রাজধানীর যত্রতত্র ভিক্ষুকের আধিক্য

  19-03-2019 03:51PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান): রাজধানী ঢাকার কূটনীতিক জোনসহ অনেক এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণ করে সাইন বোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কানাডা হাইকমিশনের পশ্চিম পাশে লেকের পূর্ব দিকে লাগানো সাইন বোর্ড ঘেঁষে এক বৃদ্ধকে ভিক্ষা করতে দেখে অবাক হয়েছি। কারণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেও বৃদ্ধ বাধাহীনভাবে ভিক্ষা করছিলেন।

মানবকুলের শিরোমণি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ভিক্ষা করতে নিষেধ করেছেন। তাই আমরা প্রায়ই বলতে শুনি, ‘নবীর শিক্ষা, করো না ভিক্ষা’। অথচ নবীর উম্মত দাবিদাররা কাজের পরিবর্তে ভিক্ষার পথ বেছে নিচ্ছে। কেউ ঠেকায় পড়ে ভিক্ষা করছে বটে, অনেকে এটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে যেন। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ঢাকায় ভিক্ষুকের আধিক্য চোখে পড়ে।

মানবতার নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করে গেছেন। বুখারি শরীফে গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রুজি-রোজগারের জন্য শ্রমের পরিবর্তে ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করে, সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উত্থিত হবে যে, তার চেহারায় এক টুকরো গোশতও থাকবে না। সমাজের অগ্রসর মানুষরা এ ব্যাপারটি ভিক্ষুকদের অবগত করানো জরুরি।

কারা এটা করবেন? আমরা তো দেখি যারা এগুলো বলে সমাজকে মহানবীর শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন, ধর্মীয় জ্ঞানের অধিকারী সে হুজুররা নিজেই সেটা করেন। মসজিদ-মাদ্রাসা-এতিমখানার জন্য কালেকশনের নামে তারা মাইক দিয়ে টাকা উঠান। ফিকিররা তোলেন মাইক ছাড়া দু-চার টাকা আর হুজুররা তোলেন মাইক দিয়ে লাখ লাখ-হাজার হাজার থেকে দু-চার টাকা পর্যন্ত।

এটা না করে এই হুজুররাই যদি সে মাইকে বলতেন, ভিক্ষা করা মহানবী নিষেধ করেছেন। কাজ করে জীবন ধারণের কথা বেলে গেছেন। এক ভিক্ষুক মহানবীর কাছে এলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন তার ঘরে বিক্রি করার মতো এমন কোনো জিনিস আছে? ভিক্ষুক একটি কম্বলের কথা জানালে মহানবী তা বিক্রি করে একটি কুঠার কিনে গাছ কেটে জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করে দেন। এর ফলে ওই লোকটিকে আর ভিক্ষা করতে হয়নি।

ভিক্ষাবৃত্তি নিবারণের এর চেয়ে উত্তম উদাহরণ আর হতে পারে না। আমরা দেখি অনেক সামথ্যবান-কর্মক্ষম ব্যক্তি ভিক্ষা করছেন। মহিলারাও কাজ না করে ভিক্ষা করছেন। যদিও ইসলামে ভিক্ষাবৃত্তির স্থান নেই। ভিক্ষাবৃত্তি একটি নিন্দিত ও ঘৃণিত পেশা। আর আমাদের সমাজে হতদরিদ্র লোকের সংখ্যা কম নয়, সঠিকভাবে জাকাত আদায় করে সুষ্ঠু বণ্টনের মাধ্যমে তাদের সাবলম্বী করা যায় বলে মিনে করেন সমাজ বিজ্ঞানী ও আলেম সমাজ।

সকাল থেকে সন্ধ্যা শুধু নয়, রাতেও ফকিরদের হাত পাততে দেখা যায়। সবাই ব্যবসায়ী নয়, এর মধ্যে একটা অংশ অর্থকষ্টের কারণে হাত পাতছে। পেশাদার ভিক্ষুকদের কারণে যারা তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শিকারে পরিণত। আজকের সামাজিক বাস্তবতা ও বৈষম্যের কারণে সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণী একরকম অসহায় জীবন যাপন করছে। তারা না পারছেন ভিক্ষা করতে, না পারছেন স্বচ্ছভাবে জীবন ধারণ করতে। এক নিদারুণ কষ্টে আছেন তারা।

জাতীয় একটি দৈনিক দেশে ছয় লাখের মতো ভিক্ষুক আছে- এমন তথ্য জানিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি, শেখ হাসিনা যদি আবার ক্ষমতায় আসতে পারেন তাহলে দেশে কোনো ধরনের ভিক্ষাবৃত্তি থাকবে না। দেশে ভিক্ষুক থাকবে না, এটা আমরাও চাই। মহানবীর শিক্ষার বাস্তবায়ন আমাদেরও কাম্য। অথচ প্রায় প্রতিনিয়ত রাজাধানীর যত্রতত্র ভিক্ষুকের পাতা হাত দেখছি আমরা। আর এ হাত পাতার সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। অথচ ভিক্ষুকমুক্ত সমাজ গঠনে সমাজসেবা অধিদপ্তর নাকি কাজ করে যাচ্ছে।

বর্তমানে একটা শ্রেণী খুব ভালো আছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ অর্থনৈতিকভাবে নিরুপায় হয়ে এই পথ বেছে নেয়। যদিও এর সংখ্যা ২০ শতাংশের বেশি হবে না। জীবিকার তাগিদে এককালীন ভিক্ষুক সেজে ঈদ, জাকাতসহ বড় বড় পর্ব উপলক্ষে ভিক্ষা করে। সমাজের এই লোকদের কারণে অনেকে ভিক্ষুক সেজে ব্যবসায় নামার সুযোগ পাচ্ছে। তারা নাকি এটা নানাভাবে নিয়ন্ত্রণও করছে। প্রতিবন্ধী শিশু ও বয়সের ভারে ন্যুব্জদের বেছে নিয়ে রাস্তার মোড়, মসজিদ ও করবস্থানে ঝড়ো করে ভিক্ষাবৃত্তি চালিয়ে যাচ্ছে। এদের নিরুৎসাহকরণে সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের আরো বেশি তৎপর হওয়া সময়ের দাবি।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন