সাগরে ২৭ বাংলাদেশীর মৃত্যু, দালাল চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সময়ের দাবি

  14-05-2019 06:37PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়া উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিহত ২৭ বাংলাদেশীর পরিচয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। সোমবার রেড ক্রিসেন্টের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় জানানো হয়। সংসারে সুদিন ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে দালালদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে এভাবে জীবন দিলেন ২৭ হতভাগ্য।

নিহতরা হলেন : নোয়াখালীর চাটখিলের নাসির, গাজীপুরের টঙ্গীর কামরান, শরীয়তপুরের পারভেজ, কামরুন আহমেদ, মাদারীপুরের সজীব, কিশোরগঞ্জের জালাল উদ্দিন ও আল-আমিন; সিলেটের খোকন, রুবেল, মনির, বেলাল ও মারুফ, জিল্লুর রহমান, লিমন আহমেদ, আবদুল আজিজ, আহমেদ, জিল্লুর, রফিক, রিপন, আয়াত, আমাজল, কাসিম আহমেদ; সুনামগঞ্জের মাহবুব, নাদিম ও মাহবুব এবং মৌলভীবাজারের শামিম ও ফাহাদ।

বেঁচে যাওয়া ১৪ বাংলাদেশী এ তথ্য নিশ্চিত করেন। ৯ মে অভিবাসীবাহী একটি নৌকা লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার উপকূলে অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায়। ওই নৌকার বেশির ভাগ যাত্রী ছিলেন বাংলাদেশী। জীবিকার তাগিদে পরিবারকে আরো সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে যারা দালালদের কথায় বিশ্বাস করে অথৈ সাগরে ডুবে মারা যান।

এসব মৃত্যু প্রমাণ করে নাগরিকদের জীবনপ্রবাহ তথা জীবিকার পথ কতটা কঠিন। যত কথাই আমরা বলি না কেন, বিড়াল যেমন কম পিটায় গাছে উঠে না, তেমনি কম যাতনায় কেউ ঝুঁকিপূর্ণভাবে মাতৃভূমি ছেড়ে যেতে চায় না। যতই লুকোচুরি করা হোক না কেন, কর্মসংস্থানের অভাবে যে তারা এসব পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়, সেটা অস্বীকারের উপায় নেই।

রেডিও-টিভিসহ গণমাধ্যমে প্রায়ই প্রচার করা হয়- দালালদের কথায় বিশ্বাস করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিদেশে না যেতে। এমনকি যাওয়ার আগে কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা, তা যাচাই করে নিতে। কিন্তু
অতি লোভে পড়ে মানুষ সঠিক পথ ভুলে যায়। আর দেয় কঠিন মাসুল। যে মাসুল গুণছে এখন ২৭টি পরিবার সদস্যরা। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের অকালে হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা।

ঝুঁকিপূর্ণভাবে নৌপথে পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকা ডুবে অসংখ্য বাংলাদেশীর প্রাণহানি ঘটে এর আগেও। এমনকি থাইল্যান্ডের জঙ্গলে করুণ পরিণতির শিকার হন অনেক বাংলাদেশী। জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয় অনেকের কঙ্কাল। মুক্তিপণ আদায় করা হয় জিম্মি করে। এসব ঘটনা মিডিয়ায় দীর্ঘদিন প্রচার হয়ে আসছে। এর পরও দালালদের ফাঁদে যারা পা দেয়, তাদের পরিণতি তো দেশবাসী বারবার দেখছে।

এত রকম সতর্কতার পরও ঝুঁকিপূর্ণ নৌপথে এভাবে যারা পাড়ি জমায়, নিজেদের প্রত্যাশা পূরণে আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় তারা চরম পথ বেছে নিতে বাধ্য হয় বৈকি। যারা এভাবে যায় তাদের বেশির ভাগই শিক্ষিত যুবক। লেখাপড়া শেষে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারার বেদনা থেকে ঝুঁকি আছে জেনেও তারা এসব করছে। আর হয় মর্মান্তিক পরিণতির শিকার।

বলা যায়, নিরুপায় হয়ে অনেকটা জেনে-বুঝে তারা এ পথ বেছে নেয় বা নিতে বাধ্য হয়। লেখাপড়া শেষে মা-বাবার সংসারের হাল ধরার দায়িত্ব যাদের ঘাড়ে স্বাভাবিকভাবে চলে আসে, সে দায়িত্ব পালনে তারা যখন সফল হয় না তখন তারা ঝুঁকি নিতে বাধ্য হয় বৈকি। এর মধ্যে ঝোপ বুঝে কোপ মেরে দালালচক্র তাদের সহজে কাবু করে।

সব ঘটনার পেছনে অনেক কারণ থাকে। বিনা কারণে কোনো কিছু ঘটে না। লোভে পড়ে যারা ফাঁদে পা দিয়েছে, তাদের যারা অসত্য তথ্য দিয়ে উদ্ধুদ্ধ করে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে- এ জন্য তারা ৯৯ শতাংশ দায়ী। এ দায়ীদের চিহ্নিত করা সহজ বৈকি। জীবিত ১৪ বাংলাদেশী এবং মৃতদের পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিয় দালাল চক্রকে চিনে ও জানে।

৯ মে ভূমধ্যসাগরে ৩৭ বাংলাদেশের নিহত এবং ১৪ জনের উদ্ধারের ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যারপরনাই ম্লান হয়েছে বৈকি। ফলে এ জন্য যারা দায়ী, তাদের খুঁটি যত গভীর ও শক্ত হোক না কেন, চক্রটিকে সমূলে উপড়ে ফেলা দেশ ও জাতির বৃহৎ স্বার্থে অতীব জরুরি। দালাল চক্রকে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে যে, তা দেখে ভবিষ্যতে আর কেউ যেন এ পথে পা বাড়ানোর সাহস না পায়।


প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন