তোফাজ্জল হত্যার নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা, চেয়েছিলো ২ লাখ টাকা

  19-09-2024 06:20PM

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে মোবাইল চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হত্যায় নেতৃত্ব দেন ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রলীগের সাবেক উপবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের (২০১৮-১৯ সেশন) শিক্ষার্থী জালাল আহমেদ।

হলের প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের তথ্যানুযায়ী, তোফাজ্জলকে মারধরে জড়িতদের মধ্যে আরও ছিলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আব্দুস সামাদ (২০২০-২১), প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সুলতান (২০২০-২১), গণিত বিভাগের রাব্বি (২০২১-২১), উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ফিরোজ (২০২০-২১), মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের সুমন (২০২১-২২), সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ওয়াজিবুল (২০২১-২২), ফার্মেসি বিভাগের মোহাম্মদ ইয়ামুজ জামান এবং গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ (২০১৮-১৯ সেশন)।

এদিকে তোফাজ্জলকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জালাল আহমেদ ও মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের সুমনকে (২০২১-২২) আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে তাদের শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ফজলুল হক হলে মারধরের ঘটনায় জালাল ও সুমনকে আটক করে বিকেল ৪টায় শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়েছে।

এদিকে তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যার আগে ২ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানিতে তার গ্রামের বাড়িতে গেলে তোফাজ্জলের ভাবি শরিফা বেগম এমন দাবি করেন।

তিনি বলেন, ‘বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে তোফাজ্জল প্রথম একটি নম্বর থেকে কল করে জানান, ভাবি আমাকে মোবাইল চোর সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে আটকে মারধর করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তোফাজ্জলের সঙ্গে কথপোকথনের কিছুক্ষণ পর আবার নতুন একটি নম্বর দিয়ে আমাকে কল করে জানানো হয়, আপনি যদি তাকে বাঁচাতে চান তবে এখনই আমাদের বিকাশ নাম্বারে ২ লাখ টাকা পাঠান। তা না হলে আমরা তাকে মেরে ফেলবো। এরপর আমি ভয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখি। সকালে জানতে পারি আমার দেবরকে হত্যা করা হয়েছে। আমি হত্যাকাণ্ডে যারা সম্পৃক্ত তাদের বিচার দাবি করছি।’

এ বিষয়ে পাথরঘাটা থানার ওসি আল মামুন বলেন, তোফাজ্জেল মানসিক ভারসাম্যহীন এটা আমি জানি। তবে তার সঙ্গে যেটা হয়েছে এটা অমানবিক। যেসব নম্বর থেকে টাকা চাওয়া হয়েছে সেসব নাম্বার বর্তমানে বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা। পরে কয়েক দফায় মারধর করা রাত ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সন্ধ্যায় হলে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছিল। এমন সময় হঠাৎ তোফাজ্জল নামে যুবক হলে প্রবেশ করলে শিক্ষার্থীরা দুপুরে ছয়টি মোবাইল চুরির ঘটনার চোর সন্দেহে মূল ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে তাকে মারধর ও জেরা করতে থাকে। একপর্যায়ে, তাকে নিয়ে হল ক্যানটিনে খাওয়ানো হয়। এরপর এক্সটেনশন ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় বুক, পিঠ, হাত ও পায়ে ব্যাপক মারধর করা হয়।

এরপর রাত ১০টার দিকে প্রক্টোরিয়াল মোবাইল টিমের সদস্যরা এলে মারধরকারীরা তাকে তাদের হাতে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে কিছু শিক্ষার্থী ও কয়েকজন হাউস টিউটরের সহায়তায় তাকে প্রথমে শাহবাগ থানায় এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এসএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন