কোটা আন্দোলনকারীদের হয়রানি, কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ও ছাত্রনেতার প্রতিক্রিয়া

  21-04-2018 10:35AM

পিএনএস ডেস্ক: সরকারি চাকরির নিয়োগে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বাতিল ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন। তবে, এর সঙ্গে জড়িতদের হয়রানি করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ আছে।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তিন নেতাকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে শিক্ষার্থীদের মারধোর, সবশেষ সুফিয়া কামাল হলের চার ছাত্রীকে মধ্যরাতে হল থেকে বের করে দেয়া একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হল থেকে চার ছাত্রীকে বের করে দেয়ার অভিযোগ করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এ খবর ক্যাম্পাসে জানাজানি হলে হল ফটকে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। কোনও তদন্ত ছাড়া ছাত্রীদের বের করে দেয়ায় হল প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবি করেন তারা।

তবে, এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আখতারুজ্জামান। শুক্রবার সকালে নিজ বাসভবনে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারবিরোধী মিথ্যা তথ্য প্রচার করে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করায় সুফিয়া কামাল হলের ৪ ছাত্রীকে তাদের অভিভাবকের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এখানে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সাধারণ কোনো ছাত্রীকে হয়রানি করা হয়নি। হাজার হাজার মেয়ের স্বার্থে এ চারজনকে হল থেকে অভিভাবকের জিম্মায় দেয়া হয়েছে।

মধ্যরাতে ছাত্রীদের হল থেকে বের করে দেয়ার নিন্দা জানিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, গণতান্ত্রিক এ আন্দোলনের যৌক্তিকতা সবাই স্বীকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। এরপরও সেই আন্দোলনের কর্মীদের নাজেহাল করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চরিত্রের বিপরীত। এভাবে হয়রানি যদি চলতেই থাকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় যদি গণতন্ত্র ও পরমত চর্চা করা না যায়; তাহলে রাষ্ট্রের ফ্যাসিস্ট চরিত্রই প্রকাশ করবে।

চার ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ঘটনা। এমন ঘটনা ঘটলে থাকলে ছাত্রফ্রন্ট এবং প্রগতিশীল ছাত্রজোট আন্দোলনে যাবে বলেও জানান ছাত্রফ্রন্ট সাধারণ সম্পাদক।

মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল তিন ছাত্রীকে মধ্যরাতে হল থেকে বের করে দেয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘কীভাবে তিন ছাত্রীকে মধ্যরাতে হল থেকে বের করে দেয়া হয়, তা আমি ভাবতেই পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কি কোনো বিধি-বিধান নেই? আমাদের এখন ভাবতে হচ্ছে আমাদের ছেলে-মেয়েদের যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পাঠাই, সেখানে তাদের নিরাপত্তা কী?

আর যে পরিস্থিতিই হোক না কেন, হাতে-নাতে মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হবে – এ ধরনের কোনো নিয়ম থাকতে পারে না। স্থানীয় অভিভাবক তো সমব সময় বাবা-মা হন না। আত্মীয়স্বজন বা পরিচিতরা হতে পারেন। তাঁদের হাতে কীভাবে মধ্যরাতে ছাত্রীদের তুলে দেয়া যায়!’

সুলতানা কামাল বলেন, ‘এই ঘটনায় মেয়েদের বিরুদ্ধে অভিযোগও স্পষ্ট নয়। বলা হচ্ছে, তারা গুজব ছড়িয়েছে। কী গুজব, কীভাবে ছড়িয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। তাই ছাত্রীদের বের করে দেয়ার ঘটনা তদন্ত হওয়া দরকার। আর এটা যাঁরা করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।’

এই তিন ছাত্রীকে মধ্যরাতে বের করে দেয়ার সময় কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা বা হলের পক্ষ থেকে কোনো যানবাহনও দেয়া হয়নি। তারা রিকশাযোগে হল ত্যাগ করে। তারা হামলার শিকারো হতে পারতো প্রতিপক্ষের হাতে। পড়তে পারতো অনিরাপদ পরিস্থিতির মুখে। এ বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানির কাছে তুলে ধরলে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এটা হল প্রশাসনের সিদ্ধান্ত। আমাদের কাছে কোনো সহযোগিতা চাইলে আমরা করতাম।’

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন