মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-রুট খনন : সুন্দরবনকে বাঁচানোর শুভ উদ্যোগ

  10-03-2015 04:18PM

পিএনএস : বিশ্বের সর্ব বৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনকে বাঁচাতে দেশের পরিবেশবাদী ব্যক্তি ও সংগঠন, বাংলাদেশ সরকার, আর্ন্তজাতিক বিভিন্ন সংগঠন এমনকি জাতিসংঘের তৎপরতা থেমে নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, আমরা নিজেদের ভুলেই মাঝে মাঝে নিজেদের সর্বনাশ করে ফেলি। এ যেন ‘নিজের পায়ে কুড়াল মারা’।

বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক সংরক্ষিত নৌ-পথগুলোর মধ্যে মংলা-ঘাষিয়াখালী চ্যানেল দেশের একটি অন্যতম নৌ-পথ যা মংলা সমুদ্র বন্দর এবং খুলনা ও নোয়াপাড়া নদী বন্দরের সাথে দেশের অন্যান্য এলাকার নৌ যোগাযোগ রক্ষা করছে এবং দেশের আমদানী-রপ্তানী পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া এই নৌ-পথ ভারত বাংলাদেশের নৌ-বাণিজ্য প্রটোকলভূক্ত নৌ-পথের একটি প্রধান অংশ। বর্তমানে এই নৌ-পথটি মৃতপ্রায়।

কিন্ত গত দেড় দশক ধরে এই নৌ-পথের নাব্যতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ায় নৌযান চলাচল করতে পারছে না। ফলে প্রায় ৮৭ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিয়ে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌ-চলাচল করতে হয়। এতে একদিকে যেমন অতিরিক্ত জ্বালানী ও সময় অপচয় হয় অপরদিকে তেমনি অতি মূল্যবান জীববৈচিত্র ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হচ্ছে; যা কোনভাবেই কাম্য নয়। উক্ত চ্যানেলের দৈর্ঘ্য ৩১ কিলোমিটার। এই চ্যানেল খনন ও নৌ চলাচলের উপযোগী রাখা বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।



অপরদিকে, মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-পথটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এই নৌ-পথের নাব্যতা দীর্ঘমেয়াদে বজায় রাখতে বিশেষজ্ঞগনের মতামত আহরণের লক্ষ্যে বিআইডব্লিউটিএ ও সিইজিআইএস-এর উদ্যোগে গত ২২.০১.২০১১ইং তারিখে এলজিইডি’র সম্মেলন কক্ষে এক জাতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সিইজিআইএস ও আইডব্লিউএম-এর বিশেষজ্ঞবৃন্দ এতে অংশ নেন। তখন সিইজিআইএস নিম্নরুপ পরামর্শ প্রদান করে :

“বিষ্ণু ও দাউদখালী নদীর জোয়ার-ভাটা প্লাবনভূমিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণের ফলে জোয়ারের পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় এবং উজান থেকে আসা মিঠাপানির সরবরাহ হ্রাসের জন্য পানির লবনাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ অঞ্চলের নদীগুলো ক্রমান্বয়ে মরতে বসেছে। এর পরিণতিতে শুধু যে নৌ-চলাচলই বিঘ্নিত হবে তা নয়, পানি নিস্কাশনেও মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য নদী খননের পাশাপাশি অন্যান্য প্রশমনমূলক ব্যবস্থা যেমন জোয়ার-অববাহিকা (টাইডাল-বেসিন) সৃষ্টি করাও আবশ্যক”।

আন্তর্জাতিক নৌ-রুট মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি মনুষ্য সৃষ্ট ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়েছে। ইতিপূর্বে এই চ্যানেল দিয়ে দেশ-বিদেশের ভারী নৌ-জাহাজ, ষ্টিমার, কার্গো, রকেটসহ বড় বড় নৌযান চলাচল করতো। এই চ্যানেলের মংলা-কুমারখালী নদীর ২২ কি.মি. নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় বর্তমানে পায়ে হেটে এলাকার জনগণ নদী পার হচ্ছে। অথচ এটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি নৌ-পথ। মংলা বন্দরে যাতায়াতকারী নৌযানের দূরত্ব কমানোর লক্ষ্যে ঘষিয়াখালী ও বেতবুনিয়া খালটি ১৯৬৯-১৯৭০ খ্রি: পর্যন্ত বিআইডব্লিউটিএ-এর অধীনে খনন করা হয়। ১৯৭৪ সালে তৎকালীন নৌ-মন্ত্রী জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী (অবঃ) চ্যানেলটি উদ্বোধন করেন।



মংলা-ঘষিয়াখালী নৌরুটটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও উজানে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় এবং স্বার্থান্বেষী মহল চ্যানেলের সাথে সরাসরি ৩২টি খালসহ আরো কিছু সংখ্যক খালে অবৈধ ভাবে বাঁধ দিয়ে চিংড়ী চাষ করার ফলে অতি দ্রুত নাব্যতা হারিয়ে ফেলে। স্থানীয় প্রভাবশালী সংসদ সদস্য আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক একাধিকবার এ বিষয়ে চেষ্টা চালালেও স্বার্থান্বেষী মহল রহস্যজনক কারণে খালের উপর অবৈধ বাঁধ অপসারণ করেনি।

পলি জমে ভরাট হওয়ার কারণে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল ২০১০ সালে নৌ-চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। তখন থেকেই সুন্দরবনের শ্যালা নদীকে বিকল্প নৌ-রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল যা ছিল একেবারেই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। কারণ, সুন্দরবনের শ্যালা নদী দিয়ে নৌ-চলাচলের কারণে সুন্দরবনের পাশেই ডলফিনের অভয়ারণ্যসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর জীবন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছিল।

সুন্দরবনে বর্তমানে ৪০০ প্রজাতির মাছ, প্রায় ৩০০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণীর আবাসস্থল। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের আওতাধীন দাংমারি, দুধমুখি, চাঁদপাই এর নদী ও জলজ প্রাণী বিশেষ করে বিরল প্রজাতির গাঙ্গেয় ডলফিন ও ইরাবতি ডলফিনসহ সুন্দরবনের জীব-বৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। অপরদিকে, নৌ যানের উদ্ভট শব্দ দুষণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছিল সুন্দরবনের স্থলভাগের জীব বৈচিত্র্য।



সর্বোপরি, জলযান থেকে নির্গত তেল নিঃসরণের কারণে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছিল। কিন্তু ৯ ডিসেম্বর ২০১৪ইং তারিখে এই শ্যালা নদীতে ঘটে যায় এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সাড়ে ৩ লাখ লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে একটি নৌ-যান অপর একটি নৌ-যানের সাথে ধাক্কা খেয়ে ফেটে যায়। নদীতে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী ফার্নেস অয়েল। এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে সচেতন মানুষ এবং পরিবেশবাদী সংগঠন। সরকারও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান অহর্নিশি পরিশ্রম করে সুন্দরবনকে বাঁচানোর তড়িৎ সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।

প্রধানমন্ত্রী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী, পানিসম্পদ মন্ত্রী, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী সর্বোপরি বিআইডব্লিউটিএ-এর সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সিরিজ বৈঠকের পর দুর্ঘটনার মাত্র ৬ দিনের মাথায় ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ইং তারিখে মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-পথ পুণরায় চালু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-রুট চালু করতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ-এর নেতৃত্বে নৌ-রুট খনন শুরু হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ-এর পাশাপাশি দেশের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা ড্রেজিং লিমিটেড এর এসএস রহমান ড্রেজিং লিমিটেডসহ বিভিন্ন ড্রেজিং কোম্পানী ড্রেজিং কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীও যন্ত্রপাতি ও কারিগরী সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে যেখানে প্রয়োজন সেখানে এসকাভেটার দিয়েও খনন কাজ চালানো হচ্ছে।



ইতিমধ্যেই মংলার বগুড়া খাল এবং কুমার নদীর অনেকটা অংশ খনন করা হয়েছে এবং বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে সেখানে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশে খনন সম্পন্ন হলে মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-রুট বর্ধিত কলেবরে চালু হবে যা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে। তবে পাশাপাশি মনে রাখতে হবে যে, মানুষের হার্টের সমস্যা হলে ওপেন হার্ট সার্জারী কিংবা বাইপাস সার্জারী করে মানুষকে সুস্থ করে তোলা হয়। কিন্তু ওপেন হার্টের রোগীকে নিয়মিত শৃংখলাপূর্ণ জীবন-যাপন করতেই হয় এবং মাঝে মাঝেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতেই হয়।

মনে রাখতে হবে, ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকৃতির বুকে ওপেন হার্ট সার্জারী মাত্র। এরকম সার্জারীর পর নিয়মিত মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং করতেই হবে, মানতে হবে কিছু শৃংখলা- তা না হলে পলি এসে আবার নৌ-রুট বন্ধ হয়ে যাবে- আবার প্রয়োজন হবে বড় ধরণের শ্রম, মেধা। হবে অর্থের অপচয়- আমরা সেই রকম দুঃস্বপ্ন দেখতে চাই না- আমরা সুখ-স্বপ্নে বিভোর থাকতে চাই- আমরা চাই মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল আবহমান কাল ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রবাহিত হবে যা মংলা বন্দরের ধমনী হিসেবে কাজ করবে।

তবে এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-পথটি বিগত ২০০৯-১০ এবং ২০১০-১১ অর্থ বছরে রামপাল এলাকায় যথাক্রমে ১.২১ লাখ ঘন মিটার ও ১.১৫ লাখ ঘন মিটার খনন করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তা ভরাট হয়ে যাওয়ায় তৎকালীন সময়ে আলোচ্য চ্যানেলের খনন কাজ বন্ধ করা হয়। সুতরাং বর্তমানে যে খনন কাজ চালানো হচ্ছে তার সুফল পেতে হলে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিংও চালাতে হবে। মংলা-ঘষিয়াখালী এলাকার লোকায়ত জ্ঞানের অধিকারী মানুষজন মনে করেন, ক্যাপিটাল ড্রেজিং সম্পন্ন হওয়ার পর কমপক্ষে দুটি ড্রেজারকে অব্যাহতভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং চালিয়ে যেতে হবে। আর এটা করা হলে নৌ-চ্যানেলটির ধারাবাহিক নাব্যতা বজায় থাকবে।

যে সমস্ত কারণে নাব্যতা হারায় মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল

বহুবিধ কারণে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল এখন মৃত্যু পথযাত্রী। এগুলোর মধ্যে কোনটি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত আবার অনেকগুলো মনুষ্য সৃষ্ট সমস্যা। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, মনুষ্য সৃষ্ট সমস্যার পরিমাণই বেশী। নিম্নে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের নাব্যতা হারানোর কয়েকটি কারণ উপস্থাপিত হলোঃ



(১) দ্বিমুখী স্রোতের সমস্যা : আন্তর্জাতিক মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি পরিকল্পিত ভাবে খনন এবং পুন:খনন প্রয়োজন। বর্তমানে রুটটি যে অবস্থায় আছে সেভাবে খনন করলে আবার ভরাট হয়ে যেতে পারে। প্রায় ৭ কিলোমিটার বাক থাকায় জোয়ারভাটার সময় দ্বিমুখী পানির টানে সবসময় পানি স্থবির থাকে। যে কারণে পানির প্রবাহ একেবারেই ক্ষীণ হয়ে পড়ায় জোয়ারে আসা পলি এই নদীতে জমা হয়ে দ্রুত ভরাট হয়। চ্যানেলটি সচল করতে হলে এই দ্বিমুখী স্রোতের সমস্যা সমাধান করতে হবে। অর্থাৎ মান্দারতলা খালের গোড়া থেকে সিংগারবুনিয়া জিগির মোল্যা পযর্ন্ত সোজাসুজি ১.৮ কিলোমিটার ডাঙ্গার জমি খনন করতে হবে।

(২) পাউবো’র ফয়লা হাটের স্লুইস গেট : আন্তর্জাতিক নৌ-রুট মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের প্রধানতম সংযোগকারী পানি প্রবাহের উৎস দাউদখালী নদীর মুখে অবৈজ্ঞানিক ও অপরিকল্পিত উপায়ে জৌ-খালী সাব প্রজেক্টে ও রামপালের ফয়লাহাট নামক স্থানে স্লুইস গেট নির্মান করায় এবং এখানকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা স্লুইস গেট বন্ধ করে মৎস চাষ করায় কোন স্রোত না থাকায় ক্রমান্বয়ে জোয়ারের পলি মাটি পড়ে দাউদখালী নদী সম্পূর্ণ নাব্যতা হারায়। পাশাপাশি এই চ্যানেলের প্রধান দুটি সংযোগ নদী দাউদখালী ও বিসনা নদী পুন:খনন, বিলীন অংশ পুনরুদ্ধার এবং সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সহ নদী দুটি সংলগ্ন সকল সরকারী খালের উপর নির্মিত শত শত অবৈধ বাঁধ অপসারণ করে এসকল নদীর স্রোতধারা ঘষিয়াখালী চ্যানেলের সাথে মিশিয়ে দিলে নদীর প্রবাহ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

(৩) চ্যানেল সংলগ্ন খালে জোয়ারের প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা : মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটির দৈর্ঘ্য ২২ কিলোমিটার। এই নৌ-পথের অধিকাংশ বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত। রামপাল ইউনিয়নের ওড়াবুনিয়া খাল, রামপাল খাল, কাকড়াবুনিয়া খাল, নলবুনিয়া খাল, মোল্যা আলী খাল, ফকির আলী খাল, জোড়া খাল, ন্যালার খাল, বেতকাটা খাল, বয়ার খাল, তেতুলিয়া খাল, বাশবাড়িয়া খাল, জোড়পুকুরিয়া খাল, বাইনতলা ইউনিয়নের গিলাতলা খাল, একব্বার খাল, চাকশ্রী খাল, বাশতলী ইউনিয়নের মুচিখালী খাল, মুন্সির খাল, গোলবুনিয়া খাল, কাটা খাল, বরুইতলা খাল, চেরাই খাল, ঘাটার খাল, শ্যাওড়ার খাল, বাশতলী খাল, গড়ামারী খাল, ভোজপাতিয়া ইউনিয়নের পুটিমারী খাল, উপজেলার দোয়ানিয়ার খাল, বর্ণী খাল, মরুলিয়া খাল, পুকুরিয়া খাল, বেলাই খাল, কাটাখালী খাল, চদরা খাল, নলবুনিয়া খাল, ভেকটমারী খাল, গাজী খাল, মুছা আলী খাল, হুগলাবুনিয়া খাল, পুটিমারী খাল, হেতালমারী খাল, বড়বাইজুরা খাল, ছোট বাইজুরা খাল, টঙ্গি খাল, মধাব মৃধার খাল, মাদারতলা খাল, পুটিমারী খালসহ ১৪০টি খালের মুখ খুলে দিয়ে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করতে হবে।

(৪) নদীর উপর অবকাঠামো নির্মাণ : একটি বেসরকারী সংস্থা ঝনঝনিয়া বাজার সংলগ্ন দাউদখালী নদীর ভিতর একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্টরা উক্ত নদীর ভিতর ৮.২৩ একর জমি স্থায়ী লীজ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক নৌ-রুট মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলটি উদ্ধারের জন্য বর্তমান সরকার যখন সর্বাত্বক চেষ্টা করছে ঠিক তখনই এক শ্রেণীর সুবিধাবাদীদের সহযোগিতায় ক্যান্সার কেয়ার প্রকল্পের নামে এই নৌ-রুট এর প্রধানতম পানি প্রবাহের উৎস দাউদখালী নদী স্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়েছে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে এবং আন্তর্জাতিক নৌ-রুটের হারানো প্রাণ তথা নাব্যতা ফিরে পাওয়ার জন্য দাউদখালী নদীর উপর এনজিওটির প্রকল্প বাতিল করা প্রয়োজন। প্রভাবশালীমহল কিছু সংখ্যক আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলেছেন। এগুলো নিয়েও চিন্তা-ভাবনার অবকাশ আছে।



(৫) চিংড়ী ঘেরের কারণে জোয়ারের প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা : মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-রুট সংলগ্ন চিংড়ী ঘেরগুলোর কারণেও চ্যানেলটি নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে। জোয়ারের সময় চিংড়ী ঘেরে যে পানি উঠছে সেই পানি ভাটার সময় আর নামতে দিচ্ছে না ঘের মালিকরা। এ কারণে ভাটার সময় স্রোতে দুর্বল হয়ে পড়ায় পলি অপসারণ হচ্ছে না। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আনা হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী আগামী কয়েক বছরের জন্য চিংড়ী ঘেরগুলো বন্ধ রাখা কিংবা চাষ পদ্ধতি পরিবর্তন করার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। স্থানীয় প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর এই সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে তা মংলা-ঘষিয়াখালী নৌ-রুটের পুনরুজ্জীবনে সহায়তা করবে।

(৬) কয়েকটি নদীর পুনঃখনন : মংলা-ঘষিয়াখালীর ধারাবাহিক নাব্যতা বজায় রাখতে হলে মৃতপ্রায় কতোগুলো নদী অতি তাড়াতাড়ি পুনঃ খনন করতে হবে। এই নদীগুলো হলো : দাউদখালী, বিসনা, মৈদাড়া, ভেকটমারী, ভোলা, তেতুলিয়া, বেরাই, পুটিমারী, বেতবুনিয়া, আঠারোবেকি, মধুমতি এবং সবাকি নদীসহ আরো কিছু নদী, শাখা নদী ও মরা খাল।

(৭) আঠারোবেকি-মধুমতি নৌ-রুট : আঠারোবেকি-মধুমতি নৌ-রুট শত বছরের পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী চ্যানেল। মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল খননের পাশাপাশি এই ঐতিহ্যবাহী চ্যানেলটিও খনন করতে হবে। ইতিমধ্যেই খুলনার তেরখাদা উপজেলার গোয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শেখপুরা গ্রামের শেষ সীমানা পর্যন্ত জায়গায় আঠারোবেকি নদীর উপর শত শত ঘর-বাড়ী তৈরী করা হয়েছে। দুই-তিন বছর অপেক্ষা করলে হয়তো আঠারোবেকি নদীই হারিয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে এই আঠারোবেকি মধুমতি চ্যানেলটি নিয়েও ভাবতে হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, যখন মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল ছিল না তখন আঠারোবেকি-মধুমতি চ্যানেলই ছিল এই অঞ্চলের প্রধানতম নৌ-রুট।

(৮) অব্যাহত রক্ষণাবেক্ষণ খনন : মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশ-প্রতিবেশগত অবদান অনেক বেশী। সুতরাং এই চ্যানেলের নাব্যতা রক্ষায় সর্বাত্মক অবদান রাখতে হবে। এই চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিং সম্পন্ন হলে পরবর্তীতে কমপক্ষে দুইটি বড় মাপের ও উন্নত মানের ড্রেজার সেখানে রক্ষণাবেক্ষণ খননের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে। রক্ষণাবেক্ষণ খনন বন্ধ করলে মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলও নাব্যতা হারাতে পারে।



চ্যানেলের নাব্যতা রক্ষায় যা করতে হবে :-

(১) দ্বিমুখী জোয়ারের স্রোতের সমাধান করতে হবে।

(২) টাইডাল মিটিং পয়েন্টসহ চ্যানেল সংলগ্ন এলাকায় জোয়ার আধার সৃষ্টি করতে হবে।

(৩) পাউবো’র ফয়লা হাটের স্লুইস গেট অবমুক্ত করতে হবে।

(৪) চ্যানেল সংলগ্ন ৩২টি খালসহ ১৪০টি খালের মুখ খুলে দিয়ে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করতে হবে।

(৫) চ্যানেল সংলগ্ন চিংড়ী ঘেরগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ কিংবা চাষ পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে।

(৬) চ্যানেল সংলগ্ন দাউদখালী নদী, বিসনা নদীসহ মৃত নদীগুলো খনন করে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি করতে হবে।

(৭) শত বছরের পুরাতন আঠারোবেকি-মধুমতি চ্যানেল পূণঃ খনন করতে হবে।

(৮) ক্যাপিটাল ড্রেজিং সম্পন্ন হলে অব্যাহতভাবে মেইনটেইন্যান্স ড্রেজিং চালিয়ে যেতে হবে।


পিএনএস/সামির/শাহাদাৎ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন