সর্বস্তরের লুটেরাদের অভিযানের আওতায় আনা সময়ের দাবি

  13-10-2019 06:40PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : কত আশা ছিল এ দেশটাকে আমরা গড়ে তুলব সবাই মিলে। একটি সুন্দর বাংলাদেশ কার না প্রত্যাশা। সবার জন্য বাসযোগ্য ও মানবিক দেশ যে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চাওয়া।সব ক্ষেত্রে দুর্নীতিমুক্ত হোক, এটাই দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের সবার কামনা। সবার জন্য সমান সুযোগ ও বৈষম্যহীন সমাজে একটি ন্যায়, সাম্য ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন দেশ ছিল মুক্তযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ। যে জন্য এখনো আমরা প্রাণপণ লড়ছি।

একসময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে আমাদের দেশটি তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে। আমাদের অগ্রগতি অনেকের জন্য পীড়ার কারণ বৈকি। আমরা আরো এগিয়ে যেতে পারতাম, যদি মহলবিশেষের বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের কাছের মানুষদের লুটপাট সামাল দেওয়া যেত। কমবেশি সবসময়ের ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে জনগণের স্পদ লুটের মচ্চব চলে আসছে, যা কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে বড় বাধার প্রাচীর হয়ে আছে।

দীর্ঘ সময়জুড়ে দেশের সম্পদ নিয়ে হরিলুট চলছে বললে কমই বলা হবে। সংঘবদ্ধ একটি চক্র এ কাজটা করে পার পেয়ে এখন বেপরোয়া।যেখানেই অর্থ আছে, সেখানে শকুনের শ্যাণ দৃষ্টি পড়ছে।ক্ষমতার দাফটে সেখানে আধিপত্য বিস্তার করে কাজ ভাগিয়ে নিচ্ছে। নিয়মশৃঙ্খলার বালাই যাদের নেই। প্রয়োজনে কি-পয়েন্টে শত শত কোটি টাকা ঢেলে এসব করছে সিন্ডিকেট বা ব্যক্তিবিশেষ, মহলবিশেষ। ইতিমধ্যে এর কিছুটা জাতি সামনে উন্মুচিত হয়েছে।

দুর্নীতি ও অনিয়ম কতটা সীমা ছাড়িয়ে টিআইবির রিপোর্ট এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বর্তমান সরকারেরি সুহৃদ সুলতানা কামালের বক্তব্য এর অন্যতম প্রমাণ।‘দুর্নীতিতে আমরা উন্নয়ন করেছি’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যেটার কিছু কিছু নমুনা এখন বের হয়ে আসছে। শুধু ক্যাসিনোকেন্দ্রিক শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্তু অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। ক্ষমতা দেখিয়ে মানুষের ওপরে অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে, ব্যাংক লুট করা হচ্ছে; শেয়ারবাজারে কেলেঙ্কারি হচ্ছে।’

৮ অক্টোবর বুধবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ : বাস্তবায়ন, বিদ্যমান পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে প্রতিবন্ধী নারীদের জাতীয় পরিষদ।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমরা যে মুখে বলি একটা সমতার দেশ তৈরি করেছি, উন্নয়নের এক্কেবারে মহাসড়কে চলে গেছি, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে গেছে, সবকিছু হয়ে গেছে। কিন্তু এই উন্নয়নের সঙ্গে আমরা কী মানবিকতাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি? উন্নয়নের সঙ্গে সভ্যতার তাল মিলিয়ে চলতে পেরেছি?’

মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, ‘উন্নয়ন বলতে আমরা কী বুঝতে পারছি? উন্নয়ন বলতে রাস্তাঘাট, সেতু-ইমারত, বড় প্রকল্প যেখানে বালিশ কিনতে লাগে ১৪ হাজার টাকা, বালিশ তুলতে লাগবে আরও ৪ হাজার টাকা। তাহলে আমরা প্রচণ্ড উন্নয়ন করেছি দুর্নীতিতে। যেটার কিছু কিছু নমুনা এখন বের হয়ে আসছে। শুধু ক্যাসিনোকেন্দ্রিক শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্তু অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। ক্ষমতা দেখিয়ে মানুষের ওপরে অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে, ব্যাংক লুট করা হচ্ছে, শেয়ারবাজারে কেলেঙ্কারি হচ্ছে। এগুলো নিয়ে কিন্তু আমরা মাথাব্যথা করি না।’

আজকে ব্রিটিশরা নেই, নেই বর্বর পাকিস্তানিরা; নেই সারিক স্বৈরাচার- স্বাধীনতার এত বছর পরও স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের পরিবেশ যে এখনো নিশ্চিত হয়নি, বুয়েটের আবরার হত্যাকাণ্ড সে সাক্ষই দিচ্ছে। মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল যে বক্তব্য ও মন্তব্য সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেছেন, সময়ের বিচারে তিনি সচেতন জনগোষ্ঠীর হৃদয়ের কথার প্রতিধ্বনি করেছেন মাত্র।

এ দেশ নিয়ে অনেকের অনেক স্বপ্ন ছিল। ছিল আশা। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য তাঁরা যারপরনাই সচেষ্ট ছিলেন।কেউ চেয়েছিলেন সোনার বাংলা, কেউ চেয়েছিলেন স্বনির্ভর বাংলাদেশ, কেউ চেয়েছিলেন নতুন বাংলাদেশ।যে চাওয়ায় কোনা খাদ ছিল না। কিন্তু সময়ে সময়ে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ণ সে পথে বাধা হয়েছে দাঁড়িয়েছে। আজকে যা ব্যাধি হিসেবে রূপ নিয়েছে। এ সর্বনাশা কাল ব্যাধী দূর করতে চলমান অভিযান ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটসহ সর্বস্তরে পরিচালনা সময়ের দাবি।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন