পিএনএস ডেস্ক: অনিশ্চয়তা ও ব্যাপক আলোচনার মধ্যে গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের ২৬৬টি আসনের মধ্যে ২৬৫ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্ররা ৯২টি আসনে জয় পান। নওয়াজ শরীফের মুসলিম লীগ (পিএমএলএন) পায় ৭৫টি আসন। আর বিলাওয়াল ভু্ট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪টি আসনে জয় তুলে নেয়। বাকি আসনগুলো পায় ছোট দলগুলো।
নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কোনো দল। নির্বাচন হওয়ার ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও— কোন দল সরকার গঠন করবে সেটি এখনো নিশ্চিত হয়নি।
নির্বাচন শেষ হওয়ার পরপর সরকার গঠনের জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছিল নওয়াজ শরীফের পিমএলএন। তারা বিলাওয়াল ভু্ট্টোর পিপিপির সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা শুরু করে।
তবে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পিপিপি প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টো জানান তারা সরকারে যোগ দেবেন না। এর বদলে পিপিপি বিরোধী দল হিসেবে সংসদে যাবে। তিনি বলেন, ‘সরকার গঠন করার মতো ম্যান্ডেট আমাদের নেই।’
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ইমরান খান তার দল পিটিআইকে নির্দেশ দেন— জাতীয় পরিষদে যেন বিরোধী দল হিসেবে যায় তারা।
বিলাওয়াল ও ইমরানের কথায় স্পষ্ট, তারা সরকার গঠন বা সরকারে যোগ দেওয়ার পরিবর্তে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে চায়।
সরকার গঠনে ইচ্ছুক হিসেবে বাকি রইল কেবল নওয়াজ শরিফের পিএমএলএন।
কিন্তু গতকাল শুক্রবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমে আসা নতুন এক খবরে বলা হয়, নওয়াজ শরীফের পিএমএলএনের একটি অংশ ‘সরকার গঠন’ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। ওই অংশের ভাষ্য, যেহেতু তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা কোনো ধরনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি সেহেতু তাদের সরকার গঠন করা উচিত হবে না। তাদের আশঙ্কা, যদি তারা সরকার গঠন করেনও সেটি খুবই দুর্বল সরকার হবে এবং খুব বেশিদিন টিকতে পারবে না।
পিএমএল-এনের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা খাজা সাদ রফিক দলের এই অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে শুক্রবার খাজা সাদ রফিক বলেন, ‘পিটিআই যেহেতু সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে, তাই তাদেরই উচিত পিপিপির সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করা। দেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি, তাতে এই মুহূর্তে সরকার গঠনে নেতৃত্ব দেওয়ার মানে হলো নিজের মুকুটকে কাঁটা দিয়ে সজ্জিত করা এবং আমরা মনে করি, পিএমএল-এনের এমন কোনো ইচ্ছে নেই।’
যদিও পিএমএলএন আনুষ্ঠানিকভাবে গোটা দলের পক্ষ থেকে এখনো কিছু ঘোষণা করেনি, তবে সরকার গঠনে তাদের অনেক নেতারই যে আপত্তি আছে তা পরিষ্কার।
শেষ পর্যন্ত যদি তারা সরকারে না যাওয়ার দলীয় সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে কী হবে পাকিস্তানে? ইমরান, বিলাওয়াল তো আগেই বলে দিয়েছেন, তারা সরকার গঠন করবেন না। কে তাহলে পরবর্তী সরকার গঠন করবে? তবে কি ‘গুঞ্জন‘ সত্যি হবে, সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়ে নেবে? পাকিস্তানের সর্বত্র এখন চলছে এসব আলোচনা। পাকিস্তানি টিভি চ্যানেলগুলোতে চলছে ‘উৎকণ্ঠা’র বিশ্লেষণ।
এদিকে, সরকার গঠন নিয়ে এই অশ্চিয়তার মধ্যেই শনিবার রাওয়ালপিন্ডির ডিভিশন কমিশনার লিয়াকত আলী চাট্টা এক বিস্ফোরক তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে রাওয়ালপিন্ডিতে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে এবং এতে তিনি জড়িত ছিলেন। এছাড়া এর সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রধান বিচারপতিও জড়িত আছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
নির্বাচনের পরপরই ইমরানের পিটিআই কারচুপির অভিযোগ করে আসছিল। এখন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার এমন স্বীকারোক্তিতে তাদের দাবি আরও জোরালো হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে নওয়াজ শরীফের পিএমএলএনের গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী মরিয়ম আওরেঙ্গজেব হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তান এখন গভীর সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ফলে এখন সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
তিনি বলেন, “আমি সবাইকে সম্মান জানাচ্ছি এবং অনুরোধ করছি, আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। দেশ এখন এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে যদি কোনো ধরনের বড় ক্ষতি হয় তাহলে সবাই সবকিছু হারাবেন।”
সূত্র: ডন, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, জিও টিভি
পিএনএস/এমএইউ
পাকিস্তানে সরকার গঠন করতে চায় না কোনো দলই!
18-02-2024 09:45AM