সম্ভাবনার দুয়ারে পথের কাঁটা যমুনা রেল সেতুর সিঙ্গেল লাইন

  15-02-2025 12:38PM

পিএনএস ডেস্ক: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর যমুনা সেতুর ৩০০ মিটার অদূরে চালু হয়েছে যমুনা রেল সেতু। বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা ১২ মিনিটে যমুনা রেল সেতু দিয়ে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী সিল্কসিটি ট্রেনটি মাত্র ৬ মিনিটে পাড়ি দেয়। ওই সময় ট্রেনের গতি ছিল ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার। সেতুতে ট্রেনের এই গতি এলেও উত্তরের মানুষের গলার কাঁটা হয়ে থাকলো ১১৪ কিলোমিটার সিঙ্গেল রেললাইন।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী থেকে যমুনা রেলসেতু পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ১৩৪ কিলোমিটার। এরমধ্যে নাটোরের আব্দুলপুর জংশন থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রেলপথ ডাবল লাইন। আর ঈশ্বরদী থেকে রেলসেতু পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার এবং রাজশাহী থেকে আব্দুলপুর পর্যন্ত ৪৩ কিলোমিটার মিলে মোট ১১৪ কিলোমিটার রেলপথ সিঙ্গেল লাইন। এই ১১৪ কিলোমিটারে ট্রেন পাসিংয়ের জন্য দাঁড়াবে। ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ ঠিকই হবে। যদিও জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত রেললাইনকে ডাবল লাইনে উন্নীত করতে রেলওয়ের একটি প্রকল্প থাকলেও কাজ চলছে না।

এদিকে নতুন সেতুকে ঘিরে উত্তরের মানুষের স্বপ্ন বেড়েছে অনেকগুণ। পণ্য পরিবহণ থেকে শুরু করে এই অঞ্চলে বাড়বে শিল্পে বিনিয়োগ, একইসঙ্গে রাজশাহী থেকে কনটেইনার ট্রেন চলবে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত। পাশাপাশি কক্সবাজার পর্যন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনের প্রত্যাশা এই অঞ্চলের মানুষের বেশ পুরোনো। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। এ পথে পশ্চিমাঞ্চলের ৬৬টি ট্রেনকে পরস্পরকে ক্রসিং করতে গতি হারায় ট্রেন, নষ্ট হয় সময়। তাতে বাণিজ্যিক সুবিধা খুব বেশি মিলবে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এই রেলপথে চলাচলকারী সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মোহাম্মদ নাসিম। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী।

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, নতুন সেতুতে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এতে আমি আনন্দিত। তবে এই অঞ্চলের রেলপথ ডাবল লাইন না হওয়া পর্যন্ত নতুন সেতুর সুফল আমরা পাবো না। কারণ রাজশাহী থেকে ঢাকা যাতায়াতে ১০ থেকে ১২টি স্টেশনে পাসিংয়ের কারণে থামতে হয়। এতে প্রত্যেক স্টেশনে প্রায় ১৫ মিনিট সময় নষ্ট হয়। এই রেলপথ ডাবল লাইন না হওয়া পর্যন্ত বাড়তি সময় লাগবেই। তাই আমি একজন যাত্রী হিসেবে দাবি জানাবো দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন এই রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীত করা হয়।

যমুনা রেল সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান বলেন, রেল সেতুতে দুটি লাইন রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে একটি লাইনে প্রতিদিন ৩৪টি ট্রেন চলাচল করছে। আগামী ১৮ মার্চ রেল সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলে আরেকটি লাইন খুলে দেওয়া হবে। তাতে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে কমপক্ষে ৮৮টি ট্রেন দ্রুতগতিতে সেতু পারাপার হতে পারবে। এতে অবশ্যই সময় সাশ্রয় হবে। কারণ পুরোনো সেতুতে ওঠার আগে ট্রেন থামতে হতো। বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রেন পাসিং না হওয়া পর্যন্ত ট্রেনটিকে অপেক্ষা করতে হতো। এভাবে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট কেটে যেত। নতুন সেতু চালুর কারণে এই অপেক্ষা আর রইলো না।

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নূর মোহাম্মদ বলেন, যমুনায় নতুন রেল সেতুর ফলে সেতুর ওপর আর ট্রেনকে ধীরগতিতে চলতে হবে না। এতে সময় অনেকখানি সাশ্রয় হবে। ঈশ্বরদী থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত রেলপথ ডাবল লাইন হয়ে গেলে সমস্যা অনেকখানি কেটে যাবে। আর রাজশাহী থেকে আব্দুলপুর পর্যন্ত রেললাইনটিকে ডাবল লাইনে উন্নীত করতে এ পর্যন্ত কোনো প্রকল্পই নেওয়া হয়নি। তবে ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা সমীক্ষা) হচ্ছে। হয়ত ভবিষ্যতে প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।

এর আগে ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। তাতে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে পুরোনো সেতু পারাপার হচ্ছিল। এ সমস্যা সমাধানে ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা নদীর ওপর উজানে আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় তৎকালীন সরকার। প্রথমে প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা নির্ধারিত হলেও পরে তা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থায়ন এসেছে দেশি উৎস থেকে এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।

পিএনএস/রাশেদুল আলম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন