পিএনএস (নঈম নিজাম): জ্যাকব জুমা নামে আফ্রিকান একজন নেতা আছেন। তিনি দীর্ঘদিন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ক্ষমতায় থাকাকালে ভারতীয় বংশোদ্ভূত বড় ব্যবসায়ী গুপ্তা পরিবারের সঙ্গে তাঁর পরিবারের গভীর সম্পর্ক নিয়ে নানামুখী গুজব-গুঞ্জন ছিল। ক্ষমতা ছাড়ার পর গুজবের ডালপালা আরও বিকশিত হয়।
জ্যাকব জুমার পুত্রও যোগ দিয়েছিলেন গুপ্তা গ্রুপে। এ গ্রুপ সরকারি অনেক বড় বড় কাজ করত। সবখানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। এ নিয়ে বিতর্ক আমলে নেননি জ্যাকব জুমা। কিন্তু ক্ষমতা ছাড়ার পর পরিস্থিতি বদলে যায়। নানামুখী তদন্তের মুখোমুখি হন জুমা। গুপ্তা গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আদালত তলব করে জ্যাকব জুমাকে।
কিন্তু আদালতে উপস্থিত হননি তিনি। বরং বললেন ক্ষমতাসীনরা শেষ বয়সে তাঁকে হয়রানি করতে নানামুখী কাজ করছে। কর্মী-সমর্থকরা নেতার কথা বিশ্বাস করলেন। কিন্তু বসে থাকল না আদালত। উপস্থিত না হওয়াকে অবমাননা হিসেবে নিয়ে আদালত অবমাননার দায়ে রায় দিল জ্যাকব জুমার বিরুদ্ধে। ছোটখাটো কোনো রায় নয়, দুই বছর কারাভোগের নির্দেশ। এবার পরিস্থিতি অনুধাবন করে প্রবীণ এই সাবেক প্রেসিডেন্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন। আদালত তাঁকে পাঠাল কারাগারে। ঘটনা এখানে থামলে কথা ছিল না। কিন্তু এভাবে একজন রাজনীতিবিদকে কারাগারে নেওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে নেননি তাঁর সমর্থকরা। ক্ষোভে ফেটে পড়ল গোটা আফ্রিকা। প্রতিবাদ-প্রতিরোধ, ভাঙচুর, লুটপাট চলতে থাকল। পুলিশ ব্যবস্থা নিল। তাতে মারা গেল ৭৯ জন। কিন্তু গুলি থামাতে পারল না কাউকে। থেমে থেমে প্রতিবাদ চলছেই। সাধারণ মানুষের এক কথা- অপরাধ প্রমাণের আগে এভাবে সাজা দেওয়া যায় না। আদালত দিতে পারে না। কারান্তরিন জুমা নিজের সমর্থকদের আবেগ-ভালোবাসায় বিমোহিত হলেন। তিনি হয়তো এতটা আশা করেননি। ভাবেননি তাঁর জন্য এত মানুষ আত্মাহুতি দেবেন।
নেতার প্রতি ভালোবাসা এমনই হওয়া উচিত। কিন্তু সব সময় তা হয় না। কাবুল দখলের পর বিবিসিতে দেখছিলাম আফগান ভদ্রমহিলা চোখের জল ফেলতে ফেলতে কথা বলছেন।
সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন বিবিসিকে। দুই দিন আগে তিনি ছিলেন সরকারের শিক্ষামন্ত্রী। সময়ের নিষ্ঠুরতায় এখন জীবন নিয়ে উৎণ্ঠায় আছেন। বিবিসিকে বলছেন, ‘একমাত্র মেয়েকে নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছি। সরকারে যোগ দেওয়ার খেসারত হয়তো দিতে হবে। ’ এই নারী নেত্রী ভাবতে পারেননি প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি সবাইকে অসহায়ত্বের মুখে ঠেলে দিয়ে কাবুল ত্যাগ করবেন। তাঁর চোখেমুখে অবিশ্বাসের ছাপ। বড় দ্রুত পতন হলো কাবুলের। সরকারি বাহিনী কোথাও বাধা দিল না। প্রতিরোধ করল না কেউ। শীর্ষ গোয়েন্দা ও সেনা কর্মকর্তারা পালালেন সবার আগে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পণ করলেন সাদা পতাকা উড়িয়ে। অনেকে কদমবুচি করলের তালেবানদের। মাত্র ১১ দিনে পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ চলে গেল আফগানদের হাতে। এখন আমেরিকা ও ন্যাটো সমর্থকরা বিপাকে।
তাদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে খোঁজা হচ্ছে। হুমকি দেওয়া হচ্ছে পরিবারকে। সাংবাদিকদের অবস্থা কারও কাহিল। শীর্ষ ব্যক্তিরা সবকিছু ছেড়েছুড়ে চলে গেছেন। নিচের দিকের জন্য একটু সময় দরকার ছিল। সে সময় কেউ পাননি। একটি সেনাবাহিনী কেন ব্যর্থ হবে এভাবে? কী প্রশিক্ষণ তারা নিয়েছিলেন? অথচ এ বাহিনী তৈরি করতে আমেরিকা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। সে অর্থও কোনো কাজে লাগল না। বিপদে পড়লে টের পাওয়া যায় আপনজনদের চেহারা। আফগানিস্তানের মানুষ বিদেশিদের খপ্পরে পড়ে এভাবে বারবার বিপদে পড়েছে। একসময় সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের ধোঁকা দিয়ে সেনা নিয়ে চলে গিয়েছিল। আফগানরা তাদের বিশ্বাস করে বিপদে পড়েছিল। সোভিয়েত মিত্র নজিবুল্লাহর পরিণতি হয়েছিল ভয়াবহ। ১৯৯৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর নজিবুল্লাকে আটক করে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝোলায় তালেবানরা। সারা বিশ্ব এখন উৎকণ্ঠিত কী হবে আফগানিস্তানে? উৎকণ্ঠা বেশি নারী ও শিশুদের নিয়ে।
আফগানিস্তানে এমন পরিস্থিতি আরেকবার হয়েছিল ১৯২৭ সালে। তখন বাদশাহ ছিলেন আমানুল্লাহ খান। সৈয়দ মুজতবা আলী কাবুল গিয়েছিলেন শিক্ষকতা করতে। মুজতবা আলীর লেখায় সে সময়ের চিত্র পাই। আমানুল্লাহ খান আধুনিক আফগান গড়তে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। হুট করে সব বদলে গেল। বাচ্চায়ে সকাও নামে এক উগ্রপন্থি কাবুল দখল করে নিলেন। আমানুল্লাহ খানকে বলা হলো কাফির। পরিস্থিতি বদলাতে শেষ চেষ্টা করা হলো। আমানুল্লাহর সেনা, পুলিশ সবাই উগ্রপন্থি ডাকাতের সঙ্গে যোগ দিল। হতাশা বিস্ময় নিয়ে আমানুল্লাহ পালালেন ইতালি। বর্তমান আফগান চিত্র দেখে পুরনো কথাগুলো মনে পড়ল। ইতিহাস ফিরে আসে বারবার।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেওয়াই ইতিহাসের শিক্ষা। সারা দুনিয়ার রাজনীতিকে শেষ করে দেয় হিংসা, প্রতিহিংসা, বিদ্বেষ, বিভেদ। আমরা জাতির পিতাকে রক্ষা করতে পারিনি। সেদিন রক্ষীবাহিনীর উপপরিচালক আনোয়ারুল আলম শহীদের একটি লেখা পড়ছিলাম। এ বাহিনীর পরিচালক কর্নেল নুরুজ্জামান ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা। আনোয়ারুল আলম শহীদ ও সরোয়ার মোল্লা ছিলেন উপপরিচালক। পরে সেনাবাহিনী থেকে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন মেজর হাসান। একদিন পুলিশের আইজি ই এ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলেন আনোয়ারুল আলম শহীদ ও সরোয়ার মোল্লাকে নিয়ে। বললেন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িটি রাষ্ট্রনায়কের বসবাসের জন্য নিরাপদ নয়। দেশ-বিদেশের নানামুখী ষড়যন্ত্র বাসা বেঁধেছে। বঙ্গবন্ধু তাদের কথা শুনলেন। ইতিহাসের রাখালরাজা বঙ্গভবনে থাকলেন না। জনগণ থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হতে চাননি। ধানমন্ডির দরজা খোলা থাকত সব মানুষের জন্য। যে কেউ প্রবেশ করতে পারত অনায়াসে। জাতির পিতা বলে কথা। শুধু পুলিশের আইজি নন, বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করতে ইন্দিরা গান্ধী গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা প্রতিনিধি পাঠান। ইন্দিরার বান্ধবী পপলু জয়কর তাঁর বইতে লিখে গেছেন সব। ইন্দিরার বার্তা নিয়ে আসা ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সাধারণ মানুষের মতো বসবাস দেখে হতাশ হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে জানালেন ষড়যন্ত্র ও তাঁদের উৎকণ্ঠার কথা। বঙ্গবন্ধু সব শুনলেন। তারপর স্বভাবসুলভভাবে পাইপ ধরিয়ে বললেন, ‘তুমি অকারণে ঘোরাঘুরি করছ। খাওয়া-দাওয়া কর। ’ জাতির পিতারা হয়তো এমনই হন। মানুষের ভালোবাসায় ভুলে যান পলাশীর সেই ষড়যন্ত্রের কথা। ভারতবর্ষের পতনের সূচনা কাশিমবাজারের কুঠিতে হয়েছিল। মীরজাফর, ঘষেটি বেগমরা সিরাজকে উচ্ছেদ নয়, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা তুলে দিয়েছিল ইংরেজ বেনিয়াদের হাতে।
বঙ্গবন্ধু জনগণের নেতা ছিলেন। মানুষের প্রতি ছিল কঠিন আস্থা। একটি দেশ তৈরি করেছেন তিনি। তাই মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকান্ডকে গুরুত্বের সঙ্গে নেননি। কোনো নিরাপত্তাবলয়ে মহাত্মা গান্ধী থাকতেন না। মানুষই ছিল তাঁর ঠিকানা। বঙ্গবন্ধু তো মহাত্মা গান্ধীর উত্তরাধিকার। জীবনের পরোয়া কীভাবে করবেন? হয়তো ভাবতেও পারেননি কোনো বাঙালি তাঁর বুকে গুলি চালাতে পারে। তাঁর চোখের সামনে কথা বলতে পারে। কিন্তু মীরজাফরের দেশে তো সবই সম্ভব। জীবনের শেষ মুহুর্তে আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু ফোন করলেন সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ, বিডিআর ও গোয়েন্দা প্রধানকে। কেউই রক্ষা করতে পারলেন না জাতির পিতাকে। কারও নাকি প্রস্তুতি ছিল না। কমান্ড ছিল না বাহিনীর প্রতি। বলে কী? রাষ্ট্রপতিকে রক্ষা করতে প্রস্তুতি থাকবে না একটি দেশের? ঘুম পাড়ানো ইতিহাস শুনে আমরা বড় হয়েছি। প্রশাসন ব্যর্থ হলো। রাজনীতিবিদরাও পরদিন হাওয়া হয়ে গেলেন। এত বড় দল, কোটি কোটি কর্মী-সমর্থক, জাতির পিতার লাশ পড়ে রইল ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সিঁড়িতে। এগিয়ে যাননি কেউই। করেননি মিছিল সমাবেশ প্রতিবাদ। শেখ হাসিনার আক্ষেপটা বুঝি। আল্লাহ তাঁকে ধৈর্য দিয়েছেন বলে সহ্য করছেন। বড় দুর্ভাগা জাতি আমরা। যিনি দেশ দিলেন তাঁকে রক্ষা করতে পারল না কেউ। প্রতিবাদও করল না। জীবনের ঝুঁকি নিল না কেউই। আজকাল অনেক বড় বড় বক্তৃতা শুনি। আলোচনা শুনি। বই প্রকাশের উৎসব চলে। কান্নায় ভেসে যান অনেকে। মাঝেমধ্যে ভাবী, দুঃসময় এলে এই মানুষগুলো থাকবেন তো? ’৮১ সালের পর শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রথম বই লেখেন আবদুল মতিন। এ বইটি আমাকে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী নিজে। এখন দেশে আওয়ামী বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, পেশাজীবীর অভাব নেই। সংগঠনের অভাব নেই। তোষামোদকারী বক্তার শেষ নেই।
বেশি দিন আগের কথা নয়। ওয়ান-ইলেভেনের পর আমাদের দুই নেত্রী আটক হলেন। সারা দেশ উত্তাল করতে পারেনি জ্যাকব জুমার সমর্থকদের মতো কেউই। আত্মাহুতি দেওয়ার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। কেন এমন হয়? হোলি আর্টিজানে হামলার রাতে প্রত্যাশা ছিল আওয়ামী লীগ কর্মীরা ঢাকার রাজপথ সয়লাব করে দেবেন জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে। না, সে রাতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন নির্দেশ নিতে গণভবনে প্রবেশের মুহুর্তে তিন নেতাকে দেখলেন। আর কারও খবর ছিল না। কথামালার লোকের অভাব নেই এ দেশে। কাজের মানুষের বড় অভাব। সরকারের বিরুদ্ধে সাইবারযুদ্ধ করছে কিছু মানুষ এখন দেশ -বিদেশ থেকে। জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারকে নিয়ে যা খুশি তা-ই বলছে, করছে। অথচ এ সাইবার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নাকি ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। সরকারে নাকি সক্ষমতার অভাব। বড় অদ্ভুত সবকিছু। এত বিশাল সরকারের আইটি খাতের কাজ কী? একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে প্রশ্ন। ক্ষমতায় থেকে না পারলে আপনারা কখন পারবেন? ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা অনেকে ভুলে গেছে। সেদিন টার্গেট ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। খুনিরা চেয়েছিল তাঁকে শেষ করে দিতে। কারণ ছিল বঙ্গবন্ধুকন্যাকে শেষ করতে পারলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শেষ ঠিকানা স্তব্ধ হয়ে যাবে।
২১ আগস্টের সময় কাজ করতাম এটিএন বাংলায়। ১৫ আগস্টের মতোই আরেকটি ভয়াবহ দিন এ জাতির জন্য। আল্লাহ অল্পের জন্য রক্ষা করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। হয়তো আল্লাহ তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এ দেশের উন্নতি-সমৃদ্ধির কাজগুলো তাঁর হাত দিয়ে করানোর জন্য। ২২ আগস্ট একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা মেজর লিয়াকত এলেন এটিএন অফিসে। তিনি আগের দিন ধারণ করা সব ভিডিও ফুটেজের কপি চাইলেন। চ্যানেল আই, এনটিভি অফিসেও তাদের একই দাবি। সন্দেহ হলো, মনে হলো তারা আলামত নষ্ট করতে চান। আমি তাকে বললাম ডকুমেন্টস দিতে পারব না। তিনি হুমকি দিলেন। বিষয়টি ফোনে জানালাম নেত্রীকে। তিনি বললেন, তোমার সন্দেহ সঠিক। ওরা আলামত নষ্ট করে দিতে চায়। আমি লোক পাঠাচ্ছি। ফুটেজের অনেক কপি করে ফেল। নেত্রী পাঠালেন তাঁর প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ ও দলীয় নেতা অসীম কুমার উকিলকে। তাঁরা একটি চিঠি নিয়ে এলেন, ২১ আগস্টের ধারণ করা সব ফুটেজের কপি চেয়ে লেখা ছিল সেই চিঠি। লিখলেন, মামলার কাজে লাগবে এ ফুটেজ। আমরা ফুটেজের কপি দিয়ে দিলাম। পরে সেই গোয়েন্দাও কপি নিলেন। কিন্তু ততক্ষণে দেশ-বিদেশে চলে গেছে ২১ আগস্টের ফুটেজের সব কপি। সময়টা বড় নিষ্ঠুর ছিল। পরিষ্কার করে বলছি, ২১ আগস্ট বাঙালির জন্য আরেক বিভীষিকার দিন। রাষ্ট্রের দায়িত্ব বিরোধী দলের নেতার নিরাপত্তা বিধান করার। কিন্তু রাষ্ট্র যখন নিজেই ষড়যন্ত্র করে তখন বলার কিছু থাকে না। শুকরিয়া- শেখ হাসিনা সে চক্রান্ত মোকাবিলা করে আজকের অবস্থানে।
ক্ষমতার ধারাবাহিকতা নিয়ে কারও তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার কিছু নেই। ক্ষমতার জোয়ার-ভাটা থাকে। নেতার সঙ্গে কথায় নয়, জীবন বাজি রেখে কর্মীদের থাকতে হয়। কিন্তু কতজন কর্মী, কটি দেশের মানুষ তা পারে? দক্ষিণ আফ্রিকায় জ্যাকব জুমার সমর্থকরা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছেন কীভাবে নেতাকে ভালোবাসতে হয়। ক্ষমতার কথামালার সঙ্গে দুঃসময়ের কোনো মিল থাকে না। ক্ষমতায় থাকাকালে সুবিধাবাদীর ভিড়ে সত্যিকার কর্মীরা বঞ্চিত হন। নীরব অভিমানে অনেকে দূরে সরে যান। আর উল্লাস চলে সুবিধাবাদীদের। ক্ষমতার উল্লাসকারীরা দুঃসময়ে থাকে না। তারা নিজের অর্থসম্পদ রক্ষা করতে কেটে পড়ে। অথচ ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের কথা শুনলে চোখে জল আসে। আর বঞ্চিতদের কথাবার্তা তিতা মনে হয়। এ তিতা করলার মানুষগুলোই দুঃসময়ে লড়ে যান। ইতিহাস তা-ই বলে। বাস্তবতাকে ধারণ করে একটি দল চললে সমস্যা থাকে না। দল করতে গিয়ে ক্ল্যাসিক প্রতিযোগিতা থাকবেই। কিন্তু খারাপ সময়ের আশঙ্কা থাকলে নষ্টদের উল্লাসকে পেছনে ঠেলে দিতে হয় কখনো কখনো। কাছে টেনে নিতে হয় দুঃসময়ের কর্মীদের। সামান্য এ কাজটুকুতেই তৈরি হয় জ্যাকব জুমার মতো কট্টর সমর্থক গোষ্ঠী। যারা টিকে থাকে। খারাপ সময়ে নেতাকে ত্যাগ করে না।
লেখক: সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।
পিএনএস/এএ
দুঃসময়ে সবাই কেন পালায় নেতাকে ছেড়ে
22-08-2021 03:47AM