২১তম রাষ্ট্রপতির অপেক্ষায় দেশ

  22-01-2018 11:29AM

পিএনএস ডেস্ক:দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল। সংবিধান অনুযায়ী আজ থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে সর্বত্র আলোচনা চলছে কে হচ্ছেন দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি? বর্তমান রাষ্ট্রপতিসহ পাঁচজনের নাম আলোচনায় রয়েছে। যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট, জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. এসএ মালেক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তবে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে কেন্দ্র করেই বেশি আলোচনা চলছে।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মো. আবদুল হামিদ। সে হিসাবে ২৩ এপ্রিল তার পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সংবিধানের ১২৩ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হইলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী নব্বই হইতে ষাট দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’

ইসি কর্মকর্তারা জানান, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে শিগগিরই স্পিকারের সঙ্গে আলাপ করবে নির্বাচন কমিশন। পরে তফসিল ঘোষণা করা হবে। কারণ নির্বাচন হবে সংসদ অধিবেশন কক্ষে। ভোট দিয়ে দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন সংসদ সদস্যরা।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন ১৯৯১ অনুযায়ী একাধিক প্রার্থী হলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাতে নির্বাচনী কর্তা হিসেবে কাজ করেন।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী, একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে নির্বাচনী কর্তার সামনে নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও নিজের স্বাক্ষর দিয়ে তা জমা দিতে হবে।

ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদ কক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেওয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করবেন নির্বাচনী কর্তা। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিকসংখ্যক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংসদের চলমান ১৯তম অধিবেশন শেষ হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি। এরপর আবার অধিবেশনের মধ্যে এই নির্বাচন করতে হবে। সে অনুসারে স্পিকার ও সংসদ সচিবালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে তারিখ নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করা হবে। এর মধ্যে সংসদ সচিবালয় ভোটার তালিকা প্রস্তুত করে ইসি সচিবালয়কে সরবরাহ করবে।

সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর ১৯৯১ সালে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় একবারই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেন সংসদ সদস্যরা। পরবর্তী সময়ে ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থীই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
এদিকে হিসাব মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশ পাচ্ছে নতুন রাষ্ট্রপতি। দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন, এ নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে।

২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের পর থেকেই অনেকে বলে আসছেন সাধারণ সম্পাদক পদ হারালেও সৈয়দ আশরাফের জন্য পুরস্কার অপেক্ষা করছে। দল পরিচালনায় দক্ষতা ও যোগ্য নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন সৈয়দ আশরাফ। ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজত সহিংসতা সামাল দিতেও কৌশলী ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় রাখেন অনেকটা নিভৃতচারী এ নেতা। এছাড়া দল এবং দলের বাইরে অন্যদের কাছেও এক ধরনের ক্লিন ইমেজ ধরে রাখতে পেরেছেন তিনি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, সৈয়দ আশরাফের এমন অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে দল ও দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা তাকে দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে পছন্দের তালিকায় রাখতেও পারেন।

তবে স্ত্রী মারা যাওয়ার পর নিজেকে রাজনীতি থেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছেন সৈয়দ আশরাফ। তিনি বেশিরভাগ সময়ই দেশের বাইরে থাকছেন। এসব কারণে তার রাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা কমলেও তার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আস্থা বা বিশ্বাস কমেনি এতটুকু।

বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নামও শোনা যাচ্ছে। তার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে অগাধ আস্থা। তিনি রংপুরে প্রধানমন্ত্রীর ছেড়ে দেওয়া আসন থেকে উপনির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে সংরক্ষিত আসনের এমপি ছিলেন। তাকে দুইবার জাতীয় সংসদের স্পিকার বানানো হয়েছে। তিনি হলেন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী স্পিকার। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব পদেই নারীরা দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো নারী রাষ্ট্রপতি হননি। প্রধানমন্ত্রী একজন নারীকে রাষ্ট্রপতি বানিয়ে চমক সৃষ্টি করতে পারেন।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য এবং প্রবীণ রাজনীতিক হিসেবে ডা. এসএ মালেকের নামও শোনা যাচ্ছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল তখন ডা. এসএ মালেক তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যও। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ছিল বিশেষ সম্পর্ক। তিনি দলের একজন ত্যাগী নেতা।

এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নামও শোনা যাাচ্ছে। তার প্রতিও প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে অগাধ আস্থা। বিগত আট বছরের বেশি সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দার্য়িত্ব পালন করেন। তার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়নি। তিনি সব কিছু অত্যন্ত কৌশলে সামাল দিয়েছেন। এ কারণে তাকেও বেছে নেওয়া হতে পারে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে। কারণ তৎকালীন বিএনপি সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে ২০০২ সালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নেয়। আওয়ামী লীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নিয়ে চমকও দেখাতে পারে। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে সরকারপ্রধান বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইঙ্গিতের ওপর। তিনি যার দিকে ইঙ্গিত করবেন তিনিই হবেন ২১তম রাষ্ট্রপতি।

আওয়ামী লীগ এবং সরকারি একাধিক সূত্র বলছে, দলের সংকটে দায়িত্বে থাকা বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে আবার মনোনয়ন দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ভালোভাবেই সামলেছেন তিনি। সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি ইস্যুটিও দক্ষতার সঙ্গে সমাধান করেছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংকটে পতিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পরীক্ষিত আস্থাভাজন এবং সাহসী রাজনীতিবিদ মো. আবদুল হামিদকেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নিতে পারে ক্ষমতাসীন দলটি।

দলের নেতারা বলছেন, রাষ্ট্রপতির মেয়াদে আবদুল হামিদ সব রাজনৈতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন। নৈতিক দৃঢ়তা দিয়ে তিনি এটি অর্জন করেছেন।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন মো. আবদুল হামিদ।

সূত্র: খোলা কাগজ

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন