বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ভাঙার ভিডিও অপপ্রচার

  22-02-2025 05:08PM

পিএনএস ডেস্ক: ‘শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ভাঙছে’-এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা না জানিয়ে উল্টো শহীদ মিনার ভাঙচুর করা হচ্ছে- এমন দাবি করা হলেও ঘটনা ভিন্ন। ঘটনাটি গত ১২ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার। ভিডিওটি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার টিকারী বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের।

সরেজমিনে জানা যায়, টিকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও টিকারী বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একই সঙ্গে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনেই সুন্দর টাইলস করা একটি শহীদ মিনার। তার পাশেই কংক্রিটের স্তূপ, যেখানে পুরাতন শহীদ মিনার ছিল। মূলত বিদ্যালয়ের সামনে পাশাপাশি দুটি শহীদ মিনার ছিল। বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ সংকট থাকায় পুরাতন শহীদ মিনারটি ভেঙে অপসারণ করা হয়েছে। পুরাতন শহীদ মিনারটি ভাঙার সময় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন ভিডিও ধারণ করে তার টিকটক আইডিতে পোস্ট করে। পরবর্তীতে ওই ভিডিও ডাউনলোড করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

জানা যায়, গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের পুরাতন শহীদ মিনারটি অপসারণ করা হয়। এ সময় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সাব্বির হোসেন ওই ভিডিওটি ধারণ করে তার টিকটক আইডিতে পোস্ট করে। সেই ভিডিও ডাউনলোড করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার টিকারী গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে।

টিকারী বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক মো. শিহাব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদ্যালয়ে নতুন একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে। তার পাশেই পুরাতন শহীদ মিনার, যেটা জরাজীর্ণ ছিল। এছাড়া বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ স্বল্পতা এবং পাশাপাশি দুটি শহীদ মিনার থাকার কারণে পুরাতন শহীদ মিনার ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়। এ কারণে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ওই শহীদ মিনার ভাঙা হয়। এ সময় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির শহীদ মিনার ভাঙার ভিডিও ধারণ করে। সাব্বির ওই ভিডিওটি তার টিকিটক আইডিতে ছাড়ে। মূলত ভিডিওটি সেখান থেকেই ভাইরাল হয়।

টিকারী বাজারের ব্যবসয়ী সাইফুল ইসলাম উজ্জ্বল ঢাকা পোস্টকে জানান, স্কুলের সামনে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে এই বাজারে ব্যবসা করেন। স্কুলের সামনে পুরাতন শহীদ মিনার ছিল। তার পাশেই নতুন করে আরেকটি শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়েছে। এখন পুরাতন শহীদ মিনারটা ভেঙে দিয়েছে।

ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, ২১শে ফেব্রুয়ারির দিন বাচ্চার সাথে স্কুলের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি। শহীদ মিনার ভাঙচুরে কথা মিথ্যা।

টিকারী বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সাব্বির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলে, প্রথমত ভিডিও ছাড়া আমার ভুল হয়েছে। ভাবতেই পারিনি ভিডিওটি এমনভাবে ভাইরাল হবে।

সে বলে, স্কুলের সামনে নতুন একটি শহীদ মিনার করা হয়েছে। এ কারণে পুরাতন শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হয়। আমি ফেসবুকে কন্টেন্ট তৈরি করি। এই ভিডিওটি ফেসবুকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ভিডিও করি। ফেসবুকে ভিডিওটা না ছেড়ে টিকিটকে ‘সাব্বির ৩_৯০’ নামে আইডিতে ভিডিও ছাড়া হয়। সেখান থেকেই ভিডিওটি ডাউনলোড করে ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমার ভিডিওর ক্যাপশন ছিল পাশেই নতুন শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে, এজন্য পুরাতন শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হয়েছে। এটা নিয়ে কেউ সমালোচনা করবেন না। তারপরও ফেসবুকে ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে গেছে।

টিকারী বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নওশের আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক খেলা করানো হয়। এ সময় পাশাপাশি দুটি শহীদ মিনার থাকায় শিক্ষার্থীদের খেলতে অসুবিধা হচ্ছিল। যার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা মিলে পুরাতন জরাজীর্ণ শহীদ মিনারটি অপসারণ করার সিদ্ধান্ত হয়। তারপর শিক্ষার্থী নিজেরাই শহীদ মিনারটি অপসারণ করে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ভাঙচুর হয়েছে বলে অপপ্রচার করা হয়েছে। সেটি সঠিক নয়।

এসএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন