সাবেক মন্ত্রীর ছেলের ছাত্রলীগবিরোধী পোস্ট ঘিরে তোলপাড়

  01-08-2024 12:02PM



পিএনএস ডেস্ক: কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সাবেক ছাত্রনেতাদের মতবিনিময় সভা ডাকেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এসময় দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক সভায় এলে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা হট্টগোল শুরু করেন। এরপর তুমুল হট্টগোলের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন শেষ না করেই সভাস্থল ত্যাগ করেন ওবায়দুল কাদের।

বুধবার (৩১ জুলাই) বেলা ১১টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাককে সভাস্থলে দেখে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা চিৎকার দিয়ে ওঠেন। তারা বলেন, তিনি এখানে কেন? তার ছেলে কেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট করেছেন, সেটিও জানতে চান তারা।

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রেজুয়ান শাহরিয়ার সুমিতের দুইটি পোস্ট ফেসবুকে ঘুরছে। বর্তমানে তার ওয়ালে একটি পোস্ট এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না। তার রিমুভ করা পোস্ট। অর্থাৎ, প্রথম পোস্টে তিনি পোস্টটিতে তিনি বর্তমান ছাত্রলীগের সঙ্গে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ছাত্রলীগের তুলনা করেছেন।

পোস্টটিতে রেজুয়ান লেখেন, ‘এরা (ছাত্রলীগ) বুক ফুলিয়ে যতই “জয় বাংলা” বলে চেঁচাক, ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ২০২৪-এর আজকের এই ছাত্রলীগের কোনো ধরনের সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করি না। আজ এরা চেতনাহীন, পথভ্রষ্ট, অর্থলোভী পঙ্গপাল ছাড়া কিছুই নয়। আন্দোলনরত ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনায় না গিয়ে এই পঙ্গপাল বাহিনী লেলিয়ে দেওয়া কোনো আদর্শের রাজনীতি আমি জানি না! তবে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি বা দর্শনের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই, তা ঢের বলতে পারি। এই পঙ্গপাল পুষতে পুষতে কবে গোটা জাতিই চেতনাহীন, পথভ্রষ্ট, ও অর্থলোভী হয়ে যায়!’

পোস্টটির শেষ অংশে তিনি কবি শামসুর রাহমানের ‘পুরাণের পাখি’ কবিতারর লাইন, ‘রাজু, তুমি মেধার রশ্মি–ঝরানো চোখ মেলে তাকাও তোমার জাগরণ আমাদের প্রাণের স্পন্দনের মতোই প্রয়োজন’–জুড়ে দেন।

সুমিতের ফেসবুক প্রোফাইল ঘুরে দেখা গেছে, গত ১৫ জুলাই ঢাবি শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা হলে পরদিন রাত সাড়ে ১১টায় নিজের প্রোফাইল ছবিটি কালো করে দেন তিনি। এরপর সবশেষ মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রাত ৮টা ৫০ মিনিটে একটি পোস্ট দিয়ে পুলিশের বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তিনি।

পোস্টটিতে সুমিত লেখেন, ‘গত সপ্তাহে বাংলাদেশের রাজপথে পুলিশের বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানাই। দুইশো প্রাণ ঝরেছে। ২০০! এ সময় অনেক জাতীয় সম্পদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সংঘাত, সহিংসতার অবিলম্বে, স্বাধীন, নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। রাস্তায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের যারা সরাসরি গুলি করেছেন, তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

তিনি লেখেন, ‘হুমকি, বুলেট, সেন্সরশিপের মাধ্যমে সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায় না। আমাদের প্রকৃতপক্ষে যা প্রয়োজন তা হল, পারস্পরিক সহানুভূতি, বোঝাপড়া এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুকূল পরিবেশ যেখানে সুস্থ সংলাপ সম্ভব।’

এরপর হ্যাশট্যাগ দিয়ে ইংরেজিতে লেখেন, ‘ডু দ্য রাইট থিং’ লিখেছেন। পোস্টটির সঙ্গে তিনি আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্দেশক স্পাইক লি পরিচালিত যুগান্তকারী আমেরিকান চলচ্চিত্র ‘ডু দ্য রাইট থিং’-এর পোস্টারও যুক্ত করে দেন। ‘ডু দ্য রাইট থিং’ চলচ্চিত্রটি পুলিশি বর্বরতা এবং জাতিগত বিভাজনের ওপর নির্মিত।

‘ডু দ্য রাইট থিং’ এর ব্যাখ্যায় তিনি লেখেন, ‘ডু দ্য রাইট থিং’ অর্থ বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য যা সবচেয়ে ভালো সেটিই করা। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া নয়, যা আমার নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া, যা আমার জনপ্রিয়তাকে বাড়িয়ে দেয় বা আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়।

তিনি লেখেন, ১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রটি আজও রাজনৈতিকভাবে প্রাসঙ্গিক এবং প্রভাবশালী।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৫ জুন ২০১৮ সালে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। এর ফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে দ্বিতীয় দফায় দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারের নির্বাহী বিভাগের কাছে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জানাতে থাকেন। কিন্তু নির্বাহী বিভাগ থেকে তেমন সাড়া না পেয়ে জুলাই মাসের শুরুতে কোটা সংস্কার আন্দোলন সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ পর্যায়ে প্রবেশ করে। শুরুতে এ আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকলেও গত ১৫ জুলাই হামলার শিকার হন আন্দোলনকারীরা। তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগ–যুবলীগের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন