কুকুরের মুখে নবজাতকের লাশের ছবি ভাইরাল, ময়মনসিংহে তোলপাড়

  16-01-2024 11:20PM

পিএনএস ডেস্ক: ফুটফুটে এক মরদেহ কামড়ে ধরে হেঁটে যাচ্ছে একটি কুকুর। সোমবার (১৫ জানুয়ারি) এমনই কয়েকটা চিত্র ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এ নিয়ে নেটিজেনদের ক্ষোভ ও অসন্তোষে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে ময়মনসিংহে।

এতে বাদ যায়নি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালও। ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে হাসপাতালের ভেতরে-বাইরেও।

তবে ভাইরাল হওয়া ছবিটি ২০১৫ সালের বলে মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে মমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক মো. জাকিউর রহমান বলেন, ‘ভাইরাল হওয়া ছবিটি দেখেছি।’ এসময় ছবিটি ২০১৫ সালের বলেও দাবি করেন তিনি।

কিন্তু উপ-পরিচালকের এই দাবি মানতে নারাজ ময়মনসিংহ নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হাসপাতাল সংলগ্ন চরপাড়া এলাকার মেসার্স মেডিকেয়ার এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর মো. শাহজালাল হৃদয়।

তিনি জানান, বিগত ১৫ সালেও নগরীর বাঘমারা এলাকার কোনো একটি ক্লিনিকে এ ধরনের ঘটনার একটি ছবি ভাইরাল হয়েছিল। তবে গতকাল যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে ওই ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড বলছে অন্য কথা। কারণ ছবিতে দেখা গেছে নবজাতকের লাশ কামড়ে ধরে কুকুরটি যে পথে হেঁটে যাচ্ছে সেখানের লোকেশনে নীল টিনের বেড়া দেখা যায়। এতে বোঝা যায়- ছবিটি মমেক হাসপাতাল এলাকার বর্তমান সময়ের ছবি। কারণ বর্তমানে হাসপাতালের ভেতরে নতুন বিল্ডিংয়ের কাজ চলছে নীল টিনের বেড়া দিয়ে।

এর আগে মো. শাহজালাল হৃদয় তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে ভাইরাল হওয়া ছবি আপলোড করে এক পোস্টে বলেন, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আজকে ১৫/০১/২০২৪ সোমবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে কুকুরের মুখে একটি বাচ্চার মৃতদেহ- ছবিটি ভাইরাল হয়েছে। আসলে এই ছবিটি খুবই ন্যাক্কারজনক ও ঘৃণিত একটি ঘটনা। এই দায়ভার কার? ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্নভাবে আউটসোর্সিং এর শত শত লোক নিয়োগ দিয়েছে। এই লোকগুলিকে দেখভাল করার জন্য আবার সুপারভাইজার নিয়োগ করেছেন। যারা পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছেন তারা যদি সঠিকভাবে এই জিনিসগুলি সংরক্ষণ করতেন আজকের এই দৃশ্য মানুষের দেখতে হতো না। যেভাবেই বলেন না কেন এর দায়ভার কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে।

এই পোস্টে মন্তব্য করেছেন ১৯ জন নেটিজেন। তাদের মধ্যে তানভীর ইমতিয়াজ নামে একজন লিখেছেন, হাসপাতালে কর্মীরা কাজের প্রতি উদাসীন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের প্রতি অবহেলার কারণে এই মর্মান্তিক দৃশ্য আমাদের দেখতে হচ্ছে। এটি ময়মনসিংহবাসীর জন্য একটি দুঃখজনক ঘটনা। এরকম দৃশ্য ময়মনসিংহবাসীকে আর কতকাল দেখতে হবে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আমার প্রশ্ন???

এছাড়াও সাখাওয়াত হোসেন রনি নামে অপর এক নেটিজেন লিখেছেন, ধিক্কার জানাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি, তাদের অবহেলার শিকার হয়েছে ফেরেশতার মতো বাচ্চাটি। যার কারণ আজ এই বিরল ঘটনাটি দেখতে হলো। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এসব কার্যকলাপ দেখে সাধারণ মানুষ তাদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে।

ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে মন্তব্য ছুড়েছেন সাংবাদিক ফজলুল হক নামে এক নেটিজেন। তিনি তার পোস্টে ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, গফরগাঁও পাগলা থানায় মানুষ কুপিয়ে উল্লাস করেছে, সেভ করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ চত্বরে কুকুরের মুখে মৃত শিশু দেখে আতঙ্কিত হয়েছি। দুটি ঘটনা সহ্য করা কষ্টদায়ক। আমরা এখনো মানুষ হতে পারিনি, বলেও যোগ করেন তিনি।

ঘটনাটি সরেজমিনে জানতে মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে মমেক হাসপাতাল এলাকায় যান এই প্রতিবেদক।

এ সময় জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যদের ক্যাম্প ইনচার্জ মো. সাইদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, ফেসবুকে ছবিটি দেখেছি এবং হাসপাতাল এলাকার অনেকের কাছেও শুনেছি। তবে এ বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য আমার জানা নেই।

একই ধরনের তথ্য দিয়ে হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, হাসপাতালের ভেতরে এমন কোনো ধরনের ঘটনার খবর আমি পাইনি। তবে বাইরের অনেকেই বলছে এবং ফেসবুকে আমিও দেখেছি। হাসপাতালের ভেতরে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আমি জানতাম। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক বলেও যোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন বলেন, ছবিটি ফেসবুকে আমিও দেখেছি। তবে এ বিষয়ে কোনো তথ্য আমার জানা নেই।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন