কারণে মৃত্যু হয়েছে। যদিও প্রচলিত ধারণা ছিল তিনি ক্যানসারে মারা গেছেন, তবে এই রিপোর্ট অন্য বাস্তবতা তুলে ধরে। বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, যদি এই মেডিকেল রিপোর্ট না থাকত, তাহলে তার মৃত্যু শুধুমাত্র ক্যানসারের কারণে হয়েছে বলে প্রচার করা হতো।
এ বিষয়ে ২০১২ সালের ১ আগস্ট, চট্টগ্রামের আইনজীবী ও লেখক নজরুল ইসলাম চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। এতে বলা হয়, অবহেলা ও গাফিলতির কারণে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।
মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, ক্যানসারে আক্রান্ত হুমায়ূন আহমেদকে ২০১২ সালের ১৭ জুলাই অপারেশনের পর বাসায় ফিরিয়ে নেয়া হয়, যেখানে তিনি চেয়ারে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। কিন্তু তাঁকে প্রখ্যাত বেলভিউ হাসপাতালে নেয়া না হয়ে পরদিন অখ্যাত জ্যামাইকা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, শাওন ও মাজহার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে চেয়ারে পড়ে যাওয়ার তথ্য গোপন করেন, যার ফলে চিকিৎসা যথাযথভাবে হয়নি।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয় যে, অপারেশনের পর ১২ জুলাই শাওন ও মাজহার বাসায় একটি পার্টির আয়োজন করেন, যেখানে ক্যানসার আক্রান্ত হুমায়ূন আহমেদকে মাংস ও পানীয় গ্রহণে বাধ্য করা হয়। অপারেশনের সময় শাওন ও মাজহার দুই ঘণ্টা হাসপাতালে না থেকে অজ্ঞাত স্থানে ছিলেন এবং অর্থাভাবে চিকিৎসা বিলম্বিত করার কথা প্রচার করেন, যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসার জন্য ১০,০০০ ডলারের চেক দেন।
এসএস
ক্যানসার নয়, শাওনের গাফিলতিতে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু!
11-02-2025 04:02PM
![](/static/image/upload/news/2025/02/11/c03fe7c56ce990efc06eedddde6e902a_3.jpg?w=550&h=350)