শুকনা মৌসুম শুরু না হতেই তিস্তায় পানি নেই, চারিদিকে ধূ ধূ বালুচর

  05-11-2014 09:05PM

পিএনএস, (নজরুল মৃধা) রংপুর : শুকনা মৌসুমের শুরু না হতেই তিস্তা এখন মরুভুমি ধূধূু বালুচর। জলবায়ুর পরিবর্তনে পরিবেশের সর্বনাশ হতে বসেছে। পানির অভাবে তিস্তা নদীর আশেপাশের এলাকায় পানি অনেক নীচে নেমে গেছে। অকোজো হয়ে পড়ার উপক্রম দেশের বৃহত্তম তিস্তা সেচ প্রকল্প। গতকাল ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ১ হাজার কিউসেক। এসময় পানির প্রবাহ থাকার কথা ২০ হাজার কিউসেক।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানা গেছে , বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পানি বন্টনের কোন চুক্তি হই হই করে এখনও হয়নি। ভারতের তিস্তা নদীর গজলডোবায় একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে প্রকল্পে পানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে অস্বাভাবিকহারে। তাই তিস্তা ব্যারেজে শুস্ক মওসুমে পানি থাকে না। আবার বর্ষাকালে প্রবল পানির তোড়ে ব্যারেজ ও আশপাশের অঞ্চল ঝুকির মুখে পড়ে। তখন ৪৪টি গেট রাতদিন খুলে রেখেও পানি সরানো কঠিন হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত পানি অপসারণের জন্য প্রকল্প’র উত্তরের ৬১০ মিটার বাইপাস খাল নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৮ সালের বন্যায় এই খাল ধ্বংস হয়ে যায়। বেশকিছু স্থাপনাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অন্যদিকে শুস্ক মওসুমে চাহিদা অনুসারে সেচ-সুবিধা দেয়া সম্ভব হয় না ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে। প্রকল্প কর্মকর্তাদের মতে প্রকল্পের পানির স্বল্পতা খুবই হতাশা জনক। সূত্র জানায় ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশন গঠনের পর তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে দুই দেশের মন্ত্রী পরিষদের এক বৈঠকে তিস্তার পানি বন্টনে শতকরা ৩৬ ভাগ বাংলাদেশ ও ৩৯ ভাগ ভারত এবং ২৫ ভাগ নদীর জন্য সংরক্ষিত রাখার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত আজোও বাস্তবায়ন হয়নি।



জানা গেছে,বছরে ৩টি ফসল উৎপাদনের পরিকল্পনা ছিলো এই ব্যারেজের। প্রকল্পের অধীনে চাষীদের উন্নত কৃষি পদ্বতি শিক্ষা দেয়ার কথা। কৃষি,মাছচাষ,হাস-মুগীর খামার,বৃক্ষরোপন আর ছোট শিল্পের মাধ্যমে আয় বাড়ানোর উদ্দেশ্য ছিলো। উন্নত যোগাযোগ ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে চাষীদের বন্যা ও অনাবৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। এই উদ্দেশ্যে তিস্তা প্রকল্প হাতে নেয়া হয় যা গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ-প্রকল্পের চারগুন ,চাদপুর সেচ-প্রকল্পের ১২ গুন আর মেঘনা-ধনগোদা সেচ প্রকল্পের ৪০ গুন বড়। কিন্তু ভারতের পানি প্রত্যাহারের ফলে তিস্তা ব্যারেজ এখন অনেকটা অকার্যকর। চলতি মৌসুমে সেচ সংকটের আশংকা দেখা দিয়েছে প্রকটভাবে।
জানাগেছে, তিস্তা নদীর পানি সেচ প্রকল্পে ব্যবহারের প্রথম পরিকল্পনা হয়েছিলো ১৯৪৫ সালে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর দুই দেশের এই প্রকল্প আলাদাভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়। এই অঞ্চলে প্রথম সম্ভবনা যাচাই সমীক্ষা হয় ১৯৬০ সালে। দ্বিতীয় সমীক্ষা প্রতিবেদন ১৯৬৯-৭০ সময়কালে সমাপ্ত হয়। পাকিস্তান আমলে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি পরিকল্পনা স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়। ভারত যে সময় নদীর ১০০ কিলোমিটার উজানে গজলডোবা বাঁধ তৈরী করে। এই বাধই বাংলাদেশের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে। জানাগেছে বর্তমান সরকার গত ক’বছরে বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক আলোচনা সত্বেও এখনও ভারতের সঙ্গে পানি বন্টন চুক্তি সম্ভব হয়নি। তিস্তা ব্যারেজের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুবু রহমান জানান, ভারতের গজল ডোবা বাধে পানি প্রবাহ আটকে দেওয়ায় তিস্তা এখন পানি শুন্য। এসময় পানি প্রবাহ থাকার কথা ২০ হাজার কিউসেকের ওপর। বর্তমানে পানি পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২’শ কিউসেক।


পিএনএস/দোজা/শাহাদাৎ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন