আরব দলের হাতে নেতানিয়াহুর ভাগ্য

  26-03-2021 11:24AM


পিএনএস ডেস্ক: ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ক্ষমতায় থাকার জন্য পার্লামেন্টে যত আসন দরকার, মঙ্গলবারের নির্বাচনের আংশিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে তার পক্ষে সেটি পাওয়া কষ্টকর হতে পারে।

এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট গণনা করা হয়েছে। এতে দেখা যায় নেতানিয়াহুর দক্ষিণপন্থী জোট ৫৯টি আসন জেতার পথে আছে। তবে ক্ষমতায় থাকার জন্য তাদের দরকার আরও অন্তত দুটি আসন।

এই নির্বাচনে ৫টি আসন জেতার পথে আছে একটি আরব দল, যা সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ইসরায়েলে ক্ষমতার ভারসাম্যে এই দলটিই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
এই নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল কী দাঁড়ায়, তার ওপর নির্ভর করবে আরব-ইসরায়েল সম্পর্কের ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি। রাম নামের যে আরব দলটি ৫টি আসন জিতেছে তারা এখনো বলেনি নেতানিয়াহুর সঙ্গে তারা জোট বাঁধবে কি না। যদি তারা নেতানিয়াহুর দলকে সমর্থন দেয়, সেটা হবে এক অস্বাভাবিক ঘটনা।

সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী নির্বাচনে নেতানিয়াহু বিরোধী জোট পেয়েছে ৫৬টি আসন। আরব দল রামের সমর্থনে তারাও ক্ষমতায় যেতে পারে। কিন্তু এই জোট অনেক বেশি বিভক্ত এবং তাদের পক্ষে একসঙ্গে কাজ করতে পারার সম্ভাবনা কম।

আর যদি কোনো পক্ষই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার মতো জোট গড়তে না পরে, তখন ইসরায়েলে গত দুই বছরের মধ্যে ৫ম দফা নির্বাচন করতে হবে।

ইসরায়েলে পার্লামেন্ট নির্বাচন হয় আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে। এর ফলে কোনো একক দলের পক্ষেই আসলে পার্লামেন্টে একচেটিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

সর্বশেষ ফলাফলের ভিত্তিতে দেখা যায়, মিস্টার নেতানিয়াহু যদি ক্ষমতায় থাকতে চান তার একই সঙ্গে আরব দল রাম এবং একটি ছোট্ট কট্টর দক্ষিণপন্থী জাতীয়তাবাদী দল ইয়ামিনার সমর্থন লাগবে।

আরব দল রামের মতোই ইয়ামিনার নেতা নাটালি বেনেটও এখনো ঘোষণা করেননি তিনি সরকার গঠনের জন্য কোন জোটকে সমর্থন করবেন।

‌‌‘ইসরায়েলের জন্য যা কল্যাণকর, আমি সেটাই করব,’ বলছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, নেতানিয়াহুকে তিনি জানিয়েছেন যে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত ইয়ামিনা তাদের সিদ্ধান্ত নেবে না।

মঙ্গলবার এই টুইট বার্তায় মিস্টার নেতানিয়াহু তার সমর্থকদের বলেন, ‘আপনারা আমার নেতৃত্বে দক্ষিণপন্থী এবং লিকুড পার্টিকে বিরাট বিজয় এনে দিয়েছেন। লিকুড এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বড় দল।’

‘এটা পরিষ্কার, বেশিরভাগ ইসরায়েলি হচ্ছে দক্ষিণপন্থী। তারা একটি শক্তিশালী ও দক্ষিণপন্থী সরকার চায়।’

এদিকে প্রধান বিরোধী নেতা ইয়েইর লাপিড, যার মধ্যপন্থী দল ইয়েশ আটিড ১৭টি আসন পাবে বলে মনে করা হচ্ছে, তিনি বলেছেন, দলের 'বিরাট অর্জনে' তিনি খুশি।

‘আমি এরই মধ্যে আমাদের জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছি এবং আরও কথা বলব। আমরা ইসরায়েলে একটা বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন সরকার গঠনে যা যা করা দরকার তা করব।’

এবারের নির্বাচনে ৬৭ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পড়ে। এই নির্বাচনকে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বের ব্যাপারে গণরায় হিসেবে দেখা হচ্ছিল।

২০০৯ সাল হতে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটানা ক্ষমতায় আছেন। এর আগে ১৯৯০ এর দশকেও তিনি তিন বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

নির্বাচনে তিনি মূলত কোভিড-১৯ টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারের সাফল্য এবং আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের কূটনৈতিক সাফল্য তুলে ধরেন।

তবে তার রাজনৈতিক বিরোধীরা বলছেন, যখন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিচার চলছে, তখন তার ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়। মিস্টার নেতানিয়াহু অবশ্য কোন ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গত তিনটি নির্বাচনের কোনোটিতেই নেতানিয়াহু বা তার প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো কোনো স্থিতিশীল সরকারী জোট গঠন করতে পারেনি।

এখন যে জাতীয় ঐক্যের সরকার, যা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেনি গ্যান্টযের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির সমঝোতার ভিত্তিতে গঠিত হয়, তা মাত্র সাত মাসের মাথায় গত ডিসেম্বরে ভেঙে যায়। সূত্র: বিবিসি বাংলা

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন