গৌতম আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

  22-11-2024 01:55PM

পিএনএস ডেস্ক: ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অত্যন্ত গোপনে ২৫০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা) ঘুষ দেওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ সংগ্রহের জন্য আদানিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ৬২ বছর বয়সি আদানির বিরুদ্ধে বুধবার নিউ ইয়র্কে এসব ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। দেশটির কৌঁসুলিরা এসব গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বিদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে হস্তান্তরের পরিকল্পনা করছেন।

যেসব অভিযোগ আদানির বিরুদ্ধে
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গৌতম আদানি এবং তার ভাইপো সাগর বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, তারা ভারতের সবচেয়ে বড় প্রকল্প তৈরির জন্য ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন। এই প্রকল্প থেকে ২০ বছরে আদানি ২০০ কোটি ডলার লাভ করতে পারবে বলে জানানো হয়েছিল। প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, গৌতম ও সাগর আদানি এবং তাদের সংস্থা আদানি গ্রিন এনার্জির সাবেক প্রধান নির্বাহী বিনীত জৈন এই দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে ৩০০ কোটি ডলার তুলেছিলেন। মূলত ঋণ নিয়ে এবং বন্ডের মাধ্যমে তারা এই অর্থ তোলেন।

আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঘুষের সাহায্যে তারা এই প্রকল্পের কাজ পেয়েছিলেন। সেই তথ্য গোপন করেছেন। এর ফলে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। অভিযোগ করা হয়েছে, আদানিরা ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগকারীদের কাছে বিশাল করে এই প্রকল্পের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন, তার ফলে তারা গত পাঁচ বছরে বহু কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, কিছু চক্রান্তকারী গৌতম আদানিকে 'নুমেরো উনো' এবং 'দ্য বিগ ম্যান' বলে ডাকতেন। সাগর আদানি তার সেলফোনে এই ঘুষের বিষয়ে খোঁজখবর রাখতেন। গতকাল সকালে এই অভিযোগের কথা ঘোষণা করা হয়। এ বিষয়ে ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবীদের নাম এখনো জানা যায়নি। গৌতম আদানি, সাগর আদানি, বিনীত জৈনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির চক্রান্ত ও অন্য অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্য পাঁচ অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ফরেন করাপ্ট প্র্যাকটিস আইন এবং মার্কিন ঘুষবিরোধী আইন অনুসারে অভিযোগ আনা হয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন, কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আদানি ভারতে আছেন বলে তাদের ধারণা। তিনি বলেছেন, 'আমাদের আর্থিক বাজারকে প্রতারিত করে তারা নিজেদের ধনী করেছে।'

ভারতের অন্যতম ধনীদের একজন আদানির ব্যাবসায়িক সাম্রাজ্য বন্দর, এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিস্তৃত। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর থেকে এই মেগা ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে অনেকটা গোপনে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সেখানকার অ্যাটর্নি পদে নিয়োগ দান করেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরেই এই অভিযোগটি দায়ের করা হয়েছে। গত সপ্তাহে আদানি ট্রাম্পকে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিনন্দন জানান। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

গ্রেপ্তারের দাবি রাহুল গান্ধীর
গৌতম আদানি ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা হওয়ার পর বৃহস্পতিবার ভারতে ঐ শিল্পগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে আদানি গোষ্ঠীর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, মার্কিন বিচার বিভাগ যে অভিযোগ এনেছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। একটি 'আইন মেনে চলা' সংস্থা হিসেবে তারা বিদ্যমান সব নিয়মকানুনের প্রতি 'কমপ্ল্যায়ান্ট' বলেও দাবি করা হয়েছে ঐ বিবৃতিতে। অন্যদিকে ভারতের পার্লামেন্টে বিরোধী দলনেতা ও কংগ্রেস এমপি রাহুল গান্ধী গতকাল দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, শিল্পপতি গৌতম আদানিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা উচিত এবং তিনি যে সব অন্যায় করেছেন তার জন্য আদানির শাস্তিও ভোগ করা দরকার। কিন্তু মুশকিল হলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই তার প্রিয় গৌতম আদানিকে আড়াল করে চলেছেন।

শেয়ারে দরপতন
মার্কিন আদালতে আদানিসহ সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হওয়ার খবর সামনে আসার পর ভারতের শেয়ার বাজারে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর বিভিন্ন শেয়ারের দরে ব্যাপক দরপতন লক্ষ্য করা গেছে। আদানি এনার্জি সলিউশনস, আদানি টোটাল গ্যাস, আদানি গ্রিন এনার্জি, আদানি পাওয়ার, আদানি এন্টারপ্রাইজেস, আদানি পোর্টস, আদানি উইলমারসহ বিভিন্ন শেয়ারের দর বাজার খোলার পরই প্রায় এক ধাক্কায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে যায়।

পিএনএস/রাশেদুল আলম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন