পিএনএস ডেস্ক: চট্টগ্রাম নগরে পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠানের মঞ্চে উঠে ইসলামি গান পরিবেশনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাতে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির প্রচার সম্পাদক মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির শিল্পীবৃন্দের গান পরিবেশনা নিয়ে এক ধরনের ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে, যা সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম উঠে এসেছে। এই বিষয়ে বিস্তারিত বলার আগে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি হচ্ছে একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও বিনোদনমূলক স্বতন্ত্র সংগঠন।
সংগঠনটি বিয়েশাদি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হওয়ার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক পারফরম্যান্স করে থাকে। চট্টগ্রামের জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির পরিবেশনাটি ছিল সেই রকমই একটি পরিবেশনা। ওই পূজা উদযাপন কমিটির নেতা সজল দত্ত বাবুর (বহিষ্কৃত) আমন্ত্রণ ও অনুরোধে মণ্ডপ মঞ্চে দুটি গান পরিবেশনা করা হয়। গান দুটি ছিল শুধুমাত্র সম্প্রীতির বন্ধনকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে।
এতে আরও বলা হয়, প্রথম গান ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনি কো ইসলাম/ হিন্দু বলো বৌদ্ধ বলো কিংবা খ্রিস্টান সবাই হেথা শান্তি পাবে পাবে রে সম্মান’ আর দ্বিতীয়টি ছিল ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম, গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান’।
গান পরিবেশনের সময় উপস্থিত দর্শকবৃন্দের করতালিতে গোটা গ্যালরি উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। গান শেষ করে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য পূজা কমিটিকে ধন্যবাদ জানান শিল্পীবৃন্দ।
পূজা উদযাপন কমিটির মঞ্চ থেকে সঞ্চালক বলেন, ‘ধন্যবাদ চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির শিল্পিদেরকে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার যে গান তারা পরিবেশন করলেন তার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছাসহ ভূয়সী প্রশংসা করেন তারা।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, লক্ষ্য করা গেছে যে, অনুষ্ঠিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে দেশের বিদ্যমান সম্প্রীতির বন্ধনকে নষ্ট করার নিমিত্তে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে, যা খুবই দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। আমরা মনে করি, এই অপপ্রচার দেশে শৃঙ্খলা নষ্ট করে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার পাঁয়তারার একটা অংশ।
তাদের এহেন অপকর্মকাণ্ডে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে সনাতনধর্মীসহ অন্য যারা এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় মনে দুঃখ বা আঘাত পেয়েছেন চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি সবার নিকট দুঃখ প্রকাশসহ ক্ষমা ও সুদৃষ্টি কামনা করছে।
পূজামণ্ডপে গান পরিবেশনকারী দুই শিল্পিকে জবানবন্দির জন্য গ্রেপ্তারের ব্যাপারেও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে বিবৃতিটিতে। সেইসঙ্গে বলা হয়েছে, আমরা বর্তমান স্বৈরাচারমুক্ত প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনতিবিলম্বে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাই।
এদিকে এ ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগর পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে ইতোমধ্যে। সেইসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজন বাদী হয়ে শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকালে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (বহিষ্কৃত) সজল দত্তসহ মঞ্চে ইসলামি গান পরিবেশনকারী ছয় শিল্পিকে আসামি করা হয়েছে।
পিএনএস/রাশেদুল আলম
পূজামণ্ডপে ইসলামিক গান: চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির ক্ষমা প্রার্থনা
12-10-2024 12:59AM