ফারমার্স ব্যাংক কি আস্থা ফিরে পাবে?

  09-05-2018 12:39PM

পিএনএস ডেস্ক: ফারমার্স ব্যাংক অবশেষে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) দিকেই যাচ্ছে। ব্যাংকটিতে সরকারের শেয়ার থাকবে ৬০ শতাংশ। আর বেসরকারি উদ্যোক্তাদের শেয়ার থাকবে ৪০ শতাংশ। এ ব্যাপারে আইনি বাধা দূর হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার (৮ মে) এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংককে ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১’ এর ১৪ক এবং ২৬ক ধারার বিধান পরিপালন থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। ফলে ফারমার্স ব্যাংকের শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে সরকারি ওই চার ব্যাংক এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) আর কোনও বাধা থাকলো না। এরই মধ্য দিয়ে ফারমার্স ব্যাংকের পর্ষদে রাষ্ট্রায়ত্ত ওই ৫ প্রতিষ্ঠানের একজন করে প্রতিনিধি থাকার বিষয়টিও পাকাপোক্ত হয়েছে। তারপরও ব্যাংক আস্থা ফিলে পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে ফারমার্স ব্যাংকের উপদেষ্টা প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, ‘পিপিপি’র আওতায় আসার কারণে ফারমার্স ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। সরকারি ব্যাংকের এমডিরা ব্যাংকটির পর্ষদে থাকার কারণে ব্যাংকটি ভালো চলবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক ও আইসিবি মিলে ফারমার্স ব্যাংকের ৭১৫ কোটি টাকার শেয়ার কিনবে। এর মধ্যে ১৬৫ কোটি টাকা করে মোট ৬৬০ কোটি টাকা দেবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। আর ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) দেবে ৫৫ কোটি টাকা। পরে আরও ৩৮৫ কোটি টাকা দেবে ব্যাংকটির উদ্যোক্তারা। বর্তমানে ৪০১ কোটি টাকা মূলধন বেড়ে দেড় হাজার কোটি টাকা হবে। আইসিবি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে থাকবেন। ফলে পরিচালনা পর্ষদের ১১ সদস্যের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ৫ জন প্রতিনিধি থাকবেন। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধি থাকবেন ৪ জন। আর দু’জন থাকবেন ইন্ডিপেনডেন্ট পরিচালক।

প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরেই অর্থ সংকটে ডুবতে বসা ফারমার্স ব্যাংককে রক্ষার জন্য বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা চলছিল। এর একটি হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইসিবি থেকে ফারমার্সকে অর্থ দেওয়া। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো এর বিনিময়ে ফারমার্সের শেয়ার চেয়েছিল। এখন এক্ষেত্রে আইনি বাধা কেটে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ার কিনতে পারবে। আর ডুবতে বসা ফারমার্স ব্যাংকও রক্ষা পাবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড.সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ফারমার্স ব্যাংকের পর্ষদে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রতিনিধিরা থাকলেও ব্যাংকটির খুব বেশি উপকার হবে না। কারণ, ফারমার্স ব্যাংকের পর্ষদে যেসব প্রতিনিধি থাকবেন, তাদের কোনও টাকা সেখানে থাকবে না। থাকবে সরকারের টাকা। সরকারের মনোনীত ওইসব ব্যক্তির দরদ কতটুকু থাকে, সেটাই দেখার বিষয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটা না করে বরং ফারমার্স ব্যাংককে ঋণ আদায়ে বাধ্য করা গেলে আরও বেশি উপকার হতো। তাছাড়া ব্যাংকটিকে ছোট করে আনার মধ্য দিয়েও সমস্যার সমাধান করা যেত।’

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘পিপিপি’র আওতায় বেসরকারি ব্যাংকটির পর্ষদে সরকারি ব্যাংকের এমডিরা থাকলে উন্নতি হবে। মানুষের আস্থা বাড়বে।’

তিনি উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের টাকা যাতে যত্রতত্র ব্যবহৃত না হয়, সেজন্য ফারমার্স ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আমাদের প্রতিনিধি থাকবে।

গভর্নর ফজলে কবির স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ এর ১৪নং আইন) এর ১২১ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশে কার্যরত সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড ও রূপালী ব্যাংক লিমিটেডকে দ্য ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের শেয়ার ক্রয় ও ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ১৪ক এবং ২৬ক ধারার বিধান পরিপালন থেকে সাধারণভাবে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।’

এতে আরও বলা হয়, একই আইনের ১২১ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক লিমিটেড এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ এর পক্ষে তাদের সিইও/ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের পর্ষদে প্রতিনিধি পরিচালক নিযুক্তির ক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ২৩ (১)(ক) ধারার বিধান পরিপালন থেকে সাধারণভাবে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।

আরেক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সালের ১৪নং আইন) এর ১২১ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এতদ্বারা বাংলাদেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংককে সাবসিডিয়ারি গঠন ছাড়া ‘সিকিউরিটি কাস্টডিয়াল সেবা’ প্রদানের লক্ষ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৭(৩) ধারা পরিপালন থেকে সাধারণভাবে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। এই অব্যাহতি ২২ জুলাই ২০১৮ তারিখ হইতে কার্যকর হবে।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটি ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রায় দেউলিয়া হয়ে গেছে। আর্থিক সংকটের কারণে গ্রাহকরা তাদের আমানতও তুলতে পারছেন না মাসের পর মাস। ছোট বড় সব ধরনের গ্রাহক ব্যাংকটি থেকে নিজেদের টাকা উঠানোর জন্য আবেদন দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু ব্যাংক প্রতিবারই তাদের ফেরত পাঠাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, সরকারের জমা রাখা জলবায়ু তহবিলের টাকাও ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে ব্যাংকটি।

রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১৩ সালের ৩ জুন চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে ফারমার্স ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরু থেকেই অনিয়ম-দুর্নীতি ও আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ে জড়িয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। পরিচালকদের ঋণ ভাগাভাগিতে চলে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ফলে বাড়তে থাকে খেলাপি ঋণ। তারল্য সংকটের পাশাপাশি মূলধন ঘাটতিতেও ব্যাংকটি দুরাবস্থায় পড়ে। আগ্রাসী ঋণ বিতরণের ফলে দেখা দিয়েছে তহবিল সংকট। এ অবস্থায় গত বছরের ২৭ নভেম্বর পদত্যাগ করেন ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক মাহাবুবুল হক চিশতী। এরপর ব্যাংকের এমডি এ কে এম শামীমকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

পিএনএস/আনোয়ার


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন