যে কারণে কমেছে ডিমের দাম

  03-03-2018 11:35AM

পিএনএস ডেস্ক: খুচরা বাজারে এখন প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম বেচা হচ্ছে ২৪ টাকা দরে; প্রতি ডজন ৭০ টাকায়। কয়েক দিন আগেও প্রতি ডজন মুরগির ডিম বেচা হতো ৮৫ থেকে ৯০ টাকা দরে। খামারী, ব্যবসায়ী ও ভোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হঠাৎ করে ডিমের দাম কমার কারণ মূলত তিনটি। তারা বলছেন, ডিমের অতিরিক্ত উৎপাদন, বাজারে পর্যাপ্ত সবজি ও মাছের সরবরাহ থাকা এবং গরুর মাংসের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকার কারণে ডিমের চাহিদা অনেকটাই কমেছে। আর এ কারণেই কমেছে ডিমের দাম।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীত চলে গেলেও এখনও বাজারে পর্যাপ্ত শীতের সবজির সরবরাহ রয়েছে। দাম একেবারে কম না হলেও ততটা বেশিও নয়। অন্যদিকে বাজারে দেশি-বিদেশি মাছের সরবরাহও সন্তোষজনক বলে জানিয়েছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। দামও নাগালের মধ্যে। কাজেই ভোক্তারা ঝুঁকছেন মাছ ও সবজির দিকে। একইসঙ্গে গত কয়েক মাসের তুলনায় কিছুটা কমেছে গরুর মাংসের দাম। ৫৫০ টাকা কেজি দরের গরুর মাংস এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ৪৬০ থেকে ৪৮০ টাকা কেজি দরে। ফলে ক্রেতাদের আগ্রহ এখন গরুর মাংসে। এ কারণেও কমেছে ডিমের চাহিদা। ফলে কমেছে দামও।

ডিমের দাম কমার এই প্রবণতা আরও কিছুদিন থাকবে বলে জানিয়েছেন খামারী আবু নাসের। তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া ভালো। তাই মুরগির রোগবালাই কম। আর এ কারণে গত কয়েক দিন ধরে প্রতি খামারে ডিমের উৎপাদনও ভালো হচ্ছে।’ তবে খামারিরা দাম পাচ্ছেন না বলে হতাশা ব্যক্ত করেন এই ডিম উৎপাদনকারী। তিনি জানান, এভাবে চলতে থাকলে খামারীরা লোকসানের মুখে পড়বে। কারণ, মুগরির বাচ্চার দাম কমেনি। কমেনি মুরগির ওষুধ ও খাবারের দাম। কিন্তু দাম কমেছে ডিমের। ডিমের সঙ্গে ব্রয়লার মুরগি ও লেয়ার মুরগির দামও কমেছে। এভাবে চললে খামারীরা বাঁচবে কীভাবে?

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী আরিফুল হক জানিয়েছেন, প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বেচা হচ্ছে ৭০ টাকা দরে। তবে ছোট বাজার ও পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানে সাধারণত দাম কিছুটা বেশি হয়। তিনি জানান, এখন পাইকারি ও খুচরা উভয় বাজারে ডিমের দাম কম।

যাত্রাবাড়ী আড়তে গত সপ্তাহে ১০০টি ডিম ৪৮৫ টাকা দরে বেচা হলেও শুক্রবার তা কমে দাঁড়ায় ৪৬৫ টাকায়। মাস দেড়েক আগে ১০০টি ডিমের দাম ছিল ৫৪০ থেকে ৫৫০ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, দাম কমার বড় কারণ সরবরাহ বেশি।

রাজধানীর বেসরকারি একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী হারুন অর রশিদ জানান, সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার নিয়মিত বাজারে করেন তিনি। যথারীতি আজ শুক্রবারও (২ মার্চ) তিনি বাজার করেন। তিনি জানান, মাছ ও সবজির সরবরাহ ভালো। দামও সহনীয় পর্যায়ে। তাই ডিমের প্রতি ভোক্তার কদর কিছুটা কম। মাছ, সবজি ও মাংসের দাম বাড়লে মানুষ ডিমের দিকে ঝোঁকে। এখন সেই ঝোঁকটা কম। তাই ডিমের দাম আগের তুলনায় কমেছে বলে মনে করেন তিনি।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বড় সাইজের চিংড়ি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, রুই ২৩০-২৮০ টাকা, সিলভারকার্প ১৩০ টাকা, কাতল মাছ ২২০ টাকা, পাঙ্গাশ ১২০ টাকা, তেলাপিয়া ১৩০ টাকা ও শিং ৪০০ টাকা কেজি দরে বেচা হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ৭০০-৭৫০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি ১৪০ টাকা ও গরুর মাংস ৪০০-৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি প্রতিটি আকার অনুযায়ী ১৫০-২২০ টাকা দরে বেচা হচ্ছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাবে, ছয় বছর আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ডিমের উৎপাদন ছিল ৫৭৪ কোটি পিস। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৯৬ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে, ২০০৯ সালে প্রতি হালি ডিমের গড় দাম ছিল ২৮ টাকা। ২০১৬ সালে এসে এর দাম দাঁড়ায় ৩৪ টাকায়। ২০১৭ সালে আবার তা কমে ৩২ টাকায় নামে। এখন বাজারে প্রতি হালি ডিমের দাম ২৪ টাকা।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন