চীর বিদায় কালজয়ী গানের স্রষ্টা, বাংলার আকাশের সুরের পাখি বুলবুল

  23-01-2019 05:01PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : দেশবরেণ্য গীতিকবি, সুরকার, অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল চীলকালের জন্য না-ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। ২২ জানুয়ারি ভোর চারটার দিকে রাজধানীর আফতাবনগরে নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আধুনিক বাংলা গানের এই প্রবাদ পুরুষ।

এই গুণী শিল্পী ও সুর স্রষ্টার মৃত্যুর খবর মিডিয়া ও লোক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সকাল থেকেই তার বাসায় ভিড় জমান। রাত ২টার দিকে হঠাৎ অসুস্থবোধ করেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। পরিবারের সদস্যরা দ্রুত পার্শ্ববর্তী আয়শা মেমোরিয়াল এ নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে জানান। তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে চিকিৎসকরা জানান।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের লাশ আফতাবনগরের ২৯ নং বাসা, রোড ২-এ নিজ বাসভবনে রাখা হয়। তাঁর ছেলে সামি জানান, কিংবদন্তী এই সংগীত ব্যক্তিত্বকে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে। আজ ২৩ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কালজয়ী এই সুরস্রষ্টার প্রতি শ্রদ্ধা জানান দেশের সর্বস্তরের মানুষ। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজার পর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মরহুমের লাশ দাফন করা হয়। তার মৃত্যুতে শোক জানান রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার।

৬৩ বছরের ক্ষুদ্র জীবনে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের অর্জন অবাক করার মতো। সব জায়গাই তিনি সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। দেশ ও জাতির প্রয়োজনেন তিনি মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নেন। গান লেখেন, গান করেন, সুরও করেন একাধারে। তার লেখা ও সুরা করা অসংখ্য গান বাংলার মানুষকে যেমনি হাসায়, তেমনি কাঁদায়ও। ভাবায় তার চেয়েও অনেক বেশি। তার গানের কথা ও সুর মানুষের মনে অন্যরকম ভালোবাসা ও ভালোগালা তৈরি করে। জাগ্রত করে দেশপ্রেম।

মরহুম আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল গানের জগতে যে আবেদন সৃষ্টি করে গেছেন, সেটা এ দেশের মানুষ সহজে ভুলবে না। তার অমর সৃষ্টি গান ও সুর কালে কালে মানুষকে আকৃষ্ট করবে। তাকে হারিয়ে সংস্কৃতি জগতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজে পূরণ হবার নয় বলে তার সহকর্মীরাই বলাবলি করছেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মরহুমের লাশ নিয়ে গেলে সেখানে কান্নার রোল পড়ে যায়। তার শোকাহত সহকর্মীদের চোখের পানি আর কান্না যেন থামছিলই না।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এই কিংবদন্তীতুল্য শিল্পী ও সুরকার। কালজয়ী শিল্পী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল রাষ্ট্রীয় সর্বো”চ সম্মান একুশে পদক, দুবার জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার এবং রাষ্ট্রপতি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন। তার আবেগঘন ও হৃদয়কাড়া গানের সুর ও কথা যতদিন থাকবে, ততদিন তিনি এ দেশের মানুষের হৃদয়-মননে আছেন এবং থাকবেন নিঃসন্দেহে।

বাংলার সুরের আকাশের দ্রুবতারা এই কালজয়ী গানের পাখিকে হারিয়ে সংস্কৃতি জগতের মানুষের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে কতটা ভালোবাসে, তার ষোলোআনা দেখা গেছে প্রায সর্বত্র। একজন শিল্পীর প্রতি একটা শ্রেণীর বাইরেও সাদারণ মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার যে নজির ও অমোচনীয় দৃষ্টান্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত মানুষ দেখেছেন, একজন মানুষের জীবনে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে। মৃত্যুর পরই তো মানুষের প্রকৃত মূল্যায়ন হয়, যে মূল্যায়নে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল একশতে একশ নম্বর পেয়েছেন।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ বীর মুক্তিযোদ্ধার একটি ক্ষোভ ছিল, সে ক্ষোভের অবসান না হতেই তিনি চলে গেছেন সব ছেড়ে। দায়িত্বশীলরা তার অতৃপ্তির বিষয়টি নিশ্চয় জানেন। সেটির অবসানে তারা অচিরেই উদ্যোগ নেবেন, সে প্রত্যাশা দেশপ্রেমিক জনতা ও তার সহকর্মীদের। জন্ম যে সৃষ্টির লক্ষ্যে, ব্যক্তিজীবনে তার জগতের পরতে পরতে সে সার্থকতার স্বাক্ষর রেখে যেতে সক্ষম হয়েছেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তার ভালো কাজগুলোর স্বীকৃতিস্বরূপ মহান রাব্বুল আলামীন এই দেশপ্রেমিককে কবুল করুন। তাকে জান্নাতবাসী করুন। আমিন।

প্রতিবেদ : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন